ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

কাজকে ভালোবাসি বলেই প্রতিবন্ধকতা পাত্তা পায়নি: সালমান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:১৪, ২৫ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৪০, ২৬ জুলাই ২০১৮

বাংলাদেশের প্রথম সফল ইউটিউবার এবং মডেল, অভিনেতা সালমান মুক্তাদির। ‘সালমান দ্য ব্রাউন ফিশ’ নামে তার ভেরিফাইড ফেসবুক চ্যানেলের সাবসক্রাইব করা ব্যক্তির সংখ্যা পৌনে দশ লাখ। ইউটিউব থেকে যে আয় করা হয় তেমন একটি প্ল্যাটফর্ম তরুণদেরকে শিখিয়েছেন সালমান। ইউটিউবে নিজের কর্মকান্ড এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেছেন ইটিভি অনলাইনের সাথে। প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎকারে উত্তর দিয়েছেন স্পর্শকাতর সব প্রশ্নের। সাক্ষাৎকার নেন ইটিভি অনলাইনের সহ সম্পাদক শাওন সোলায়মান। 

ইটিভি অনলাইনঃ আপনি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন সফল ইউটিউবার। ইউটিউবার হওয়ার পেছনের গল্প জানতে চাচ্ছি।

সালমানঃ পেছনে গল্প বলতে বললে যা বলতে হয় তা হলো এরকম যে, যেহেতু পড়াশুনায় ভালো ছিলাম না। খেলাধূলাও খুব একটা করতাম না। কিন্তু চারপাশে দেখতাম যে, আমার বয়সী ছেলেমেয়রা হেলায় সময় পার করতো। মাদক নিতো, সীসা লাউঞ্জে পরে থাকতো। একজন আরেকজনের বদনাম করায় ব্যস্ত থাকতো। আমার কাছে এই বিষয়গুলো বেশ ডিপ্রেসিং (হতাশাজনক) লাগতো। তখন মনে হয়েছে মানুষের মাঝে বিনোদনের অভাব। নাটক, সিনেমার বাইরে যেন তাদের কাছে বিনোদনের কিছু নেই। সেই বিনোদনের তাগিদ থেকে ভিডিওগুলো বানাতাম। এভাবে ভিডিও বানাতে বানাতে ইউটিউবার হয়ে গেলাম।

ইটিভি অনলাইনঃ সফলতার গল্প শুনলাম। কিন্তু সফল হওয়ার পেছনের গল্পটা নিশ্চই সহজ ছিল না। অনেক সমস্যা হয়তো মোকাবেলা করতে হয়েছে। সেগুলো কীভাবে মোকাবেলা করলেন?

সালমানঃ হ্যাঁ, সমস্যা তো কিছু ছিলই। আসলে বিষয়টা তো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন। তাই সবাই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। এখনও অনেকে পারে না। তবে সত্যি কথা বলতে কি যে, আমাকে এগুলো কখনোই সেই অর্থে মোকাবেলা করতে হয়নি। আসলে আমি সেই সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতাকে সেভাবে বিবেচনাই করিনি। আমার কাছে আমার কাজটা এতই প্রিয় ছিল যে, সেগুলো আমি সবসময় এড়িয়েই গেছি।

ইটিভি অনলাইনঃ বিনোদনের উৎস বা কিছু করার তাগিদ থেকে ইউটিউবই কেন? অর্থ্যাত আরও অনেক কিছু নিয়েই হয়তো কাজ করা যেতো। কিন্তু ভিডিও এবং ইউটিউব কেন্দ্রিক কাজ করার তাগিদ কীভাবে আসলো?

সালমানঃ প্রথম ভিডিওটি যেটি আমি ইউটিউবে দেই তা একেবারেই শখের বশে ছিল। কিন্তু সেই ভিডিওটিতে মানুষজন যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিলো তা দেখে আরও ভিডিও তৈরি করার অনুপ্রেরণা পেলাম। এরপরের দুই একটি ভিডিও’তে মানুষের প্রতিক্রিয়া পেয়ে এতটাই ভালো লাগলো যে, মনে হলো যদি এটাকে সিরিয়াসলি (গুরুত্ব সহকারে) করি তাহলে হয়তো আরও ভালো কিছু করা যাবে। মানুষ এ ধরনের জিনিস পছন্দ করছে। এত মানুষ যদি পছন্দ করে তাহলে আরও ভালো করে করলে আরও বেশি মানুষ পছন্দ করবে। এই উপলব্ধি থেকেই আসলে ভিডিও এবং ইউটিউব কার্যক্রমকে এতটা গুরুত্ব সহকারে নিলাম।

ইটিভি অনলাইনঃ একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে জানতে চাই আপনার কাছে। আপনি যে ভিডিওগুলো তৈরি ও প্রকাশ করেন তা থেকে কী ধরনের বার্তা পাবে দর্শকেরা? দর্শকদের জন্য শিক্ষণীয় কী কিছু থাকে সেখানে?

সালমানঃ সতি কথা বলতে, আমি কোন বার্তা বা শিক্ষা দিতে চাই না। কারণ এ ধরনের বিষয় দিতে গেলে যে শিক্ষা দরকার আমার নিজেরই তা নাই। তারপরেও শিক্ষা দিতে গেলে সেটা ভালো কিছু হবে না। আমি লক্ষ্য একটাই যে, মানুষকে বিনোদন দেওয়া; হাসানো।

দেখেন মানুষের জীবন তো খুব ছোট। চোখের এক পলকেই দেখবেন যে, আপনার শৈশব শেষ, যৌবন শেষ এমনকি বিবাহিত জীবনের পরের সময়টুকুও শেষ। তো এই ছোট সময়ের মাঝে আমাদের হাসার যে সুযোগ বা ভালো থাকার যে সুযোগ তা খুবই কম। কাজেই জীবনে যতক্ষণ আপনি কারও ক্ষতি করতেছেন না ততক্ষণ নিজের যা ভালো লাগে তা করাই ভালো। আমার কাজ আমার ভালো লাগা বলতে পারেন।

ইটিভি অনলাইনঃ তাহলে আপনি সবাইকে হাসিখুশি আর ভালো রাখতে চান। সবাই যেন হাসিখুশি থাকে এমন বার্তাই আপনার কাজের মাঝে পাওয়া যাচ্ছে...

সালমানঃ আসলেই ঠিক তাই। আমরা আসলে জানি না এই মুহুর্তের পরে আমাদের সাথে কী হবে। তাই জীবনটা সহজ সরল হওয়া উচিত যেখানে সবাই হাসতে জানে, ভালো থাকতে জানে। অপরকে ভালো রাখে।

ইটিভি অনলাইনঃ ইউটিউবিং করে আপনার মতো অনেকেই সফল হচ্ছে, ভালো কাজ করছে। আবার এটা একটা ‘ট্রেন্ড’ও যেন হয়ে গেছে। দশ জনের সাথে কথা বললে দেখা যায় বেশিরভাগই এখন ইউটিউবার। এই বিষয়টা কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

সালমানঃ দেখেন কেউ যদি কিছু করতেই চায় তাহলে নিষেধ তো করা যাবে না, তাই না? তবে আমাদের মধ্যে একটা প্রবণতা থাকে যে, আমরা অন্যদেরটা দেখে শিখি। অনুপ্রাণিত হওয়া এক জিনিস আর কপি-পেস্ট করাটা আরেক জিনিস। এভাবে অন্যেরটা দেখেই কিন্তু ‘ইউটিউবার’ হয়ে যাওয়া যায় না। আর তাছাড়া আমাদেরকে আরেক জনেরটা কেন অনুসরণ করতে হবে? আমি যেমন একটা দিক নিয়ে কাজ করেছি। এভাবে আরেকজন যদি ভিন্ন আরেকটি বিষয় নিয়ে কাজ করে তাহলে তারই লাভ। নিজেকে নিজের মতো হতে হবে।

ইটিভি অনলাইনঃ ট্রেন্ড বাদ দিলে যারা গুরুত্ব সহকারে ইউটিউব নিয়ে কাজ করছে বা পরিশ্রম দিয়ে কাজ করছে, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে?

সালমানঃ যারা গুরুত্ব সহকারে এই বিষয়ে কাজ করছে তাদের জন্য আমার পরামর্শ একটাই।আর সেটা হলো কন্টিনিউটি (ধারাবাহিকতা)। প্রেক্ষাপট যেমনই হোক লেগে থাকতে হবে। শুরুর দিকে এমনকি মাঝের দিকেও খারাপ ভিডিও চলে আসতে পারে। অথবা ভিডিওটা ভালো কিন্তু দর্শকের প্রতিক্রিয়া সেভাবে আসেনি। এমনটা হতেই পারে। তখন হতাশ হওয়া যাবে না। এটাকে ‘কাজ’ না বরং ভালবাসা থেকে করতে হবে। আমরা যেমন অল্প সমস্যায় গার্লফ্রেন্ডকে ছেড়ে যাই না, কারণ তাকে ভালোবাসি। তেমনি এটাকেও ছাড়া যাবে না।

ইটিভি অনলাইনঃ আমাদের দেশে ইউটিউবার বললে তরুণদেরই বেশি দেখি। কিন্তু বাইরের দেশগুলোতে দেখা যায় বয়স্ক মানুষেরাও ইউটিউবে ভালো কাজ করছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বয়স্ক ব্যক্তিদের ইউটিউবার হিসেবে দেখার সম্ভাবনা আছে?

সালমানঃ বাংলাদেশে ইতিমধ্যে সিনিয়র ইউটিউবার আছেন। আর তাদের সংখ্যাটাও বেশ ভালো। বিশেষ করে নারীরা। আমার এই মুহুর্তে নাম মনে পরতেছে না কিন্তু একটা ইউটিউব চ্যানেল আমি দেখেছি যেখানে একজন নারী রান্না নিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেন। তার বেশ ভালো সাবসক্রাইবার আছে। আমার মনে হয় তাদের মতো অনেকেই কাজ করতেছে।

বাইরের দেশে ইউটিউবের বয়স কিন্তু ১০ থেকে ১২ বছর। বাংলাদেশে কিন্তু ইউটিউবের সেই অর্থ প্রচলন বেশ পরে। সে কারণে একটু সময় লাগবে। রাতারাতি তো হয়ে যাবে না। কিন্তু হবে।

ইটিভি অনলাইনঃ ইউটিউবের বাইরে আপনার কাজ নিয়ে আলাপ করি। এই মুহুর্তে আপনার ব্যস্ততা কী নিয়ে?

সালমানঃ আমার কাজ মূলত ইউটিউব নিয়েই। আগের থেকে টিভি’তে কাজ কমিয়ে দিয়েছি। নিজের অফিস, ইউটিউব চ্যানেল এসব নিয়েই কর্মব্যস্ত দিন কাটে। এছাড়াও ‘বঙ্গ’ এর সাথে কাজ করছি। সেদিকেও ব্যস্ততা থাকে। ব্র্যান্ডিং, শো এসব নিয়েই চলে যাচ্ছে।

ইটিভি অনলাইনঃ সালমান মুক্তাদির যতটা সফল ততটাই আবার বিতর্কিত। আপনার কাছে আপনার ভিডিও নিয়ে বিতর্ক, কর্মকান্ড নিয়ে বিতর্ক। ‘মিস বাংলাদেশ’ জেসিয়া’র সাথে আপনার সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক। এই বিতর্ক এবং বিতর্ক যারা তৈরি করছেন তাদের প্রতি আপনার মন্তব্য কী?

সালমানঃ বিতর্ক এবং বিতর্ক যারা করছেন তা নিয়ে আমার বিশেষ কিছু বলার নাই। যারা বিতর্ক করেন তাদের কাছে এটা খুব ‘তৃপ্তি’র একটা কাজ হয়তো। কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমার জীবনে এসব বিতর্ক নিয়ে চিন্তা করার থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় কাজ আছে আমার। আরও বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তারা যদি আমার লাইফ নিয়ে বিতর্ক করে হাসিখুশি থাকে, কিছু সময় ভালো থাকতে পারে তাহলে করুক। থাকুক বিতর্ক।

ইটিভি অনলাইনঃ নাকি আপনারাই এসব বিতর্কের জন্ম দেন। আলোচনায় থাকার জন্য তারকাদের বিতর্কিত বিষয়ের জন্ম দেওয়ার অভিযোগ অনেক পুরনো।

সালমানঃ অভিযোগ আছে এবং অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো তা সত্যিও। কিন্তু দেখেন আমি যদি নিজেই নিজেকে নিয়ে বিতর্কিত ইস্যু তৈরি করতাম তাহলে মানুষ কিন্তু আমাকে এতো ভালবাসতো না। অনুষ্ঠানগুলোতে বা কাজে আমাকে এতটা ডাকতো না। বিতর্ক করে অনেকেই আলোচনায় আসে কিন্তু দেখবেন তাদের সেভাবে মার্কেট ভ্যালু নাই।

ইটিভি অনলাইনঃ শেষটায় এসে একেবারেই আপনার ব্যক্তিগত বিষয়ে জানতে চাইব। আপনার আর জেসিয়ার সম্পর্ক নিয়ে। আপনাদের আইডি হ্যাকিং হয়েছে। হ্যাকিং থেকে আবার আপনাদের মাধ্যমেও বেশকিছু ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলো বেশ ভাইরাল হয়। আপনি কী ইটিভি অনলাইনের মাধ্যমে বিষয়টা প্রথমবারের মতো খোলাসা করবেন? জেসিয়ার সাথে আপনার প্রেমের সম্পর্ক আছে?

সালমানঃ আগে সম্পর্ক নিয়ে বলি। আমাদের বিষয়ে সবারই তো এমন কিছু না কিছু থাকে। তবে ভবিষ্যতে তা কোন দিকে যাবে তা নিয়ে এখন মন্তব্য করাটা হবে খুবই জলদি কিছু বলা। আমাদের বয়স অনেক কম। ক্যারিয়ার পুরোটা সামনে পরে আসে। আমরা ‘সলিড’ কোন কিছুতে নেই...

ইটিভি অনলাইনঃ আপনারা একটা সম্পর্কে আছেন...

সালমানঃ এটা আমি ঠিক কোন ‘লেভেল’ দিব না। সত্যিকার করে বললে, আমাদের এখন একসাথে থাকতে ভালো লাগছে তাই আছি। সামনেও যদি লাগে থাকবো। যেদিন ভালো লাগবে না সেদিন থেকে থাকব না। আমরা ট্রাই (চেষ্টা) করতেছি যদি থাকা যায় থাকবো। এটাকে আমরা নিশ্চিত করে কিছু বলব না।

আমরা ইচ্ছে করেই বিষয়টি ‘নিশ্চিত’ করে কিছু বলতেছি না কারণ এটা আমাদের মার্কেটিং-এ বেশ সাহায্য করে। মানুষকে যদি ‘সব’ বলেই দেই তাহলে তাদের আর আগ্রহের জায়গাটা থাকে না।

ইটিভি অনলাইনঃ ভিডিও নিয়ে কী বলবেন?

সালমানঃ আসলে আমরা একটু অন্য সবার থেকে আলাদা। গা-ছাড়া ধরনের। অন্যরা যা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, আমরা তা সহজেই করে ফেলি। আমি শুরুতেই যেটা বলেছিলাম যে, আমরা যেহেতু কারও ক্ষতি করতেছি না। তাই লুকোচুরির কিছু নাই। আমরা তো আর চুরি-ডাকাতি কিছু করি না। আমার বক্তব্য এটুকুই।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি