ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

কিশোরদের মস্তিষ্ক পরিবর্তনে সক্ষম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

শাহরিমা বৃতি, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩০, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ১৫:৩৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩

ঘন ঘন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ব্যবহার কিশোর বয়সে একজন মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে এবং সেটি কীভাবে করে তাই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়। 

মঙ্গলবার প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, যারা ঘন ঘন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তারা সাধারণত খুব দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। অর্থাৎ কোনো বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার অবস্থায় থাকে না। যেকোনো বিষয়ে হয় তারা দ্রুত ইতিবাচক নয়তো নেতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়।  

“যারা কিশোর বয়সে অতিরিক্ত সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন তাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে যাতে সময়ের সাথে সাথে তারা যেকোনো সামাজিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আরও দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছাচ্ছেন,“ এমনটাই বলছেন এই গবেষণা দলের প্রধান চ্যাপেল হিলের নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান এবং নিউরোসায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক ইভা টেলজার।

“আর এটিই একজন কিশোরী প্রাপ্ত বয়সে কেমন মস্তিষ্কের অধিকারী হবে তার ভিত্তি তৈরি করে দেয়।”

টেলজার এবং তার দল নর্থ ক্যারোলিনার মোট ১৬৯ জন সিক্স থেকে সেভেন গ্রেডের শিক্ষার্থীর ওপর গবেষণা করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি তাদের মস্তিষ্কের বিকাশের কীভাবে প্রভাব ফেলছে। 

এদের মধ্যে কিছু কিশোর-কিশোরী আছেন যারা একত্রে আড্ডায় থাকরে সময়ও মোবাইল ফোনে চোখ রাখে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুঁ মারে। তাদের ভাষ্য, এটি তাদের আনন্দ দেয়। 

এর কারণ কী? 

যাদের ওপর গবেষণাটি করা হয়েছে তাদের বয়স যখন ১২ থেকে ১৩ এরমধ্যে ছিলো তখন থেকে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এরপর থেকে টানা তিন বছর ধরে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং প্রতি এক বছর পর পর তাদের এফএমআরআই ইমেজিং করা হয়। 

এফএমআরআই এমন একটি পরীক্ষা, যার মাধ্যমে মস্তিষ্কের স্নায়ুর প্রতিক্রিয়া ছবির মাধ্যমে দেখা যায়। যা থেকে বোঝা যায় তাদের মস্তিষ্ক কতটুকু সময় রাগান্বিত কিংবা কতটুকু খুশি ছিল। 

এই পর্যায়ে দেখা গেছে, যেসব কিশোর-কিশোরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘন ঘন ব্যবহার করেছে তাদের মস্তিষ্ক বেশি সময় উত্তেজিত ছিলো। সেই তুলনায় কম উত্তেজিত ছিলো তাদের মস্তিষ্ক যারা কম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ উত্তেজিত থাকার সময়টাতেই তারা কোনো না কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে- এমনটাই জানিয়েছেন টেলজার। 

তবে এটা এখনও স্পষ্ট নয় যে, স্নায়বিক এই পরিবর্তন সরাসরি তাদের আচরণগত পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। 

দ্রুত উদ্বিগ্ন না হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন টেজলার।  

গবেষণাটি এটি প্রমাণ করে, সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের সাথে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তবে এদের মধ্যে একটি অন্যটির কারণ কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয় এবং এটি কিশোর-কিশোরীদের জন্য ভালো না খারাপ সেটি প্রমাণ করা তাদের উদ্দেশ্য নয়, বলছেন টেজলার। 

বি মি (BeMe) হেলথের চিফ মেডিকেল অফিসার এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল ও হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের শিশু ও কিশোরী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. নেহা চৌধুরী বলেছেন, “সোশ্যাল মিডিয়া সমবয়সীদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম। সেটা পোস্টে লাইক ও মন্তব্যের মধ্য দিয়ে হতে পারে, হতে পারে সেটি ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক।“

এদিকে টেলজার বলছেন, বয়ঃসন্ধিকাল হল মস্তিষ্ক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। একইসাথে এটি অতিরিক্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারেরও সময়। 

ড. নেহা চৌধুরী বলেন, তিনি প্রায়ই অবাক হন মস্তিষ্কের বিকাশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব দেখে। 

এই গবেষণা এটা প্রমাণ করে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিশোর মস্তিষ্ককে পরিবর্তন করতে সক্ষম। 

সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়

আপাত দৃষ্টিতে এই সমস্যাকে বড় কোনো সমস্যা মনে না হলেও সমস্যাটি অল্প থাকা অবস্থাতেই অভিভাবকদের বিবেচনায় আনা দরকার। এজন্য তারা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন। 

প্রথমেই যেটা করা যায় সেটা হল কিশোর-কিশোরীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ কিছুটা কমিয়ে দিতে হবে। একবারেই বন্ধ নয় তবে টানা বেশিক্ষণ নয়, মাঝে মাঝে গ্যাপ দিতে হবে। অর্থাৎ এক টানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকা বন্ধ করতে হবে। 

এতে কিশোর-কিশোরীরা তাদের আশপাশের মানুষদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার সময় ও সুযোগ পাবে। 

এক্ষেত্রে ড. নেহা চৌধুরী চারটি ধাপের কথা উল্লেখ করেছেন। 

প্রথমটি হল- অভিভাবককে তার সন্তানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং তারা সন্তানদের শিখিয়ে এবং বুঝিয়ে দিবেন, কীভাবে তারা সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কীভাবে তাদের প্রভাবিত করতে পারে তাও বুঝিয়ে বলতে হবে। 

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সন্তানদের মস্তিষ্ক কীভাবে পরিবর্তনে সহায়ক সেটিও বুঝিয়ে বলুন এবং ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায় এমনভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে উৎসাহিত করুন। 

এই পরামর্শগুলো শুধু কিশোরদের জন্যই নয়, তরুণ বয়সে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। 

অসামাজিক অ্যাপস খুঁজে বের করা এবং আপনি কতটা সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করছেন, তা বিবেচনা করার এটিই সময়। এর মধ্য দিয়েই হয়তো শান্ত ও সতেজ জীবনযাপনে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন।

(সিএনএন অবলম্বনে)

এসবি 
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি