ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

অন্যরকম ভালোবাসার সন্ধানে চিলড্রেনস হার্ট

প্রকাশিত : ১৮:১৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৮:৪৪, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

`ভালোবাসা`র সংঙ্গাটাই আজ সীমিত হয়ে পড়েছে। সবাই ভাবছে ভালবাসা মানে শুধুমাত্র দুজন তরুণ তরুণীর অলিখিত সম্পর্ক। কিন্তু এরকম হওয়ার কি কথা ছিলো? ভালোবাসা হওয়া উচিত সর্বজনীন। সেখানে জাত-পাত, ধনী-দরিদ্র, কালো-সাদার ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবার মাঝে সবার মাঝে সেই ভালবাসাই ছড়িয়ে দিতে চাই। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে এ কথাগুলো বলছিলেন নাঈম। ঢাকা কলেজে পড়েন এ তরুণ।

নাঈমের অনুভূতির সঙ্গে একমত আল্পনা, প্রান্ত, মনিরা, জয়, ছড়া, মায়াবী, মাহীর, রোজা, রোজ, শিফাত, ওকেয়া, জাহিদ, রাব্বী, তানজীমা, আফরোজা। তারা সবাই শিক্ষার্থী। কেউ ইডেন কলেজে, কেউ ঢাকা কলেজে, কেউ জগন্নাথে আবার কেউ জাহাঙ্গীরনগরে পড়েন। অনলাইন ভিত্তিক সংগঠন চিলড্রেনস হার্টের সদস্য তারা।

সংগঠনটি কাজ করছে ঢাকার পথশিশুদের নিয়ে। আজ থেকে দু’বছর আগে বিভিন্ন কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এসব তরুণ তরুণীরা এ সংগঠন গড়ে তোলে। পড়াশুনার পাশাপাশি সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ থেকেই তারা ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলে।

গ্রুপের অন্যতম সদস্য আল্পনা জানান, সবাই  শুধু সমাজ পরিবর্তনের কথা মুখে মুখে বলে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম মুখে না বলে কিছু কাজ করে দেখি। যখন প্রস্তাবটি বিভিন্ন বন্ধুদের দিলাম সবাই উৎসাহ নিয়ে রাজি হলো।

গ্রুপের অপর সদস্য প্রান্ত জানান, কোনো আনুষ্ঠানিক পদ-পদবী বা কমিটি নেই তাদের। এখানে সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে কাজের সুবিধার্থে ফেসবুক গ্রুপে সাত জন এ্যাডমিন হিসেবে কাজ করেন। এখন পর্যন্ত তাদের সদস্য সংখ্যা দেড় হাজারের কিছু বেশি।

আজ বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষ্যে চিলড্রেন হার্ট উদ্যোগ নেয় পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণের। সেই লক্ষ্যে শহীদ মিনার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা পার্কে তিন শতাধিক শিশুর মাঝে খাবার বিতরণ করে তারা। খাবার নিতে আসা শিশুদের সঙ্গে তাদের দেখা গেল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ বা এসব ইভেন্টের টাকা কোথা থেকে আসে-জানতে চাইলে সংগঠনটির অন্যতম সদস্য ছড়া বলেন, আমরা নিজেদের হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে সংগঠনের এসব কার‌্যক্রমের খরচ বহন করি। কেউ টিউশন করি, কেউ বাসা থেকে সামান্য হাত খরচের টাকা পাই। এটাই মূলত সংগঠনের খরচ চালানোর উৎস।

রমনা পার্কে চিলড্রেনস হার্টের যেসব সদস্য খাবার বিতরণ করছিল সেখানে খাবার নিতে আসা পথশিশু আকাশ জানায়, সে বেশিরভাগ সময় রমনা পার্ক ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। সে আরও জানায়, চিলড্রেনস হার্ট গ্রুপের ভাইয়া-আপুরা বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে এখানে এসে খাবার ও বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করে।

চিলড্রেনস হার্টের বিভিন্ন সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে শতাধিক পথশিশুর মাঝে তারা শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে। বিজয় দিবসে, নববর্ষ, ঈদ ও পূজায় ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে খাবার বিতরন করে তারা। চিলড্রেনস হার্টকে ভবিষ্যতে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান-এমন প্রশ্নে প্রান্ত ও আল্পনার উত্তর, ‘আমরা পড়ালেখা শেষ করে নিজ নিজ ক্যারিয়ারে যাব। কারণ পরিবার ও রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। তবে তার আগে সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করার যে নেশা তা চিলড্রেনস হার্টের মাধ্যমে তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই।’ তারা আরও বলেন, মানুষের সঙ্গে কাজ করার মধ্যে জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়।

রোজা, ওকেয়া, রোজ, আফরোজা ও মাহীর এক সুরে বলে উঠেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের হাতে কিছু তুলে দেওয়ার পর তাদের মুখে যে হাসি ফুটে উঠে সেটি পৃথিবীর অন্য অনেক পার্থিব জিনিসের সঙ্গে অতুলনীয়। মনিরা ও জাহিদ বলেন, কেউ কেউ আমাদের কাজ নিয়ে হাসাহাসি করে। বলে আমরা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছি। কিন্তু আমরা বনেই সুখ খুঁজে নিয়েছি। রাব্বী, তানজীমা ও মায়াবী বলেন, আমরা অনেকে লোক দেখানো ভালবাসা নিয়ে মাতামাতি করি। কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মুখের হাসিতেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভালোবাসা।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি