ঢাকা, বুধবার   ২০ আগস্ট ২০২৫

অপমানে অরিত্রীদের এভাবেই চলে যেতে হয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:১০, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

অরিত্রী অধিকারী। তিনি আর এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই। পিতার অপমানে আত্মহত্যা করে মারা গেছেন তিনি। তিনি ছিলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকারী মেধাবী শিক্ষার্থী। গত রোবার  চলছিল তার বার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষা চলাকালে এক শিক্ষক অরিত্রীর কাছে একটি মোবাইল ফোন পান। মোবাইলে নকল করেছে, এমন অভিযোগে অরিত্রীর বিরুদ্ধে। এ কারণে পরের দিন মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে আসতে বলা হয়। শিক্ষকের কথা মতো মা-বাবাকে নিয়ে আসেন। তার সামনেই ভাইস প্রিন্সিপাল তার  পিতা-মাতাকে  অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। মেয়ের টিসি (স্কুল থেকে দেয়া ছাড়পত্র) নিয়ে যেতে বলেন। পরে প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে বাসায় গিয়ে  তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।   

এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ  করে। এর তীব্রতা দেখে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি এই বিচার করার আশ্বাস দেন। এরপর আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস,  শাখা প্রধান জিনাত আখতার ও শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বরখাস্ত করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডি।

এদের মধ্যে শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে ডিবি পুলিশ আটক করে আদালতে হাজির করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন। গতকাল শুক্রবারও শিক্ষার্থীরাই আবার তার মুক্তি চেয়ে আন্দোল করছে। শিক্ষার্থীদের সে গানের মধ্যে রয়েছে ‘অরিত্রী আমার বোন, হাসনা হেনা আমার মা’, ‘যাদের হাতে মানুষ গড়া তাদের কেন হাতকড়া?’, ‘আমরা কি শিক্ষকের হাতে হাতকড়া পরিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচিত করছি না?’, ‘শিক্ষকের অপমান মানি না, মানব না’, ‘বিচার চাই, অবিচার না’, ‘বিচার চাইতে গিয়ে এ কোন অবিচার’ ইত্যাদি। তার মুক্তির দাবিতে আগামী  রোববার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বরাবর স্মারকলিপি  দিবে শিক্ষার্থীরা।

আমাদের দেশে কেউ মারা না গেলে কিছুই হয় না। অরিত্রী যদি মারা না যেত, তাহলে হয়তো ভিকারুননিসা স্কুলের অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত আসতো না। এই প্রতিষ্ঠানের মতো আরো অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেই জানে না। তারা  কর্মচারীদের সঙ্গে যা তা ব্যবহার করে। অপমানতো মামুলি ব্যাপার। মা-বাপ তুলেও গালি দেয়। আমার দেখা একটি প্রতিষ্ঠানে, সামান্য ভুলের জন্য প্রতিষ্ঠানের এক কর্মীকে ‘হারাম খোরের বাচ্চা’ বলে গালি দিতে দ্বিধা করেনি। পারলে শরীরে আঘাত করে। তারপরও ওই কর্মী খুশি। কেননা তার ভাগ্য ভালো তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। এমন অনেক ঘটনা অহরহ ঘটছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। অভিযোগ দিলে উল্টো ওই প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীরাই মালিকের পক্ষ নিয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলে।

বেশির ভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মানা হয় না বেতন কাঠামো। বছরের পর বছর যায়। পদোন্নতি হয় না। বেতনও বাড়ে না। অথচ আইন রয়েছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এজিএম হওয়ার পর যা লাভ হবে তার ২% সমভাবে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। এসব আইন শুধু আজ কাগজে-কলমেই। অফিসে বেতন বাড়ানো কথা বললে অপমান অপদস্ত। বাসায় পরিবারের অভাব অনটন। একদিন সংসার চালাতে না পেরে রাগ ক্ষোভ আর অপমানে অরিত্রীর মতো গলায় ফাঁস দিয়ে মারা যান।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী জেনারল, সেভ দ্য সোসাইটি এন্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম। 

এসি
 
 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি