জীবনের মর্যাদা

কিসে হয় মর্যাদা? দামি কাপড়ে? গাড়ি-ঘোড়ায়? ঠাকুরদার উপাধিতে? না – তা নয়। মর্যাদা ঐসব জিনিসে নাই।

তুমি চরিত্রবান কি না! তুমি কঠিন সত্যের উপাসক কি না! তুমি জ্ঞানের সেবক কি না, তাই জানতে চাই।

তোমার অনেক টাকা আছে। তুমি মানুষকে শ্রদ্ধার চোখে দেখ না। মানুষের মনুষ্যত্ব তোমার স্পর্শে এলে নষ্ট হয়- আমি তোমাকে শ্রদ্ধা করি না।

সাদি বলেছেন-ভদ্রলোক সেই, বড় সেই, যে সত্যের উপাসক। সে মনুষ্যকে সমাদর করে। চরিত্র ও মহত্ব যার গৌরব।

নিত্য কোর্মা-কালিয়া রাবড়ি-ক্ষীর খাও কি না – শুনতে চাইনে। তোমার বহুলোকের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় আছে কি না, জানবার আমার দরকার নাই। তোমার পিতা জজ ছিলেন, তা শুনেও আমার কঠিন মন সুখি হবে না। আমি দেখতে চাই তোমাকে, তোমার ভিতর বাহির তোমার মনুষত্ব ও চরিত্র। তোমার মনুষ্যত্ব , জ্ঞান ও বিনয়ের সামনে মাথা আমার নত হোক আরি কিছুর সম্মুখে নয়।

তোমার বাড়িতে একশো দাসি থাকে-তোমার জামিদারিতে প্রজারা তোমায় দেখে ভীত হয়- একথা শুনলে মনে আমার সুখ হবে না! তোমার আত্নীয়-স্বজন সকলেই বড়লোক,এ-কথা শুনে আমার কী লাভ? আমি দেখতে চাই তোমাকে –তোমার ভিতর –বাহির , তোমার মনুষ্যত্ব, তোমার ঠিক মূল্য।

মানুষের পয়সা দিনের আলোতে চুরি করে এনেছ? মা আশীর্বাদ করেছেন, খোদা তোমার মঙ্গল করুক;পিতা সাদরে স্নেহ মায়ায় তোমায় বুকে তুলে নিচ্ছেন। মানুষের প্রশংসামাখা দৃষ্টি তোমার উপর। সম্মানী লোকেরা তোমাকে চান। আমার মন তোমার কাছে নত হবে না, অবজ্ঞায় আমি বলব , যাও।

আত্না তোমার নির্মল, তুমি জাহানের সেবক –সৃষ্টি –বৈচিত্র অধ্যয়নে তোমার আনন্দ, চরিত্র তোমার উন্নত। মহা-মানুষকে অনুসরণ করাই তোমার জীবনের লক্ষ্য, আত্ন-শাসনে তুমি বিজয়ী বীর, মিথ্যা ও পাপের বিরদ্ধে দাড়ানো ধর্ম মনে কর, দৃষ্টি তোমার দিনদিন গভীর হচ্ছে, আত্না তোমার মৃগের মতো সজাগ ব্যাকুল, উৎকর্ণ-সম্ভ্রমে তোমারয় আমি নমস্কার করি।

তুমি মিথ্যাবাদী , হৃদয় তোমার সংকীর্ণ, তোমার ভিতর আত্না আছে কিনা জানা যায় না, প্রাণহীন পদার্থের মতো তুমি সময়ের উপর চড়ে যাচ্ছ, তুমি পিতার বড় সন্তান, তোমায় আমি ঘৃণা করি। তোমার উপাসনা ও উপবাসের মূল্য কী?

জীবনকে মধুর ও পবিত্র করবার জন্য তুমি কষ্টে পড়েছ-ছিন্ন বস্তার উপর বসে তুমি রহস্যের সন্ধানে ব্রাপৃত, সংসারের মানুষেরা তোমাকে সম্মান করে না, আমি তোমাকে সম্মান করি।

তুমি চরিত্রবান ও সত্যবাদী, জ্ঞানের সাধক এবং পাপকে ঘৃনা কর, তমি যে কোনো কাজই কর না-বিশ্বাস কর তোমার মর্যদা অল্প নয়।

আত্নার শুভ্রতা রক্ষা করা-চিত্তকে মিথ্যার বিরুদ্ধে স্বাধীন করে রাখাই ধর্ম-তুমিই যথার্থ ধার্মিক, অতএব সম্মান তোমারই।

উচ্চ রাজকর্মচারী হতে পারলে না, তোমার জীবনের মূল্য হল না। এমন হীন চিন্তা হৃদয়ে পোষণ করো না। রাজা –মহারাজা-উচ্চ রাজকর্মচারী-মনে রেখো, তোমার সেবক।

গাড়ি ঘোড়ায় যে চড়ে, প্রাসাদে যে বাস করে, যার মাথা দিয়ে কুসুমের গন্ধ বেরোতে থাকে, ইঙ্গিতে যার দশজন দাসদাসি দৌওড়ে আসে, মানুষের ঘাড়ে চড়ে যে মানুষকে দিয়ে জুতো খোলে, মানুষের ঘাড়ে চড়ে যে হাওয়া খায়, তাকে দেখে তুমি দমে যেয়ো না।

** প্রবন্ধটি ডা. লুৎফর রহমানের উন্নত জীবন গ্রন্থ থেকে নেওয়া।