ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ: বৃটিশ কলম্বিয়ার অভিজ্ঞতা

সেরীন ফেরদৌস

প্রকাশিত : ১২:০৩, ৮ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ২১:০৪, ৮ এপ্রিল ২০২০

সেরীন ফেরদৌস

সেরীন ফেরদৌস

পৃথিবীর বেশিরভাগই যখন কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির হার থামাতে তুমুল চেষ্টা করছে, তখন কানাডার বৃটিশ কলাম্বিয়া সংক্রমণ বৃদ্ধির হার অর্ধেক কমিয়ে ফেলেছে! ২৪% থেকে তা ১২ শতাংশে নামিয়ে এনে সেটা গত ১ সপ্তাহ যাবত ধরে রাখতে পেরেছে। কিভাবে তা সম্ভব হলো যখন কানাডারই অন্য দুটি প্রভিন্স- অন্টারিও ও কুইবেক আজ অবধি হিমশিম খাচ্ছে!

কানাডার সিবিসি টেলিভিশন বৃটিশ কলম্বিয়ার এই সাফল্যের পরযালোচনা করতে গিয়ে বলেছে, প্রস্তুতি, পরীক্ষা ও দক্ষ নেতৃত্ব-ই এর কারণ!

পূর্ব-অভিজ্ঞতা ও লব্ধ জ্ঞানের আলোকে ব্রিটিশ কলম্বিয়া পৃথিবীব্যাপী মহামারির শুরুতেই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে! সেখানকার স্বাস্থ্যবিভাগ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসেই করোনা-ভাইরাস সম্পর্কে অবহিত হয় এবং এর গতিবিধি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিজেদের কর্তব্য ঠিক করে নেয়! এঁরা দেখেছে যে, ব্যক্তিগত দূরত্ব বজায় রাখামাত্র ভাইরাসের বিস্তার কমে যায় ও রোগের বিস্তার নিষ্ক্রিয় হয়ে পরে! শিক্ষাটি দ্রুত কাজে লাগাতে প্রভিন্সের সবাই একযোগে নেমে পরে!

আক্রান্তরাও প্রথম থেকে এমনভাবে জীবনযাপন করতে শুরু করে যাতে, একজন থেকে ভাইরাস অন্য অনেকের ভেতরে ছড়িয়ে যেতে না পারে! অথচ অন্যান্য জায়গায় দেখা গেছে, অসচেতন ভাইরাসবহনকারী কখনো কখনো একাই বহু লোকের ভেতর জীবাণুটির সংক্রমণ ঘটিয়েছে! ফলে ভাইরাসের সর্বগ্রাসী বিস্তার পরবর্তীতে আয়ত্বে আনা কঠিন হয় পড়েছে! সর্বোপরি, এই প্রভিন্সের সুগঠিত স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোয় প্রচুর ল্যাবরেটি রয়েছে যেখানে একযোগে অনেক করোনা টেস্ট করা গেছে।

বৃটিশ কলম্বিয়ার স্বাস্থ্যবিভাগর শীর্ষে থাকা একজন দক্ষ, দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্ব হচ্ছেন প্রধান মেডিকেল অফিসার ডাঃ বনি হেনরী। তিনি সময়মতো সাহসী নাবিক হয়ে, এমনকি রাজনৈতিক নেতাদেরও পেছনে ফেলে সমস্যাটির হাল ধরতে পেরেছিলেন! বিশ্বের বহু বাঘা বাঘা শহরকে পেছনে ফেলে তিনি বহু আগেই আপডেটেড হয়েছেন, সতর্ক হয়েছেন ভাইরাসটির ব্যাপারে! এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্বে স্বল্পতম সময়ে স্বাস্থ্যসেবায় একটি সু-সমন্বিত যোগাযোগ কাঠামো গড়ে তুলেছেন । সাথে প্রচুর পরীক্ষা আর ব্যক্তি-দূরত্ব বজায় রাখতে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। প্রত্যেকটি নাগরিকের কাছে সমান, সুষম ও অবাধ তথ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করে সবাইকে একসুরে বেঁধে ফেলতে সচেষ্ট হয়েছেন!

তিনি অবশ্য বদান্যতা করে বলেন, “এই সাফল্যের পিছে রয়েছে কিছুটা ভাগ্য আর আমাদের প্রস্তুতি!” যদিও ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর এপিডেমিওলজিস্ট ড. ডেভিড ফিশম্যান ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, বৃটিশ কলম্বিয়ার জনস্বাস্থ্যসেবা খাতে কার্যকর নেতৃত্ব ও একক কাঠামোভিত্তিক সেবা-সুবিধা আছে, যেটা বহু-বর্ণ-অধ্যুষিত অন্য দুটি প্রভিন্সে গড়ে ওঠেনি।

আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, ছাত্রছাত্রীদের মার্চ-ব্রেক এর সময়টাকে কৌশল করে পিছিয়ে দেয়া! সাধারণত এই সময়ে স্কুল-কলেজ সব একসাথে ছুটি থাকে। তখন প্রচুর নাগরিক কানাডার বাইরে ছুটি কাটাতে যায়! বৃটিশ কলাম্বিয়া করোনার বিস্তার আঁচ করে, বুদ্ধি করে স্কুল-কলেজগুলোর মার্চ ব্রেক পিছিয়ে দেয়! ফলে, ছুটিতে অনেকেরই দেশের বাইরে যাওয়া পিছিয়ে পরে। এবং পরবর্তীতে ছুটি পেলেও কোভিড-১৯ সতর্কতার অংশ হিসেবে বেশিরভাগ মানুষ নিয়ম মেনে ঘরে বসে থাকে। যেখানে অন্য প্রভিন্স দুটি এই কৌশলটি অগ্রীম ভাবতে পারেনি। ফলে হাজার হাজার কানাডিয়ান দেশের বাইরে চলে যায় ও পরে জীবাণু বহন করে ফিরে আসে!

বলার অপেক্ষা রাখেনা, বৃটিশ কলম্বিয়ার প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. হেনরী একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক এবং দক্ষ নেতা। তিনি শুরুতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যে-করেই হোক কমিউনিটিতে রোগটি ছড়ানো বন্ধ করতে হবে। তাই তিনি কোনো স্বাস্থ্যকর্মীকে একসাথে একাধিক সংস্থায় কাজ করতে বারণ করেছেন।

ডা. হেনরী নিজে প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সত্য লুকান নি! তিনি নিজের কাজের প্রতি আন্তরিক, পরিষ্কার ও সৎ ছিলেন। নেতা হিসেবে তাঁর কর্তব্য সুচারুরুপে পালন করেছেন বলে জনগণও তাঁর উপর আস্থা এনে তাঁদের নিজ নিজ অংশ সুচারুভাবে পালন করতে সচেষ্ট হয়েছে।

লেখক- সাংবাদিক ও কানাডায় কর্মরত কমিউনিটি নার্স

এমবি//
 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি