ঢাকা, সোমবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৫

ইলেকট্রিক শক দেয়া হতো খালেদের টর্চার সেলে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৩২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

ইয়াংম্যান্স ক্লাব ক্যাসিনোর মালিক যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। কমলাপুরে তার নিজের অফিসে একটি টর্চার সেলও ছিলো তার। 

টর্চার সেল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ইলেকট্রিক শক দেয়ার সরঞ্জাম। শুধু খালেদই নয় এসব ক্যাসিনোর সাথে জড়িত বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। 

র‌্যাব জানায়, বুধবার রাত ১২ টার দিকে কমলাপুর রেল স্টেশনের উল্টো দিকে ইস্টার্ন কমলাপুর টাওয়ারে টর্চার সেলে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সেখানে হকিস্টিক, বিভিন্ন দড়ি, চেয়ার, দেশীয় অস্ত্রও পাওয়া যায়। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

ওই ভবনের সিকিউটির দায়িত্বে থাকা আব্দুল লতিফ জানান, টর্চার সেলে কাউকে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না। তিনি থাকতেন ভবনের নিচ তলায়। র‌্যাব ভবন থেকে একটি ইলেকট্রিক শক দেওয়ার মেশিন জব্দ করে বলে জানান তিনি। 

অভিযোগ আছে, ১৪ তলায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে যুবলীগের এই নেতার নামে। কমলাপুর বা আশপাশের এলাকার কেউ যদি তার চাহিদা মতো    চাঁদা না দিতো, তাহলে লোকজন দিয়ে ধরে আনতেন। করতেন নিযার্তন। এখানে মাঝেমধ্যে জলসাও করতেন।

ফকিরাপুলে ইয়ংম্যান্স ক্লাবের সভাপতি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াই বসান ক্যাসিনো। সকাল আটটা থেকে চব্বিশ ঘন্টায় তিন শিফটে বসতো জুয়ার আসর। যাতায়াত সমাজের প্রভাবশালীদের। র‌্যাবের অভিযানেই বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। 

ঢাকায় ক্যাসিনো বসানো খালেদ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। কমলাপুরের এই টর্চার সেলে চলতো গোপন কাজ কারবার। তার কথা মতো কাজ না করলেই ধরে নিয়ে এসে নির্যাতন করতেন তার লোকজন। 

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাজধানীতে ক্যাসিনোর তালিকা হচ্ছে। যারাই জড়িত থাক ধরা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ সব সময় কঠোর অবস্থানে থাকবে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করে র্যাব। আটকের পর তাকে র‍্যাব-৩ এর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
গ্রেফতারের সময় খালেদের বাসা থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা, লকার থেকে ১০০০, ৫০০ ও ৫০ টাকার বেশ কয়েকটি বান্ডিল উদ্ধার করা হয়। সেগুলো গণনার পর ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া ডলারেরও বান্ডিল পাওয়া যায়। টাকায় তা ৫-৬ লাখ টাকা হবে বলে জানায় র‍্যাব। এছাড়া তার কাছ থেকে মোট ৩টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। যার একটি লাইসেন্সবিহীন, অপর দুটি লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ করে রাখা হয়েছিল।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে মতিঝিলের ক্যাসিনো পরিচালনার বিষয়টি মতিঝিল থানা পুলিশ, মতিঝিল জোন, পুলিশ সদর দফতর ও ডিএমপি সদর দফতরের কর্মকর্তারা জানতেন বলে দাবি করেন খালেদ। তবে পুলিশের সঙ্গে ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য কোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি তিনি।

রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনো মালিক যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের হয়েছে।
অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশান থানায় ৩টি ও বিকালে মতিঝিল থানায় মাদক আইনে আরও একটি মামলা করা হয়।

এর মধ্যে র‌্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে গুলশান থানায় অস্ত্র, মাদক ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তিনটি মামলা দায়ের করেন। আর মতিঝিলি থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন র‌্যাবের ওয়ারেন্ট অফিসার চাইলা প্রু মার্মা।

র‍্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, আটক খালেদকে র‍্যাব-৩ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়।

তিনি বলেন, ক্যাসিনো ও মাদক ব্যবসা নিয়ে আটক খালেদকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে।

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি