ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ এক অন্যরকম ঢাকা

কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

প্রকাশিত : ২২:২৩, ২৭ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ২২:৩৭, ২৭ মার্চ ২০২০

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাই এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে। দেশ লকডাউন। জরুরি পরিস্থিতি বিরাজ করছে সাড়া দুনিয়াজুড়ে। এমন পরিস্থিতিতে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমাকে যেতে হচ্ছে কর্মস্থলে। ঝুঁকি আছে জেনেও এই মানবিক সংকটকালীন মুহূর্তে দেশ ও জাতিকে সংবাদ প্রবাহ সচল রাখতে সাড়া দিতে হচ্ছে আমাদের। চিকিৎসক, সাংবাদিক আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায় অন্যদের থেকে বেশি। পেশার তাগিদে দুপুরে বাসা থেকে অফিস যেতে চোখে পড়ে অন্যরকম ঢাকাকে। 

চারদিকে সুনসান নীরবতা। এমন পরিস্থিতি দেখতে একেবারেই অভ্যস্ত ছিলাম না। এখন স্বাস্থ্য সুরক্ষাই যেন মানুষের প্রধান কাজ।  চারদিকে সবুজ সতেজ পরিবেশ। বসন্তে গজিয়ে উঠা কচি পাতাগুলো সবুজ শ্যামল হয়ে উঠেছে। শহরে নেই কোন কোলাহল আর শব্দদূষণ। রৌদ্রোজ্জ্বল নীলাকাশ এক ধরনের প্রশান্তির বার্তা ছড়াচ্ছে। যেন বহুকাল ধরে দূষণের জঞ্জাল বহন করেই সে ক্লান্ত। অপরদিকে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অবিশ্বাস আর আতঙ্ক। খালি মুখে কাউকে তেমন একটা দেখাই যায় না। মুখে মাস্ক আর হাতে গ্লাভস। স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনায় রেখে ধনী-গরীবের মুখে নিরাপত্তা বলয়।  শহরজুড়েই একটা ভূতুড়ে পরিবেশ। সন্ধ্যা নামলেই যেন এক আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়। শহরের ল্যাম্পপোষ্ট ছাড়া আর কিছুই চোখে পরে না। যেনো সব কোলাহলের রেকর্ড ভেঙে দিয়ে এ শহর ঘুমিয়ে গেছে। সত্যি এ এক অন্যরকম ঢাকা। চেনাই যায় না কোটি মানুষের শহর ঢাকাকে।

শত বছরের ইতিহাসে এমন সুনসান নীরবতার ঘটনা এটাই প্রথম। যেখানে পৃথিবীর রাজধানী নিউ ইয়র্কে থেমে গেছে সমস্ত কোলাহল। যেখানে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে রোম, উহান, লন্ডন, স্পেনসহ প্রায় দুই শতাধিক দেশ ও হাজারও শহরে। এ পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৮৬৪ জন মানুষের মধ্যে। করোনায় প্রাণ হারিয়েছে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এখনও ক্রমাগত রয়েছে। প্রতি মুহূর্তেই মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে প্রহর গুনছে হাজারও মানুষ। সেবা দিতে যেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে চিকিৎসকের মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যুর মিছিল এই ভাইরাসের উৎপত্তি স্থল চায়নার উহানে হলেও এটি এখন পৃথিবীজুড়েই অবস্থান করছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে।   

স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনের আওতায় এসেছেন চার হাজার ৭৫ জন। এ নিয়ে বর্তমানে সারাদেশে প্রবাসীসহ ৪৭ হাজার ১৮১ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। যাদের মধ্যে নির্দিষ্ট ১৪ দিনের মেয়াদ পূর্ণ করায় সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৬ হাজার ৫৭৪ জন। গত এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে আনা হয়েছে। গেল এক সপ্তাহে হোম কোয়ারেন্টাইনের আওতায় এসেছে ৩০ হাজার ১৬৭ জন। অথচ এক সপ্তাহ আগে (২০ মার্চ) হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা লোকের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪ হাজার ২৬৪ জন। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) পর্যন্ত এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ১৮১ জনে। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সামাজিকভাবে এই রোগটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষকে নিজ নিজ ঘরে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আর তাই গেল ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়ক হিসেবে মাঠে নামানো হয়েছে। পাশাপাশি রোগটি ছড়িয়ে পড়লে চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য আইসিইউ সুবিধাসহ হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। কিন্তু কমছে না আতঙ্ক। শুক্রবার (২৭ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত ৪৪ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১ জন। 

করোনাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর কর্মমুখর সব শহরগুলোতে থেমে গেছে উৎপাদনের চাকা। জানি না এমন নীরবতা আর কতদিন অব্যাহত থাকবে। কবেই বা কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে প্রাণের শহর ঢাকা। যতদিনই থাকুক না কেন আর নয় দেশে দেশে প্রাণহানি। এ বসন্তে পৃথিবী আর শোকাবহ জল সইতে পারছে না। স্বজন হারানো মানুষের আর্তনাদ আর সহ্য করতে পারছে না। আমরা বিশ্বাস করি, অচিরেই পৃথিবী জুড়ে সকল ধর্ম-বর্ণ মানুষের অভিন্ন শত্রু করোনাকে প্রতিহত করেই মানবতা জয়ী হবে। জয়ী হবে সাহসী মানুষ। আদিকাল থেকে পৃথিবীর সংকটে যেকোনো দুর্যোগ কাটিয়ে সফল হয়েছে মানুষ। রোগ কাটিয়ে পৃথিবী জয়ের অব্যাহত কর্ম প্রয়াসে মুখরিত করবে চারপাশ। 

আমরা আশা করি, খুব দ্রুত আকাশে উড়ে যাবে প্লেন এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে। সীমানা পেরিয়ে নির্ভয়ে আকাশে উড়ে যাবে পাখি। শিশুদের কোলাহলে ভরে উঠবে বিদ্যাপীঠগুলো। মানুষের দৈনন্দিন কোলাহলে মুখরিত হবে তিলোত্তমা ঢাকা। থমকে যাওয়া জনপদগুলো ভরে উঠুক প্রাণ-প্রাচুর্যে। এই সংকটে আসুন আমরা মানবতার পাশে দাঁড়ায়। সাধারণ মানুষের খাদ্য দিয়ে, অর্থ দিয়ে তাদের পাশে থাকি। বিপদকালীন মুহূর্তে এটাই হোক আমাদের প্রধান ব্রত। তাহলেই কেবল বেঁচে যাবে দুর্বল মানুষ আর জয়ী হবে মুমূর্ষু মানবতা। আমাদের পরিচয় হোক আমরা মানুষ।    

লেখক-সাংবাদিক 

এসি


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি