ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সুমন সাহার সফলতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪৭, ৫ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ১৪:২৪, ৬ আগস্ট ২০২০

ফ্রিল্যান্সার সুমন সাহা

ফ্রিল্যান্সার সুমন সাহা

ফ্রিল্যান্সার পরিমন্ডলে তিনি বেশ সফল। দীর্ঘ দশ বছর পরিশ্রমের পর সফলতা এসে ধরা দিয়েছে তার হাতের মুঠোয়। তবুও নির্ভার নন তিনি। স্বপ্ন দেখেন দেশে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তৈরীতে অবদান রাখার। বলছিলাম ফ্রিল্যান্সার সুমন সাহার কথা। যার এখন মাসিক আয় প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা। এক মিষ্টির দোকানি সন্তান যিনি এক সময় কম্পিউটার কেনার কথা ভাবতেই পারতেন না তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে আজ কাজ করছেন তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে। দেশের অনেক তরুণই তার মতো দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। নিজেকে সফলতম এক জায়গায় দেখতে চান। ফ্রিল্যান্সিং বাংলাদেশ তথা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এর মাধ্যমে কাজ খুঁজে পাচ্ছে দক্ষরা। 

নরসিংদীর এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সুমন সাহা। ২০১০ সালে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য অ্যাকাউন্ট খুললেও ২০১২ সালে কাজ শুরু করে সব ছেড়েছুড়ে ফ্রিল্যান্সিং’র দিকে ধাবিত হন ২০১৬ সালে। ২০০২ সালে চরসিন্দুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৪ সালে নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে স্নাতক (ব্যাচেলর অব সায়েন্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশুনা শেষ করে নিজে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ভাবনা থেকেই আউটসোর্সিংয়ে আসেন সুমন। 

২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়নকালের শেষের দিকে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরি মেলা থেকে একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হয়ে কাজ করার জন্য সুযোগ পান তিনি। মূলত তিনি তখন ঐ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউটসোর্সিং সম্পর্কে জানতে পারেন। 

তিনি বলেন, ‘নিজে নিজেই ওডেস্কে (বর্তমানে আপওয়ার্ক) অ্যাকাউন্ট খুলি। কিছু বুঝি না, ইন্টারনেট ঘেঁটে ঘেঁটে শিখতে লাগলাম। বিড করা শুরু করলাম। কিন্তু কোনো কাজ পাইনি। একটু হতাশ হয়ে গেলাম।’ হতাশ হলেও তিনি তার অবস্থান থেকে সরে আসেননি। 

তিনি বলেন, ‘কাজ শিখতে স্থানীয় বাজারে কাজ শুরু করলাম। যেখানে শিক্ষানবিশ করতাম, সেখানে চাকরিও হয়ে গেল। ২০১২ সালে আবার মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করি। ৫ ডলারের একটি সফটওয়্যার টেস্টিংয়ের কাজও পেলাম।’ ঐ কাজ ভালোভাবে করার পর তিনি আরও কাজ পান। তিনি জানান, ২০১৩ সালের শুরুতে আইপ্যাড অ্যাপ্লিকেশন টেস্টিং কাজের জন্য সারা বিশ্ব থেকে ৫২ জনের মধ্যে ২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে বাংলাদেশ থেকে সুযোগ পান সুমন। বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশের সঙ্গে মানুষের সঙ্গে তিনি এখন কাজ করছেন। 

ফ্রিল্যান্সি এ সুমন মূলত দুই ধরনের কাজ করেন। ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট এবং এর কারিগরি সেবা। আউটসোর্সিং (মার্কেটপ্লেস) আপওয়ার্কে কাজ করছেন সফটওয়্যারের মান নিয়ন্ত্রণ, কারিগরি সেবা এবং মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। বর্তমানে তিনি একটি কোম্পানির সফটওয়্যার রিলিজ ম্যানেজার পদে স্থায়ীভাবে কর্মরত আছেন। অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন এবং সেখান প্রতিটি ভার্সনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে সেটা ক্লায়েন্টের কাছে পাঠান তিনি। তাছাড়াও তার আরও কয়েকটি খণ্ডকালীন ক্লায়েন্ট রয়েছেন এবং নানোসফটবিডি একটি স্টার্ট আপ রয়েছেন।

করোনা মহামারীর কারণে ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্ষেত্রে ঝুঁকে পড়ছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংস্থাগুলো ভার্চুয়াল ওয়ার্কপ্লেসে অভ‌্যস্ত হয়ে যাওয়ায় ও বাড়িতে বসে কাজের সুযোগ দেওয়ায় ফ্রিল‌্যান্স চাকরির চাহিদা বেড়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির পরে খরচ কমাতে অনেক প্রতিষ্ঠান স্থায়ী কর্মীকে সরিয়ে ফ্রিল‌্যান্স কর্মীর দিকে ঝুঁকবে। 
ইকোনোমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রিল্যান্স এবং প্রকল্প ভিত্তিক কাজের গিগ প্ল্যাটফর্ম ফ্লেক্সিং ইট জানিয়েছে গত এপ্রিল মাসে ফ্রিল‌্যান্স পদে চাকরির জন‌্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। এইচআর টেকনোলজি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পিপলস্ট্রং পূর্বাভাস দিয়েছে, ইন্টারনেট ব‌্যবসা প্রতিষ্ঠান, আইটি, আইটিইএস, স্টার্টআপ, হসপিটালিটি ও কুইক সার্ভিস রেস্টুরেন্ট, রিটেইল, লজিস্টিকের মতো বিভিন্ন খাতে ২৫-৩০ ভাগ কর্মী ফ্রিল‌্যান্স পদে রূপান্তরিত হবে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে নানা রকম কাজ রয়েছে। প্রথমেই জানা জরুরি যে ভাসা-ভাসা ধারণা বা দক্ষতা নিয়ে আপওয়ার্ক বা যেকোনো মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ পাওয়ার চিন্তা করলে হতাশ হতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিংয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে একশ্রেণির কাজের সঙ্গে আরেক শ্রেণির কাজের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। তাই সময়ের বিষয়টি কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে। কিছু কাজ অল্প সময়ে করা যেতে পারে; আবার দীর্ঘমেয়াদি কাজের সুযোগও রয়েছে।

সুমন জানান, সোশ্যাল মিডিয়া রিলেটেড কাজ, ই-কমার্স, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি কাজের চাহিদা বেড়েছে অনেক। তবে এতে দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। 

তিনি বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো আপনাকে দক্ষ হতে হবে। বিভিন্ন চাকরিতে হয়ত কিছুটা দক্ষ না হলেও চলে যাবে কিন্তু এ ক্ষেত্রে দক্ষ না হলেও এ পেশায় কোনভাবেই টিকবেন না।’ দক্ষতার সঙ্গে এ কাজের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। 

সুমন বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং এমন একটা ক্ষেত্র, এখানে আপনাকে ধৈর্য নিয়ে লেগে থাকতে হবে এবং আপনার শেখার ও জানার আগ্রহ থাকতে হবে। আমাদের দেশে যারা একবারে নতুন ফ্রিল্যান্সার, আমি মনে করি তাদের ধৈর্য অনেক কম। এই আউটসোর্সিং ক্ষেত্রে আপনাকে ক্লায়েন্টের কাজ সময়ানুযায়ী শেষ করতে হবে। তবেই সাফল্য ধরা দেবে।’

নতুনদের অনেকেই শুরুতে অনেক ভুল-ত্রুটি করে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্লায়েন্টের মনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বাজে ধারণাও তৈরি হয় যা আমাদের ফ্রিল্যান্সিং জগতে কিছুটা হলেও এর প্রভাব পরে। এ ত্রুটি যেন তারা কাটিয়ে উঠতে পারে এ জন্য চেষ্টা করছি।’

সুমনের কাজ নিয়ে বইও প্রকাশ হয়েছে। বলা যায় তাকে নিয়েই রচিত হয়েছে উপন্যাস। একটি জাতীয় দৈনিকের তথ্য প্রযুক্তি সাংবাদিক রাহিতুল ইসলাম উপন্যাসটি লিখেছেন। নাম ‘ফ্রিল্যান্সার সুমনের দিনরাত।’ ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইটি স্বপ্ন ৭১ প্রকাশন প্রকাশ করে। তাকে নিয়ে কেউ বই লিখছেন সেটা জীবনে বড় পাওয়া বলে উল্লেখ করেন সুমন। এটাকে তিনি চমকপ্রদ বলেও অভিহিত করেন। উপন্যাসটিতে সুমনের হৃদয়ছোঁয়া কষ্টের কথা উঠে আসে। বাংলাদেশে আরও দক্ষ তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তৈরিতে নিজেকে নিয়োজিত করবেন সুমন এটাই তার লক্ষ্য। তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ না হলে দক্ষতার পরিচয় দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। 

এমএস/এমবি


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি