ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪

নতুন ভবনে নতুন শুরুর অপেক্ষায় আ. লীগ

প্রকাশিত : ১৮:১৯, ২৯ মে ২০১৮

এখন শুধু অপেক্ষার পালা। নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। বলা হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শেষ হলো নির্মাণযজ্ঞ। হ্যাঁ, বলছি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন কার্যালয়ের কথা।

২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের নতুন এ কার্যালয় ভবনটি উদ্বোধন হবে আগামী ২৩ জুন। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটিই বেছে নেওয়া হয়েছে কার্যালয় উদ্বোধনের ক্ষণ হিসেবে।  সবকিছু ঠিক থাকলে ওইদিন-ই দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন কার্যালয় উদ্বোধন করবেন। ওইদিন নতুন আঙ্গিকে শুরু হবে পথচলা।

রোজ গার্ডেন থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ

গুটি কয়েক সদস্য নিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শামছুল হকের নেতৃত্বে উপমহাদেশের প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু করেছিল রোজ গার্ডেনে। কালের বিবর্তনে সেই আওয়ামী লীগ আজ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আন্দোলন- সংগ্রাম-ঐতিহ্যে দলটি পৌঁছেছে ইতিহাসের অনন্য এক উচ্চতায়। সময়ের ব্যবধানে প্রয়োজনের তাগিদে দলটিকে কার্যালয় পরিবর্তন করতে হয়েছে বেশ কয়েকবার।

রোজ গার্ডেন থেকে ১৯৫৩ সালে ৯ কানকুন লেনে, ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকায় ৫৬ সিমসন রোডে, ১৯৬৪ সালে ৯১ নবাবপুর রোডে, এরপরে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে, পুরানা পল্টনে কার্যালয় স্থানান্তরিত হয়ে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলেছিল অনেকদিন। পরে পুরানা পল্টনে ছিল দলটির কার্যালয়। এরপর যায় সার্কিট হাউস রোডে।

১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের হাল ধরলে নানা বিবেচনায় আওয়ামী লীগের ঠিকানা হয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। সেটাও আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, গণমুখী রাজনীতি, সংসদীয় নির্বাচন, দলটির ক্ষমতায় যাওয়া, সারাদেশে নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করাসহ সব পরিচালিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের এই কার্যালয় থেকেই।

শেখ হাসিনা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন এই বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচালনা করেই। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দলটির পরিসর বেড়েছে অনেক। সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম এই ছোট্ট কার্যালয় থেকে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে উঠেছিল শেষ কিছুদিন। সেই চিন্তা থেকেই ২০১১ সালে নতুন কার্যালয়ের পরিকল্পনা মাথায় আসে আওয়ামী লীগের।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে কার্যালয়ের নতুন ভবনের নকশার অনুমোদন দেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে খুব দ্রুত গতিতে কাজ চলছিল। বর্তমানে ভবনের কাজ শেষের দিকে। এটির তদারকির মূল দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি জানান,  নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ হয়েছে। এটা বড় আনন্দের ব্যাপার। নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ চলার সময় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালিত হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে।

এছাড়া দাপ্তরিক বিষয়, আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন, দলীয় নেতাদের জরুরি সভা পরিচালিত হতো ধানমন্ডি ৩/এ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয় থেকে।

কী থাকছে নতুন কার্যালয়ে

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ ও প্রাচীন দল বলেই নয়, টানা সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার রেকর্ডও এখন আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, টানা দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থেকে বিপুল উন্নয়ন সাধন করায় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়েছে। পাশাপাশি গত দুই তিন বছরে সংগঠনও অনেকটা শক্তিশালী হয়েছে। সারাদেশে বেড়েছে কর্মী-সমর্থক। এসব কথা মাথা রেখেই আওয়ামী লীগের নতুন কার্যালয়টি নির্মিত হয়েছে বৃহৎ পরিসরে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নতুন কার্যালয়টি যেখানে নির্মিত হয়েছে সেই জমিটি ইতোমধ্যে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে সরকারের কাছ থেকে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এজন্য বিদ্যুৎ সহ নানা বকেয়া বিল মিলিয়ে সরকারকে দিতে হয়েছে ১ কোটি টাকা। ৮ কাঠা জায়গায় নির্মিত ভবনটি মাটির নিচে (গ্রাউন্ড ফ্লোর) একতলাসহ দশতলা ভবনের কাজ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত ভবনটি পুরোটাই থাকবে ওয়াইফাই এর আওতায়।

নান্দনিক নকশায় নির্মিত ভবনটিতে থাকছে কয়েকটি কনফারেন্স হল। রয়েছে বেশ কয়েকটি সেমিনার রুম। দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য রাখা হয়েছে সুপরিসর কক্ষ। এছাড়া ডিজিটাল লাইব্রেরি, ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিক লাউঞ্জ, ডরমেটরি ও ক্যান্টিন থাকছে। উদ্বোধনের পর প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন নতুন বিষয় সংযোজন হতে পারে বলে জানালেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

ভবনটির ছয় বা সাত তলা পর্যন্ত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলালীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অফিস থাকছে।

যেভাবে নির্মিত হলো

নতুন কার্যালয় দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেও প্রথমত ২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ভবনের প্রস্তাব উঠে আসে। সরকারি বিধি অনুযায়ী নানা কার্যক্রমের পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভবন নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কাজে হাত দেওয়া হয়। লক্ষ্য ছিল দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার। সেই হিসেবে আগামী সেপ্টেম্বরে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার চার মাস আগেই শেষ হলো ভবন নির্মাণের। ভবন নির্মাণের নতুন কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভবন নির্মাণ করতে কোনো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠাণকে কাজ দেওয়া হয়নি। পূর্তমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ভবনটি নির্মিত হয়।

দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবন নির্মাণে কোন ধরনের দান-অনুদান গ্রহণ করেনি দল। তবে ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে গঠন করা তহবিলে দলের নেতা-কর্মী শুভাকাঙক্ষীদের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল। তবে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। ছিল না নির্দিষ্ট কোন বাজেট। যখন যা প্রয়োজন হয়েছে তাই খরচ হয়েছে বলে জানালেন তিনি।

দলটির নেতারা মনে করছেন নতুন দৃষ্টিনন্দন ও অত্যাধুনিক ভবনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে উৎসাহ পাবে দলটির নেতা কর্মীরা। ভবন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনের আগে দলের সকল নেতাকর্মীদের জন্য নতুন কার্যালয় একটি উপহার। নতুন করেই শুরু হবে পথচলা। আশা করছি নতুন ভবন আমাদের জন্য নতুন বিজয় বয়ে আনবে।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি