ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

করোনা ভয়াবহতায় ফলস পজিটিভ ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট

নজরুল ইসলাম নাহিদ

প্রকাশিত : ১৯:৪৬, ২২ মে ২০২০

ইনসেটে লেখক।

ইনসেটে লেখক।

সিরাজ সাহেব থাকেন ঢাকায়। ওনার নিজের একটা ঔষদের ফার্মেসী আছে, করেন পাইকারি দরে বেচাকেনা, কাস্টমারও বেশ, তাই বেচাকেনাও জমজমাট। বাসায় ওনার স্ত্রী, দুই ছেলে, আর এক মেয়ে সব মিলিয়ে পাঁচজন সদস্য। হঠাৎ করেই ওনার জ্বর, হালকা ঠান্ডা ও কাশিও আছে বেশ। নিজে নিজেই ঔষধ খেয়েছেন ও বটে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। 

কোন উপায় না পেয়ে পরিচিত একজনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে করোনা টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিয়েছেন। তিনদিন পরে রিপোর্ট পাবেন বলে ওনাকে অপেক্ষা করতে বলেছেন। অপেক্ষা যেন আর শেষ হবার নয়, তিন দিন পর রিপোর্ট পেলেন। রিপোর্ট দেখে মহা খুশি কারণ রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আর ওখান থেকে বলে দিয়েছেন কোনো সমস্যা নেই জ্বর, ঠান্ডা, কাশির ঔষধ খেয়ে যান, কয়েকদিন পর ভালো হয়ে যাবে। উনিও তাই করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হায়! 

এর পরের দিন থেকেই ওনার স্ত্রী, ছেলে, মেয়েরও একই সমস্যা শুরু হয়েছে। কি করবেন ভেবে না পেয়ে এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার-এর পরামর্শে অন্য হাসপাতালে গিয়ে পাঁচ সদস্যের সবাই করোনা টেস্ট এর জন্য পুনরায় স্যাম্পল দিলেন। আবারো সেই অপেক্ষার পালা, অপেক্ষা শেষে রিপোর্ট ও পেয়েছেন। এবার রিপোর্ট পেলেন প্রথম রিপোর্ট এর বিপরীত, মানে সবারই করোনা পজিটিভ। তারমানে প্রকৃতপক্ষে তিনি করোনা আক্রান্ত কিন্তু প্রথম রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। তাহলে প্রথম যে রিপোর্টি দিয়েছে সেই রিপোর্টটি ভুল। তার মানে False Neagtive। 

আসলে এটি মারাত্মক ভুল। চিকিৎসা ব্যাবস্থাপনায় এটি একটি অমার্জনীয় ভুল। আর এই ভুলের জন্য মাশুল দিতে হয়েছে তার পুরো ফ্যামিলিসহ তার দোকানের কাস্টমারদেরও। তাই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে ফ্যামিলির সদস্য ও দোকানের কাস্টমারসহ সবার মাঝেই। মাঝে মাঝে এমনও হয়, প্রকৃতপক্ষে ভাইরাসটি রোগীর মধ্যে নেই কিন্তু টেস্ট করার পর রিপোর্টে দেখা যায় পজিটিভ! অর্থাৎ False Positive। যেটি চিকিৎসা ব্যাবস্থাপনায় আরেকটা ভুল। যার মাশুল দিতে হয় রোগীকে। দুটি রিপোর্টই কাম্য নয়। কিন্তু Fasle Positive এর চেয়ে False Negative বেশি খারাপ, বেশি মারাত্মক। যার জন্য রোগীসহ আশে পাশের লোকদেরও মাশুল দিতে হয়।

নির্ভুল রেজাল্ট পেতে হলে অবশ্যই স্টান্ডার্ট টেস্ট পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। যেমন- যে বা যারা স্যাম্পল কালেকশন করছেন, তারা অভিজ্ঞ কিনা অথবা প্রপার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কিনা সে বিষয়টা নিশ্চিত হতে হবে। শরীরের যে জায়গা থেকে স্যাম্পল কালেকশন করার কথা সেখান থেকে কালেকশন করছে কিনা, স্যাম্পল কালেকশনের জন্য যে জিনিসগুলো দরকার সেগুলো আছে কিনা, অথবা ঠিক আছে কিনা, স্যাম্পল সংরক্ষণের জন্য যে তাপমাত্রা দরকার তা বরাবর আছে কিনা, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টেস্ট করছে কিনা, যে মেথডে টেস্ট করা হচ্ছে যেমন- রিয়েল টাইম পি সি আর, অথবা কীট, অথবা অন্য কোনো মেথড-এ এন্টিজেন বা এন্টিবডি টেস্ট করলে রেজাল্টের accuracy বা নির্ভুলের পার্সেন্টেজ কত, এসব বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

রোগ নির্ণয় করা যত নির্ভুল হবে, রোগীকে চিকিৎসা দেওয়াটা ততই সহজ হবে এবং রোগীও দ্রুত সুস্থ হবে। কিন্তু  রোগই যদি নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা না যায়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসা দেওয়াটা জটিল হয়ে পড়। ব্যাপারটা এরকম যে, সর্বাঙ্গে ব্যাথা ঔষুধ দিবে কোথা?

বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের মতো বাহরাইনেও হাসপাতাল তথা ল্যাবরেটরি সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও এনএইসআরএ (ন্যাশনাল হেলথ রেগুলেটরি অথরিটি) থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও এনএইসআরএ-এর অনুমোদন ছাড়া ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ের জন্য মেশিনারিজ ঢুকানো বা ব্যবহার করা সম্ভব নয়। ল্যাবে কর্মরত ডাক্তার, ল্যাব টেকনোলজিস্ট, ল্যাব টেকনিশিয়ান, মাইক্রোবায়োলোজিস্ট, সবাইকে তাদের কোয়ালিফিকেশন অনুযায়ী লাইসেন্স নিতে হয়। তারা চাইলেই এ দেশের নিয়ম অনুযায়ী ঐ নির্দিষ্ট ল্যাব ছাড়া অন্য ল্যাব-এ কাজ করতে পারবেন না। এমনকি ল্যাবের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন মেশিনের কোয়ালিটি কন্ট্রোলসহ সমস্ত কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্যও হটাৎ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও এনএইসআরএ পরিদর্শনে আসেন এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। এমনকি তারা প্রতিটি ল্যাবের জন্য আলাদা আলাদা স্যাম্পল সরবরাহ করে থাকেন, যার মান তাদের জানা। আর এই জানা মানের সাথে যদি ল্যাবের মান না মিলে তাহলে তদন্ত পূর্বক ল্যাবের সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। তার মানে এই নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ করে গেলে কোনোভাবেই ল্যাব থেকে ভুল রিপোর্ট যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকেনা।

আজ করোনা সারা বিশ্বকে যেভাবে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে, কাল অন্য কোনো ভাইরাস যে হানা দিবে না, তা কে বলতে পারে? সময়ের সাথে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে তাই আমাদের উচিত বিশ্বের উন্নত দেশসমূহকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়া। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মুহাম্মদ বলেছিলেন, যে দেশের বিত্তশালীরা দেশের বাহিরে চিকিৎসা নিতে যান, বুঝতে হবে তার নিজের দেশের চিকিৎসা ব্যাবস্থার প্রতি তার আস্থা নেই। 

তাই যারা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে, কালো টাকার অহংকারে একটু জ্বর, ঠান্ডাতেই দেশের বাহিরে গিয়ে নিজের দেশের টাকা আরেক দেশে খরচ করে আসতেন, আজ আপনারা কোন দেশে যাবেন? তাই আজ সময় এসেছে দেশের কথা চিন্তা করার, দেশ নিয়ে ভাবার, দেশের জন্য কিছু করার, সময় এসেছে নিজের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করে গণহারে পাশের দেশ ভারতসহ অন্যন্য দেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বন্ধ করে নিজের দেশের টাকা নিজের দেশেই রাখার।

লেখক- ল্যাব, ইনচার্জ (মাইক্রোবায়োলোজিস্ট), লিন্নাস মেডিকেল সেন্টার, মানামা, কিংডম অব বাহরাইন।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি