ঢাকা, শনিবার   ১৪ জুন ২০২৫

আজকের অবস্থা আ’লীগের ভুলেরই শাস্তি : সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩৫, ১৩ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৩৮, ১৩ জুন ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বিগত ১৬ বছর রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগের অনেক ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ জুন) একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব তথ্য জানান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক ডা. আনম নওশাদ খান। 

প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনাসহ দলটির শীর্ষ নেতারা প্রায় সবাই হয় পলাতক, নয়তো জেলে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার চলছে। বর্তমানে দেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। নির্বাচন কমিশন নিবন্ধনও স্থগিত করেছে। 

নওশাদ জানান, সাবেক এই রাষ্ট্রপতি তার কাছের মানুষদের কাছে প্রতিনিয়ত বলেন, গত ১৬ বছরে, আমাদের (আওয়ামী লীগ) অনেক ভুল ছিল। তা না হলে এমনটা কেন হলো? ভুল ছিল বলেই আজকের এই পরিণতি। আজকের অবস্থা হয়তো আমাদের (আওয়ামী লীগ) ভুলেরই শাস্তি। এছাড়া আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা দেখে মন খারাপও হয় বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ এই স্বজন। 

নওশাদ আরও জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আক্ষেপ করে বলেন, ২০১২ সালে যখন স্পিকার ছিলাম তখনই বলেছি, ‘সরকার স্বৈরাচারী হলে জনগণ বেশিদিন সায় দেবে না।’ 

বর্তমানে কার্যত নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগকে আগামী দিনে রাজনীতি করতে হলে তাদের অতীতের ভুল শোধরাতে হবে বলেও মনে করেন দলটির শাসনামলে টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদ বলেও জানান ড. নওশাদ।

ডা. আনম নওশাদ খান জানান, ৫ আগস্টের পর ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের। তার নিজের বা শেখ হাসিনা-কোনো পক্ষ থেকেও কোনো ধরনের যোগাযোগের চেষ্টাও করা হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ও কথাবার্তা হয় না। তবে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন দেশ ও রাজনীতি সম্পর্কে। নিয়মিত পড়েন খবরের কাগজ। সুযোগ পেলে খবর দেখেন টেলিভিশনেও।

নওষাদ সাক্ষাতকারে ওই দৈনিক পত্রিকাকে জানান, আওয়ামী লীগের ভুল রাজনীতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ও কথা বলার চেষ্টা করতেন আবদুল হামিদ। যেসব বিষয় তার পছন্দ হতো না সেসব বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও মাঝে মধ্যে বলতেন। তিনি (আব্দুল হামিদ) প্রায়ই বলেন, আমিই একমাত্র অনেক কথা বলতাম। এজন্য অনেকে আমাকে পছন্দও করত না। 

সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের শ্যালক নওশাদ খান বলেন, আবদুল হামিদের বর্তমান শারীরিক অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। একা চলাফেরা করতে পারেন না। তাকে ধরে ধরে বাথরুমে নিতে হয়। তিনি নামাজও পড়তে পারেন না। উনি (আব্দুল হামিদ) বলেন, ‘নামাজ-কালাম তো পড়ি নাই। আল্লাহই জানেন কী হয়।’ তবে আমি বলেছি, আপনি তো অনেক মানুষের উপকার করেছেন, কারও ক্ষতি করেননি। আল্লাহ নিশ্চয় মাফ করবেন।

জানা গেছে, আবদুল হামিদের ল্যাং ক্যানসার ‘থ্রি টু ফোর স্টেজ’-এর মাঝামাঝিতে রয়েছে। যেটাকে লাস্ট স্টেজ বলা হয়। যা কিছুটা ছড়িয়েও গেছে। তিনি শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল। ওজন অনেক কমে গেছে। নিজে নিজে চলাফেরাও করতে পারেন না। অন্যের সাপোর্ট নিয়ে চলাফেরা করেন। 

ডা. আনম নওশাদ খান বলেন, ডাক্তার তিন মাস অপেক্ষা করতে বলেছেন। এরপর আবার তাকে যেতে হবে। তার বিদেশ যাত্রা নিয়ে দেশে নানা ধরনের আলোচনা চললেও তিনি নিজে দেশে ফেরার বিষয়ে অনড় ছিলেন।

নওশাদ খান জানান, অনেকেই তাকে বলেছেন, আপনি দেশে ফিরবেন না। কিন্তু তিনি বলেছেন, না, আমি দেশে ফিরবই। যা হওয়ার হবে। দেশে ফিরে দেশের মাটিতেই না হয় মারা গেলাম। দেশেই তো আমার আত্মীয়স্বজন সবাই আছে।

তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রায়ই বলেন, দেশে আসার পর তিনি মানসিকভাবে খুব ভালো আছেন।

এর আগে গত ৭ মে রাতে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যাওয়ার সময় তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন। প্রায় এক মাস পর রোববার গভীর রাতে (রাত ১টা ২৫ মিনিটে) থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৯৯ ফ্লাইটে তারা ফিরেছেনও একই সঙ্গে। ৮২ বছর বয়সি অসুস্থ ভগ্নীপতিকে কাছে থেকে দেখাশোনা করছেন নওশাদ খান। 

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জের হাওড় এলাকায় জন্ম সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের। ছাত্রজীবন থেকেই জড়িত ছিলেন রাজনীতিতে। ছিলেন সাতবারের এমপি। ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকার। এরপর রাষ্ট্রপতি হিসাবে টানা ১০ বছর ৪১ দিন কাটিয়েছেন রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনে। কিন্তু হাওড়ের মাটি-মানুষ তাকে সব সময়ই টানত। রাষ্ট্রপতি হিসাবে বঙ্গভবনের চার দেওয়ালের ভেতর অবস্থানের সময়কে বন্দিজীবন হিসাবে অভিহিত করেছেন। সময় পেলেই ছুটে যেতেন হাওড়ে।

শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও এখনো এলাকার খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করেন আবদুল হামিদ। 

নওশাদ খান জানান, হাওড়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা তিনি সব সময়ই বলেন। কিন্তু তার শরীরের যে অবস্থা তাতে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে তিনি সুযোগ পেলেই এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেন। তাদের বিষয়ে জানতে চান।

সূত্র: যুগান্তর

এসএস//
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি