তিন সিটির ভোটের তারিখ নির্ধারণে ইসির বৈঠক কাল
প্রকাশিত : ১৭:১৫, ২৮ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৪১, ২৯ মে ২০১৮
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করতে মহাপরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে মেনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে ৬ সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চায় সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।
ইতোমধ্যে খুলনা সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তুতি চলছে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের। এর ধাবাহিতকায় এদিকে আগামী জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের ভোটের পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থাটি।
ঈদুল ফিতরের আগেই এই তিন সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পরিকল্পনা করেছে কমিশনের। এমনকি তিন সিটিতে ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহার হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাগেছে, আগামী জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে ২৮ থেকে ৩১ তারিখ এর মধ্যে সম্ভাব্য তারিখে ভোট ভোট হতে পারে। এসব বিষয়ে সিন্ধান্ত নিতে আগামীকাল মঙ্গলবার বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, মঙ্গলবারের বৈঠকে তিন সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে, তফসিলের আগে সিটিগুলোয় আইনি কোনো জটিলতা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে কমিশন। এই তিন সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে অনাপত্তিপত্র পেলেও আইনের বিষয়ে আরও তথ্য নেবে এই সাংবিধানিক সংস্থাটি।
ঢাকা উত্তর ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আইনি বিড়ম্বনা মোকাবিলার বিব্রতর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার বিষয়টি আরও সতর্কতার সঙ্গে দেখছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুলাই মাসের শেষ দিকে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে কমিশন এগোচ্ছে। এক্ষেত্রে ঈদের আগেই এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
এদিকে, এই তিন সিটি নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আচরণ বিধির প্রয়োজনীয় সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। শিগগিরই ভেটিংয়ের জন্য এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আগামী ২৬ জুন অনুষ্ঠেয় গাজীপুরের ভোটের পরপরই এটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এবিষয় জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। ঈদের সরকারি ছুটি ও পরীক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনা রেখে এ তিনি সিটিতে ভোটের দিন নির্ধারণ করা হবে। এমনকি এ তিন সিটিতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা ইসির রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, কমিশন ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য এলাকাগুলোর ভোটার তালিকার সিডি তৈরি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করতে ইতোমধ্যে আদেশ জারি করা হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করতে কমিশন মঙ্গলবার বৈঠকে বসছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ওইদিন ভোটগ্রহণের দিনক্ষণসহ তফসিলের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা এই বছর জুলাইয়ের মধ্যে সব সিটি করপোরেশন অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছেন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, তিন সিটির তফসিল ঘোষণার আগে সিটি এলাকার সীমানা বা অন্য কোন আইনি জটিলতা রয়েছে কিনা, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করছে তারা। ‘আইনি জটিলতা নেই’ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এমন অনাপত্তিপত্রের পরেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আদালতের মুখোমুখি হওয়ার কারণে কমিশন এবার বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে। কোনো আইনি জটিলতা রয়েছে কিনা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে দুই দফায় তথ্য নিয়ে ‘কোনও জটিলতা নেই’ বলে জেনে নিয়েছে কমিশন। এরপরও বিষয়টির জন্য বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে তফসিল ঘোষণার আগে আরেক দফা নিশ্চিত হবে তারা।
ঢাকা উত্তর সিটি ও গাজীপুর সিটির মামলার ব্যাখ্যা দিয়ে সচিব বলেন, এই দু’টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়েও আমরা মন্ত্রণালয় থেকে এনওসি পেয়েছিলাম। দু’টির সীমানার গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছিল। তারপরও মামলা হলো। কাজেই আদালতের বিষয়ে তো আমাদের কোনও হাত থাকে না।
উল্লেখ্য, তিন সিটি করপোরেশনের মধ্যে রাজশাহী সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর। আইন অনুযায়ী এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ৫ অক্টোবর। ৯ এপ্রিল নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়েছে। আর ৫ অক্টোবরের মধ্যে ভোট হতে হবে। সিলেট সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর। এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে ৮ অক্টোবর। গেল ১১ এপ্রিল এ সিটির নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়েছে। বরিশাল সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর। আইন অনুযায়ী এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে ২৩ অক্টোবর। ২৭ এপ্রিল নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়েছে। আর ২৩ অক্টোবরের মধ্যে করতে হবে নির্বাচন।
টিআর/ এআর