ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪

দান কেন করবেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:১০, ১৩ এপ্রিল ২০২৩ | আপডেট: ১৮:৫৪, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

দান কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা আমরা অধিকাংশ মানুষই বুঝি না। দান মানেটা কী? আপনার যা আছে যা আপনি নিজে ব্যয় করার পরেও সেখান থেকে মানুষের জন্যে দেয়া, মানুষের জন্যে ব্যয় করাই দান। কারণ আপনি যা পেয়েছেন এটা স্রষ্টার অনুগ্রহ।

সূরা কাসাসের ৭৭ নম্বর আয়াত হচ্ছে, আল্লাহ যেমন তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও মানুষের উপকার করো।

কেন দান করবেন?

দান যিনি যত বেশি করতে পারবেন আল্লাহর অনুগ্রহ তার প্রতি তত বাড়তে থাকবে। আর যিনি করতে পারবেন না যিনি শুধু সঞ্চয়ে মনোযোগী হবেন সবসময় চোখের সামনে অভাবের দৃশ্য, সব হারানোর ভয় তার সামনে মাথাচাড়া দিয়ে থাকবে। যখনই সে চিন্তা করবে সে অভাব এবং সব হারানোর ভয় তাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। 

সত্যিকারের ধার্মিক কীভাবে দান করেন?

দানের ক্ষেত্রে এমনকি কাউকে টাকা যখন দেই, ভালো কড়কড়ে টাকাটা নিজের জন্যে রেখে দেই। অথচ একই, এটারও মার্কেট ভ্যালু একই! কিন্তু যেটা একটু ময়লা সেটা দেই।

দানের ক্ষেত্রে হচ্ছে সূরা আল ইমরানের ৯২ আয়াত হচ্ছে খুব পরিষ্কার, হে বিশ্বাসীগণ! তোমার প্রিয় ও পছন্দের জিনিস থেকে দান করতে না পারলে তুমি কখনো সত্যিকারের ধার্মিক হতে পারবে না। অন্যের জন্যে তুমি যা-কিছু ব্যয় বা দান করো আল্লাহ তা ভালোভাবেই জানেন।

১. প্রিয় এবং পছন্দের জিনিস দান করেন

অর্থাৎ সত্যিকারের ধার্মিক হতে হলে প্রিয় এবং পছন্দের জিনিস থেকে দান করতে হবে। আমাদেরকে ধর্ম যেটা মানুষের কল্যাণের জন্যে ছিল সেটাকে একটা ভয়ের উপকরণ হিসেবে এক সময় কেউ কেউ উপস্থাপন করেছেন এবং সেই উপস্থাপনাটাই আমাদের জনজীবনে চলছে একটা দীর্ঘসময়।

এখন আমরা ধার্মিক হতে চাই ধর্মানুরাগী হতে চাই ধর্মানুসারী হতে চাই ধর্মপরায়ণ হতে চাই এবং সত্যিকারের ধর্মপরায়ণ ধার্মিক তখনই হতে পারব যখন আমরা আমাদের উপার্জন থেকে দান করতে পারব এবং প্রিয় এবং পছন্দের জিনিস থেকে দান করতে পারব।

কিন্তু যখন দান করবেন কাউকে ভালো নোটটা তাকে দেবেন। আপনি পাঁচ টাকাই দেন পাঁচ টাকার ভালো নোটটা দেবেন ৫০ টাকার ভালো নোটটা দেবেন পাঁচশ টাকার ভালো নোটটা দেবেন হাজার টাকার ভালো নোটটা দেবেন। আপনার মনটা বড় হবে। 

২. যা নিজে খান না সেটা কখনো কাউকে দান করবেন না

অনেক সময় আমরা ফকিরকে খাবার দেই যে খাবারটা একটু সন্দেহ কী জানি আমি খেলে যদি সমস্যা হয়! যেটা নিজে খাবেন না সেটা কখনো কাউকে দান করবেন না। আর যদি দান করতে হয় তাকে আগে বলে দেবেন, দেখ এই খাবারটা কিন্তু বা এই জিনিসটাতে ত্রুটি আছে তুমি কি নেবে? তুমি নিতে পারো আর নাও নিতে পারো। নেয়া না নেয়া তোমার ইচ্ছা কিন্তু এটাতে এই ত্রুটি আছে।

বিশিষ্ট সাহাবী আবু তালহার দানের ঘটনা

আল্লাহর কাছে যিনি সত্যিকারের ধার্মিক আল্লাহর যিনি প্রিয় হতে চান তাকে সবসময় পছন্দের জিনিস থেকে দান করতে হবে। এটা নিয়ে তো বিখ্যাত ঘটনা আছে।

বিশিষ্ট সাহাবী আবু তালহা যখন কোরআনের আয়াত নাজিল হওয়ার পরে শুনলেন, তখন তিনি তার সবচেয়ে পছন্দের যে খেজুর বাগান বিশাল খেজুর বাগান যেখানে ছয়শ খেজুর গাছ ছিল। তার অনেকগুলো বাগানের মধ্যে এই বাগানটাই ছিল তার সবচেয়ে ভালো এবং সবচেয়ে প্রিয় এই বাগানটি তিনি মদিনার দরিদ্রদের জন্যে দান করে দিলেন।

নবীজীর (স) কাছে এসে বললেন যে, মদিনাবাসীকে আমার সবচেয়ে প্রিয় বাগানটি এজন্যে দিচ্ছি যে এই দানের মাধ্যমে পরকালে তিনি যেন আল্লাহর কাছে সত্যিকারের ধার্মিকের মর্যাদা লাভ করেন।

মহামতি বুদ্ধ যেভাবে দান করতে বলেছেন…

প্রত্যেক ধর্ম কিন্তু এই কথাই বলেছেন। সবচেয়ে ভালো জিনিসটি দান করার। একবার হলো মহামতি বুদ্ধকে একজন তার অনুসারী এসে জিজ্ঞেস করল যে, মহামতি এই বিহারের জন্যে আমি কত দান করব? তিনি বললেন তুমি সর্বদান করবে। অর্থাৎ তুমি তোমার সর্বোত্তমটা দেবে।

সর্বোত্তম দানকারীর পুরস্কার কী? এই সর্বোত্তমটা দেয়া, দান করা যখন মানুষ করে তখন আল্লাহ কী করেন? আল্লাহও সর্বোত্তম পুরস্কারটা তাকে দেন। কারণ তিনি তা দেখছেন একজন মানুষ সে কী দিচ্ছে এবং কীভাবে দিচ্ছে। আমরা দানের ক্ষেত্রে অসংখ্য হাদীস রয়েছে অসংখ্য বাণী রয়েছে আয়াত রয়েছে।

সূরা বাকারার ২৬১ নম্বর আয়াত- সৎদান এমন একটি শস্যবীজ, যাতে উৎপন্ন হয় সাতটি শিষ প্রতিটি শিষে থাকে শত শস্যদানা। দানের বরকত হচ্ছে যে অন্যান্য কাজের নেকি শুরু হয় ১০ থেকে আর দানের শুরুটাই হচ্ছে সাতশ থেকে। সাতশ গুণ থেকে। ১০ গুণ না সাতশ গুণ সাতশ নেকি থেকে শুরু হয় দান। যখন এটা সৎদান হয়।

১. পাপ মোচন হবে

সূরা বাকারার ২৭১ নম্বর আয়াত হচ্ছে, তোমরা প্রকাশ্যে দান করলে তাও ভালো। আর যদি গোপনে অভাবীকে দাও, তা আরো ভালো। দানের কারণে তোমাদের অনেক পাপমোচন হবে।

আসলে পাপ মোচনের জন্যে যে দান এটারও কোনো বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয় না। বিপদ বালা-মুসিবত দূর করার জন্যে যে দান এটার আসলে কোনো বিকল্প নাই।

সূরা হাদিদের ৭ নম্বর আয়াত হচ্ছে, আল্লাহ ও তার রসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করো এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে অর্থবিত্তের অধিকারী করেছেন, তা থেকে অন্যের জন্যে ব্যয় করো। তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করবে ও অন্যের জন্যে ব্যয় করবে, তাদের জন্যে মহাপুরস্কার রয়েছে।

২. সরাসরি আল্লাহর সাথে বিনিয়োগ যার মুনাফা দেয়া হবে দুইকালেই!

আসলে সৎদান এটা দান কিন্তু এটাকে আপনি আরেক অর্থে বলতে পারেন এটা হচ্ছে সরাসরি আল্লাহর সাথে বিনিয়োগ করা, সৎদান হচ্ছে সরাসরি আল্লাহর সাথে বিনিয়োগ। যার মুনাফা তিনি ইচ্ছেমতো দুনিয়া এবং আখেরাতে দুই জায়গায় দেবেন।

৩. নবীজীর (স) সুন্নত পালন হবে

দানের ব্যাপারে হাদীস শরীফে প্রচুর হাদীস রয়েছে এবং আল্লাহর রসুলকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, কোন দান সর্বোত্তম? তিনি খুব পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, রমজানে দান এটা হচ্ছে সর্বোত্তম দান। এবং যে কারণে নবীজী রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে দান করতেন।

দানের ক্ষেত্রে আমরা মনে রাখব যে শুধু অর্থ দানই কিন্তু দান নয়। যে-কোনো সেবা যে-কোনো ভালো কাজ অন্যের কল্যাণে করা যে-কোনো কাজ হচ্ছে দান সাদাকা। অন্যের কল্যাণে যে-কোনো সেবা যে-কোনো কাজ।

৪. সম্পদ কখনো কমবে না!

হাদীস শরীফে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, দান দ্বারা সম্পদ কমে না। যখন কেউ দান করে তখন তা অভাবীর হাতে পড়ার আগে আল্লাহর হাতে পড়ে। আপনি যার জন্যে দান করছেন সে দান তার কাছে পৌঁছার আগে আল্লাহর হাতে পৌঁছে যায়।

কারণ যখন আপনি সঙ্ঘে দান করেন তখন এটা তার পর্যন্ত যেতে যেতে সময় লাগতে পারে। কিন্তু আপনার সেটা নিয়ে আপনার চিন্তা করার কিছু নাই আপনি যখনই দান করলেন আল্লাহর হাতে পৌঁছে গেল আল্লাহর খাতাতে হিসাবের খাতাতে এটা লেখা হয়ে গেল যে আপনার দান।

৫. বিশ্বাসীর হায়াত বৃদ্ধি হবে, খারাপ মৃত্যু প্রতিহত হবে!

দান বিশ্বাসীর হায়াত বৃদ্ধি করে খারাপ মৃত্যু প্রতিহত করে। পানি যেমন আগুন নিভিয়ে দেয় দান তেমনি পাপ নিভায়। যখনই কোনো গুনাহ করে ফেলেন প্রতিদান হিসেবে দান করে দেবেন। 

৬. গুনাহ নিভে যাবে

পানি যেরকম আগুন নিভিয়ে দেয়, দানও তেমনি পাপমোচন করে গুনাহকে নিভিয়ে দেয়। এবং রমজানের সেবা বা উপকার করা অন্যের দুর্দশা মোচনে এমনকি এতেকাফরত অবস্থায়ও মসজিদ থেকে বেরিয়ে পড়া এটা ১০ বছর এতেকাফের চেয়েও বেশি সওয়াবের।

অর্থাৎ রমজানে অন্যের কল্যাণে কাজ করা, বিধবার কল্যাণে কাজ করা এতিমের কল্যাণে কাজ করা। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা লাগব করার জন্যে কাজ করা সমস্যাগ্রস্ত মানুষের সমস্যা দূর করার জন্যে কাজ করা-এটা সবচেয়ে বেশি সওয়াবের।

দান দয়া নয়, বঞ্চিতের অধিকার

সাদাকা বা দান এটা আসলে দয়া নয়, এটা আসলে বঞ্চিতের অধিকার। এবং সাদাকা বা দান এটা আসলে আপনি বলতে পারেন আরো পরিষ্কারভাবে যে, আল্লাহর কাছে বিনিয়োগ করা সরাসরি বিনিয়োগ করা। সাদাকা বা দান হচ্ছে সরাসরি বিনিয়োগ। এবং এই দান, এই সাদাকা রমজান মাসে দাতার জন্যে হচ্ছে অফুরন্ত কল্যাণের আকর অফুরন্ত কল্যাণের আকর।

ধরুন সঙ্ঘ যে কাজটা করছে তো সঙ্ঘবদ্ধ দানে কল্যাণ এবং বরকত সবসময় অনেক বেশি। সৎদানের শুরু হচ্ছে সাতশ নেকি থেকে সাতশ গুণ। এটাকে রমজানে যে-কোনো কাজের সওয়াব আরো ৭০ গুণ! সাতশ পূরণ ৭০ হলো এবং সঙ্ঘবদ্ধভাবে কোনো কাজের সওয়াব হচ্ছে আরো ৭০ গুণ। তাহলে সাতশ পূরণ ৭০ পূরণ ৭০ অর্থাৎ নেকির পরিমাণ হচ্ছে ৩৪ লক্ষ ৩০ হাজার সওয়াব ৩০ হাজার নেকি। একটা দান থেকে, যেহেতু সঙ্ঘবদ্ধ দান রমজানে দান।

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি