ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

দীর্ঘায়ু হতে চাইলে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৯, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অনেকে বলেন, কতদিন আর বাঁচব? মৃত্যু চিন্তা মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বয়সের সীমা নির্ধারণ করে ফেলি। আর সেই সীমা আমাদের জন্যে বাস্তবতায় পরিণত হয়।

আধুনিক বিজ্ঞান মনে করে, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত না হলে আমাদের প্রত্যেকেই শতায়ু হওয়ার জৈবিক যোগ্যতা  রয়েছে। আর ব্যাপারটা যদি তা-ই হয় তবে মধ্যবয়স শুরু হওয়ার কথা ৬০ থেকে ৬৫ বছর বয়সে। কিন্তু আমাদের আয়ু অনেক কম মনে করি। ৬০ বছর বয়স হলেই জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।

দেখা হলেই একে অন্যকে বলি, আর ক`দিনই বা আছি, এখন একটু শান্তিতে মরতে পারলেই বাঁচি। আর যারা কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন, তারা তো রাতারাতি বৃদ্ধে পরিণত হন। ৪০-এর কোটায় পুরুষ হার্ট-এটাকের আশঙ্কা করেন। বেশির ভাগ লোক ৫০-এর কোঠায় এসে মৃত্যুর প্রস্তুতির জন্য মন দেওয়াকেই শ্রেয় মনে করেন।

আমাদের পারিপার্শ্বিকতা, সাংস্কৃতিক ধ্যানধারণা আমাদের আয়ু সংক্রান্ত প্রত্যাশাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর মনোদৈহিক প্রক্রিয়ার মূল সূত্র হচ্ছে `প্রত্যাশা ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করে`। এখন আপনি যদি আপনার প্রত্যাশাকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আলোকে শুধরে নেন, তাহলেই আপনি আপনার দেহকে বহুলাংশে কালজয়ী করে তুলতে পারবেন।

দীর্ঘ প্রশান্তিময় জীবনের জন্যে, আনন্দময় জীবনের জন্যে ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার পরিবর্তন অত্যাবশ্যক।

দেহকে কালজয়ী করে তুলতে হলে আয়ু ও বয়স সম্পর্কিত কিছু সর্বজনীন ভ্রান্ত ধারণাকে আপনি প্রথমে দূর করতে হবে। কারণ এ ধারণাগুলো আসলেই সত্য নয়। এ ব্যাপারে ভুল ধারণা হচ্ছে, বার্ধ্যকের প্রক্রিয়ায়ই মানুষ মারা যায়। সত্যি কথা হচ্ছে, বার্ধক্যের সঙ্গে সংযুক্ত জ্বরা-ব্যাধিই মৃত্যুর কারণ। বয়স হওয়ার কারণে কেউ মারা যায় না, আর বয়স হলেই ব্যথা-যন্ত্রণা হয় না। যন্ত্রণা আসে জ্বরা-ব্যাধি থেকে। আর এ  জ্বরা-ব্যাধি আসে মন থেকে।

একটি ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে,আয়ু জিনগত -বৈশিষ্ট্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আসলে আপনার পিতামাতা যদি ৮০ বছর বেঁচে থাকেন তাহলে এই জিন-বৈশিষ্ট্য আপনার আয়ুর সাথে গড়ে মাত্র ৩টি বছর যুক্ত করতে পারে। আপনার ধ্যানধারণা, আচরণ-প্রক্রিয়া, খাওয়া-দাওয়া ও কার্যপ্রণালী আপনার আয়ুকে ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত প্রলম্বিত করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি জিনগত-বৈশিষ্ট্যকে সাফল্যজনকভাবে অতিক্রম করতে পারেন।

বয়সের ব্যাপারে একটি ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে, বার্ধক্যের প্রক্রিয়া অপরিবর্তনীয়। প্রকৃতির দিকে তাকালে আপনি দেখবেন, এ ধারণা সত্য নয়। প্রকৃতির মধ্যেই এমন প্রক্রিয়া রয়েছে, যা কোন কোনো প্রাণীকে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। যেমন ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়ান। প্রাণীজগতের দিকে তাকালে দেখবেন, মৌমাছি বয়সকে পিছনের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে।

আর বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, মানুষ বৃদ্ধ হওয়ার শারীরিবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে পাল্টে দিতে পারে। বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষায় দেখা গেছে যে, বার্ধক্য প্রক্রিয়ার চিহ্নগুলো, যেমন, হাড়ের ঘনত্ব,শরীরের তাপমাত্রা,মেটাবলিক রেট,রক্তচাপ, পেশীর শক্তি, শরীরের চর্বির পরিমাণ ও অন্যান্য জিনিস পরিবর্তন করা যায়।

ব্যায়াম,খাদ্যাভ্যাস,নির্মল আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মেডিটেশনের মাধ্যমে এগুলোতে পরিবর্তন আনা যায়।

অবশ্য মেডিটেশন অর্থ শুধু শিথিলায়ন নয়। শিথিলায়ন আমাদের বর্তমান মানসিক চাপ পীড়িত সমাজের উৎকণ্ঠা নিবারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।তবুও বৃহত্তর অর্থে শিথিলায়ন হচ্ছে চেতনার উচ্চস্তরে উত্তরণের প্রথম পদক্ষেপ। চেতনার এই উচ্চস্তরের সঙ্গেই জড়িত রয়েছে অন্তর্দৃষ্টি, সৃজনশীলতা,সুকুমারবৃত্তি ও প্রজ্ঞা।

দীর্ঘ প্রশান্তিময় জীবনের জন্যে, আনন্দময় জীবনের জন্যে ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। তবে এটা হচ্ছে গোটা বিষয়ের একটা অংশ মাত্র। এর অপর অংশ বুঝতে হলে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীরা জগৎকে কিভাবে দেখেন তা জানতে হবে। কোয়ান্টাম মেকানিকস আমাদের বলে যে, আপাতদৃশ্যমান কঠিন বস্তু বা পদার্থ অদৃশ্য সাব-অ্যাটমিক কণা দ্বারা গঠিত। আর একেবারে আদি অবস্থায় এই কণাগুলো হচ্ছে শক্তি বা এনার্জি ও তথ্যের সংমিশ্রণ। তার অর্থ, আমাদের এই দৃশ্যমান জগৎ গঠিত হয়েছে শক্তির অদৃশ্য জগৎ ও তথ্যের সমন্বয়ে।

মনের বেলায়ও এই নিয়ম প্রযোজ্য। যদিও আমরা আমাদের ধারণা, কামনা, বাসনা,প্রবৃত্তি,পছন্দ ও অপছন্দ দেখতে বা ধরতে পারি না তবুও এগুলোর বাস্তবতা কোনো অবস্থায়ই অস্বীকার করা যায় না। আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান জগৎ এগুলো দ্বারাই গঠিত হয়েছে। যদি এই অদৃশ্য জগতের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন তাহলে আপনার দৃশ্যমান স্পর্শগ্রাহ্য জগৎকে পরিবর্তন করতে পারেন। চিন্তা যেমন যুদ্ধ বাধাতে পারে, ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে পারে,ধ্বংস ডেকে আনতে পারে তেমনি চিন্তাই পারে প্রেম, মমতা,শান্তি,সম্প্রীতি ও তারুণ্যময় জীবন গঠন করতে।

কালজয়ী দেহ নির্মাণের জন্যে ডা.দীপক চোপড়া তার `Ageless Body, Timeless mind` গ্রন্থে  উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি হলো :

১.নিজ জীবনের ওপর আত্ম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এর অর্থ অন্যের ওপর ক্ষমতাবান হওয়া নয়।বরং নিজের জীবনের ব্যাপারে স্বায়ত্তশাসন লাভ করা। এটা করার একটা উপায় হচ্ছে অন্যের সমর্থন বা অনুমোদন লাভের প্রয়াস থেকে বিরত থাকা।কারণ অন্যকে খুশি করে অনুমোদন লাভের চেষ্টায় আমরা আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিকে ক্ষয় করে ফেলি।

২.নিজের অন্তর্গত সত্ত্বার প্রতি পূর্ণ আস্থা স্থাপন করা। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে বাইরের কারো ওপর নির্ভর না করা।প্রকৃতি প্রত্যেককেই মনীষা দিয়ে সৃষ্টি করেছে। কিন্তু আপনি যদি সবসময়ই জ্ঞান ও তথ্যের জন্যে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকেন তাহলে আপনার ভেতরের এই মনীষার মৃত্যু ঘটে। আপনার শরীর-মন সবসময়ই বলছে সে কী চায়, আপনি কান পেতে শুনলে দেখবেন সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

৩. সব ব্যাপারেই পারফেকশনিস্ট হতে যাবেন না। খুঁতখুঁতে স্বভাব যত বর্জন করতে পারবেন তত আপনি স্বস্তি পাবেন।দীর্ঘায়ু হতে হলে আপনাকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে শিখতে হবে।

৪.অন্তর্গত লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।অধিকাংশ মানুষই অর্থ, বিত্ত, খ্যাতি, ক্ষমতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষের বন্দী হয়ে থাকে। বরং জীবনকে শান্ত ও মহিমান্বিত করার চেষ্টা করুন। কাজ করুন, হাসুন, মানুষকে ভালবাসুন। প্রকৃতির নেপথ্য ছন্দে নিজেকে ছন্দায়িত করুন। দেখবেন বয়স বাড়লেও তারুণ্য আপনাকে ঘিরে থাকবে।

কেআই/ এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি