ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

খালেদা জেলে, তারেক ফেরারি

ড. কামালের নেতৃত্ব মেনে নিতে প্রস্তুত বিএনপি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৫৩, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৪৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে। তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের হাল যার ধরার কথা, সেই তারেক রহমানও ফেরারি হয়ে লন্ডনে দিন যাপন করছেন। কার্যকর নেতৃত্বের অভাবে দলের ভেতরে রয়েছে নানামুখী কোন্দল। যার কারণে গত ১০ বছরে বহু ইস্যু পেলে সরকার বিরোধী দৃশ্যমান কোনো আন্দোলন গড়ে তোলতে পারেনি রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি।

এমতাবস্থায় নির্বাচনকে সামনে রেখে একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে প্রধান করে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করার আলোচনা চলছে বিএনপির ভেতর বাইরে। সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে জোটের প্রধান করার ইচ্ছা থাকলেও, শারীরিক অসুস্থতা আর ড. কামালের অনুষ্ঠানে সম্প্রতি তার অনুপস্থিতির কারণে এবার ড. কামালকেই জোটের প্রধান মানতে প্রস্তুত ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর বিএনপি।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘বৃহত্তর জোট’ গঠনের চূড়ান্ত পর্যায়ে বিএনপি। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, তাঁরা এখনো আশায় আছেন যে বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির ও জাতির ‘দুঃসময়ে’ নতুন জোটের অগ্রভাগে থাকবেন। কারণ, তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। তবে তাঁর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া এবং যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের যৌথ কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকা নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

আর এ কারণেই ড. কামালকে জোটের প্রধান মেনে নিতে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের বেশিরভাগ নেতাই নাকি সায় দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এ লক্ষ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিদেশ সফর থেকে ফিরেই ড. কামালের দ্বারস্থ হয়েছেন। এদিকে শুনা গেছে, ড. কামালকে প্রধান করতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানও নাকি গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন। আর তার কাছ থেকে গ্রিন সিগনাল পেয়েই মির্জা ফখরুল লন্ডন থেকে ফিরেই একান্ত বৈঠক করেছেন ড. কামালের সঙ্গে। মির্জা ফখরুল এর আগে বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি তুলে ধরতে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তবে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন বৃহত্তর জোটের বিষয়টি স্বীকার করতে চাননি তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. কামাল বলেন, ‘না, না, না। আমি এ রকম কোনো সম্ভাবনা দেখি না।’ তবে তিনি বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া যাতে বেগবান হয়, সে লক্ষ্যে তাঁর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে গত এক সপ্তাহে গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট ও দুটি প্রভাবশালী বাম দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৃহত্তর জোট গঠনের বিষয়ে আলাপ করেছেন। তবে জামায়াত ইস্যুতে প্রতিটি দলেরই আপত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। তাই বিএনপির সঙ্গে সরাসরি জোট বাঁধবে না গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট ও বাম দলগুলো, এমনটাই জানিয়েছেন ওই দলগুলোর নেতারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, দেশকে দ্বি দলীয় বলয় থেকে মুক্ত করতে কাজ করছে বাম দলগুলো। আর এ প্রশ্নে সিপিব অবিচল। তাই বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন তিনি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেন ও একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বেশ কয়েকদিন ধরেই মিডিয়া পাড়ায় সরব হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন, টেবিল বৈঠক আর ছোটো ছোটো সমাবেশের মধ্য দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। তাদের কর্মকাণ্ডে
জনসাধারণের সম্পৃক্ততা না থাকলেও, মিডিয়া পাড়ায় সরগরম এ দুই নেতা। এরইমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বাইরের দলগুলোকে টানার চেষ্টা করছেন ড. কামাল ও বদরুদ্দোজো চৌধুরী।

জানা গেছে, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে বিশাল সমাবেশ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে কড়া বার্তা দিতে চায় দলটি। এরই লক্ষ্যে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের অন্য দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এদিকে ২২ সেপ্টেম্বরের
সমাবেশে মির্জা ফখরুলসহ সরকার বিরোধী গোষ্ঠী যে সরব থাকবে, তা অনুমেয়।

এদিকে ‘জাতীয় ঐক্য’ (বৃহত্তর জোট গঠন) প্রক্রিয়ায় বিএনপিসহ জোটের নেতাকর্মীরা যাবেন কি না, এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দলীয়ভাবে বিষয়টি আলোচনা করার পরই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে মির্জা ফখরুল এও বলেছেন, ‘কেউ উড়ে এসে এখন বাংলাদেশকে উদ্ধার করবে না, বরং ঐক্য গড়ার মধ্য দিয়েই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এদিকে বিএনপি জোটের অন্য নেতাদের মুখেও এমনটাই শুনা গেছে।

নির্বাচন সামনে রেখে ১৫ সেপ্টেম্বর ৫ দফা দাবি এবং ৯ দফা লক্ষ্য প্রকাশ করে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল বি চৌধুরীর। কিন্তু তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়ে সেখানে যাননি। বিকল্পধারার জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাউকেও সেখানে দেখা যায়নি। এরপর থেকেই ঐক্য প্রক্রিয়ায় ভাঙনের গুঞ্জন
ওঠে। এদিকে বিকল্প ধারা যদিও শেষ পর্যন্ত ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে যান, তারপরও বৃহত্তর ঐক্যের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আ স ম আবদুর রবের জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য। এরইমধ্যে কামাল হোসেনের সঙ্গে খুলনা সফরে রব, মান্না ছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ
চৌধুরী ছিলেন।

বৃহত্তর জোট কিংবা সরকার বিরোধী জোট যা্-ই বলুক না কেন, জামায়াতের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো অংশগ্রহণ থাকলে বিকল্পধারা আর এ জোটে যাবে না বলে আগেই জোটের অন্য নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন মাহি বি চৌধুরী। তাই শেষ পর্যন্ত, ড. কামাল, মাহমুদুর রহমান মান্না ও মির্জা ফখরুলদের বৃহত্তর ঐক্য
আলোর মুখ দেখবে কি না সে ব্যাপারে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এমজে/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি