ঢাকা, মঙ্গলবার   ০১ জুলাই ২০২৫

ড্যান্ডির নেশায় সদরঘাটের পথশিশুরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৫২, ২৪ মার্চ ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পথশিশুদের মাদক সেবন যেন কোনোভাবেই থামছে না। বর্তমানে মাদকের বিরুদ্ধে অনেক সভা সেমিনার দেখা গেলেও আইনগত তেমন কোনো প্রতিকার চোখে পড়ে না। শুধু কাগজ কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

বুধবার দুপুরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যেতেই চোখে পড়ে জটলা বেধে দাড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি শিশু। কাছে যেতেই কিছু একটা লুকিয়ে ফেললো ওরা। জিজ্ঞাসা করতেই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো কিছু করি না। কিন্তু হাত বলে ভিন্ন কথা। হাতেই রয়েছে মাদক। আরও কাছে যেতেই নদীর পানিতে সেগুলো ফেলে দিয়ে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলো। এভাবেই অবাধে চলছে সদরঘাটের আশেপাশের পাঁচ শতাধিক শিশুর মাদক সেবন। এদের সবাই দেশের কোনো না কোনো স্থান থেকে এখানে চলে এসেছে, আবার কারো কারো জন্মই এখানে। কারো বাবা-মা আছে আবার কারো বাবা-মা আছে কি না তাও জানে না তারা।

ওদের মধ্যে সেলিম নামে একজন এখানে পাঁচ বছর ধরে রয়েছে। বয়স আনুমানিক নয় বছর। মলিন চেহারা, গায়ে ছেড়া হ্যাফপ্যান্ট, হাফহাতা বোতামহীন ময়লা শার্ট। কাজের কথা জানতে চাইলে সেলিম জানান, পেপার বেচি, বোতল কুড়াই যা ভাঙ্গারির দোকানে বেইচ্যা (বিক্রি) দেই আবার মাঝে মাঝে কুলির কাজ করি। দিনে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা উপার্জন করি। তিন বেলা খাবারের পর অবশিষ্ট টাকা বিকেলে বন্ধুদের (অন্য পথশিশু) সঙ্গে ঘুরতে বের হলে খরচ করি। আর রাতে এখানেই ঘুমাই। নেশা করার কথা জানতে চাইলে প্রথমে বলতে না চাইলেও বিভিন্নভাবে বোঝানোর পর জানায়, ড্যান্ডি নামক আঠা (জুতায় ব্যবহৃত) জাতীয় একটি নেশাজাত দ্রব্য আছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দামে দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। খাইলে খুব ভালো লাগে। আমি খাইতে চাই না। অন্য শিশুদের দেখিয়ে বলে ওরা আমাকে জোর করে খাওয়ায়।

শিশুগুলোর ব্যাপারে পার্শবর্তী মুকুল নামে এক ব্যক্তি বলেন, এখানকার পথশিশুগুলো নেশা করে থাকে। শুধু ড্যান্ডি না সিগারেট, গাজা ছাড়াও বেশ কিছু মাদক তারা গ্রহণ করে। একজন অন্যজনের সঙ্গে চলাফেরা করার মাধ্যমে এই নেশায় আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে পরে তারা।

এছাড়াও তিনি আরও বলেন, এ সব শিশুরা বিভিন্ন ভাঙ্গারির দোকানে কুড়িয়ে আনা নষ্ট বোতল বিক্রি করে। সেখান থেকে দোকানিরাই মূলত এদের মাদক গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সব শিশুরা যদি মাদক গ্রহণ করে তাহলে তাদের ব্যবসা ভালো হয়। মাদকের তাড়নায় শিশুরা নষ্ট বোতল সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে।

তবে এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে স্থানীয় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী রাজ্জাক মিয়া বলেন, এদের বাবা-মা, ঘরবাড়ি নাই। আমাদের দোকানগুলোতে ভাঙ্গারির মাল বিক্রি করে দিনে তিন বেলা খাবার খায় তারা। আমরা ওদের নেশা করার জন্য কখনোই উদ্বুদ্ধ করি না।

আরএ/এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি