‘জব্বারদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষা’
প্রকাশিত : ১৭:১৪, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
![](https://www.ekushey-tv.com/media/imgAll/2018January/SHAHEED-DIBOSH-Inner20180210051457.jpg)
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় বাংলা ভাষার দাবিতে আন্দোলনরত মিছিলকারীদের ওপর গুলি করেন তৎকালীন পুলিশ। জানা যায়, গুলিতে নিহত হন বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে ছিলেন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের যুবক আবদুল জব্বারও। ধরে নেওয়া হয় তাদের সেই দিনের রক্তের বিনিময়ে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই সময় ভাষাশহীদ জব্বারের বাড়িতে ছিল বিধবা মা, স্ত্রী ও দেড় বছরের শিশুপুত্র নুরুল ইসলাম বাদল।
জানা যায়, ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাচুয়া গ্রামের হাসান আলী শেখের ছেলে জব্বার। জব্বারের পিতা ছিলেন কৃষক। হাসান আলী শেখের ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বড় আবদুল জব্বার।
আবদুল জব্বার পড়াশোনা তেমন করেননি। স্থানীয় বাজারে তার একটি মুদির দোকান ছিল। পাশাপাশি তিনি আনসারে চাকরি করতেন।
কিশোর বয়সে জব্বার বাবার সঙ্গে রাগারাগি করে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে কোন এক জাহাজে করে চলে গিয়েছিলেন জার্মান। তখন ইংরেজদের সান্নিধ্যে থাকতে গিয়ে মোটামুটি ইংরেজি বলতে শিখেছিলেন। পরে অবশ্য বাড়ি ফিরে আসেন।
তিনি গফরগাঁওয়ের বিখ্যাত মাওলানা শামছুল হুদা পাঁচবাগীর নেতৃত্বে জড়িয়ে পড়েন এমারত পার্টিতে। মাওলানা শামছুল হুদা ছিলেন প্রগতিশীল ও স্বাধীনচেতা মানুষ। যিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিরোধীতা করে আসছিলেন। তার সঙ্গেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আবদুল জব্বার ঢাকায় এসেছিলেন শ্বাশুরির চিকিৎসার জন্য। শ্বাশুরিকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করান। ঢাকা মেডিকেলে তখন শিক্ষানবিস চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তার বাল্যবন্ধু ডা. সিরাজুল ইসলাম।
ডা. সিরাজুল ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী জানা যায়, ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে যখন মিছিল বের হয় তখন আবদুল জব্বার মেডিকেলের বারান্দায় ছিলেন। তিনিও যোগ দেন মিছিলে।
ভাষা শহীদ রফিক (একই মিছিলে গুলিতে নিহত) এর সন্তান খোরশেদ আলম ও ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের সন্তান নুরুল ইসলাম বাদলের ভাষ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেডিকেলের সামনে (এখন যেখানে শহীদ মিনার) সেখানে গুলি চালায় পুলিশ। প্রথম দফার একটি গুলি লাগে রফিকের মাথায়। রফিক পড়ে যান। রাস্তায় ছিটকে পড়ে মগজ, রক্ত। ঠিক তখন বা তার আগে পরে আরেকটি গুলি এসে লাগে জব্বারের হাঁটুতে। শুধু হাঁটুর গুলি হলে হয়তো তিনি বেঁচে যেতেন। কিন্তু পরের গুলিটি ডান কোমর দিয়ে ঢুকে পেছনের কোমর দিয়ে বের হয়। সেখানেই শেষ।
ডা. সিরাজ পরে জব্বারের পরিবার ও স্বজনদের কাছে যে ভাষ্য দিয়েছিলেন, সেই ভাষ্য অনুযায়ী জানা যায় আবদুল জব্বারকে যখন মেডিকেলে নেওয়া হচ্ছিল তখন কোমরের দিক থেকে এমনভাবে রক্ত ঝরছিল যেন কেউ ওপর থেকে বালতি ভর্তি রক্ত ঢেলে দিচ্ছে।
রাত আটটায় আবদুল জব্বার মারা যান। ২২ ফেব্রুয়ারি আবদুল জব্বারের গ্রামে খবর পৌঁছায় টেলিগ্রামের মাধ্যমে। তার ভাই আবদুল কাদের ছুটে এসেছিলেন ঢাকায়। কিন্তু আবদুল কাদেরের পক্ষে সম্ভব হয়নি তার কাছে পৌঁছানো পরিস্থিতির কারণে। ওই দিনই আজিমপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
এসএইচ/