ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নন্দিত চিত্রশিল্পী জামালপুরের নূরউদ্দিন (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫৩, ৬ জানুয়ারি ২০২১

দেখা থেকে শেখা আর গল্প শুনে কল্পনা- শিল্পসৃষ্টিতে পুঁজি তাঁর এটুকুই। চিত্রকরের রঙতুলিতে প্রোজ্জ্বল গ্রামজীবন আর পুরনো ঢাকার ঘিঞ্জি অবয়ব। বলছিলাম, স্বশিক্ষায় শিক্ষিত চিত্রশিল্পী নূরউদ্দিনের কথা। জামালপুরের নিভৃত গ্রামের নূরউদ্দিনের চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে রাজধানীর গ্যালারিতে।

রাতভর ঝিঁঝিঁর ডাক আর দিনভর ঝিনাই নদীতে পালতোলা নৌকা দেখেছেন নূরউদ্দিন আহম্মেদ লাভলু। সরিষাবাড়ির চরহরিপুর গাঁয়ের সে স্মৃতি এখনও ভোলেননি। ঢাকায় একাধিক আর্ট গ্যালারিতে চাকরির সুবাদে পরিচয় রঙ-তুলির সঙ্গে। ক্রমশ: শিল্পী হয়ে ওঠেন এই নিভৃতচারী।

শিল্পী নূরউদ্দিন বলেন, ১৯৯০ সালে ঢাকায় আসার পর কাজে যোগ দিয়ে বিভিন্ন আর্টিস্টের ছবি দেখা, বিভিন্ন আর্টিস্টের ফ্রেমিং করা- এ থেকেই ধীরে ধীরে ভাবতে লাগলাম যে, আসলেই ছবি তো মানুষে আঁকে আমি কেন নয়। ২০-২৫টা ছবি একসঙ্গে করে অনেক কঠিন। কারণ দুই-তিনটা হলেই গ্যালারিতে নিয়ে যাই, দেখা যায় যে আরও দুইটা করতে করতে ওখান থেকে দুইটা বিক্রি হয়ে গেছে। আমি ওয়াটার কালার করতাম, তারপর এ্যাকরেলিক বের হলো- এটিও চেষ্টা করলাম। পাশাপাশি ওয়েল কালারটা আমাকে বেশি আকর্ষণ করতে লাগলো। 

নূরউদ্দিন আরও জানালেন, মূলত আমার ছবির ক্রেতারা হলো দেশের শিল্পপতিরা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী-নৌবাহিনী এবং বিদেশীরা। সন্তানকে যেমন তার বাবা-মা লালন-পালন করে একজন আর্টিস্টও তার শিল্পসত্তাকে লালন-পালন করে। আর্টিস্ট হতে হলে তাকে সুন্দর হতে হবে, সুন্দর মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে। সে যেই হোক না কেন, হোক অ্যামেচার, হোক পাশ করা বা আর্ট কলেজ থেকে ডিগ্রি নেয়া। 

রাজধানীর একাধিক আর্ট গ্যালারির সঙ্গে একে একে বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। সেখানেই ছবি বিক্রি শুরু ১৯৯৩ সালে। এখন নিজেই গুলশান-২ এর ডিসিসি মার্কেটে গড়ে তুলেছেন ডেকোরিয়াম আর ই-আর্ট গ্যালারি।

ডেকোরিয়াম আর্ট গ্যালারি সত্ত্বাধিকারী শিল্পী নূরউদ্দিন আহম্মেদ লাভলু বলেন, সাতটা কাজের মধ্যে পাঁচটি বিক্রি হয়ে গেছে। সে সময় কাজগুলোর দাম খুবই কম ছিল, মাত্র সাতশ’ টাকা মূল্য ছিল। এর মধ্যে ৭০ ভাগ আমি পেতাম, বাকি ৩০ শতাংশ পেতো গ্যালারি। এভাবেই বিদেশিরা কাজগুলো পছন্দ করে, তারাই বেশি ক্রয় করে। পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে এগুতে থাকলাম। প্রতিনিয়ত বিক্রির সাথে সাথে আমার উৎসাহ ও চেষ্টা আরও বেড়ে গেল। চাকরিতে যতটুকু বেতন পাই তারচেয়ে ছবি আঁকাতে বেশি টাকা আসে। তখন মনে মনে ভাবতে থাকি যে, আমি সম্পূর্ণ সময়টাই ছবি আঁকার কাজে লাগাবো।

চিত্রশিল্পীরা বলছেন, নূরউদ্দিনের নিষ্ঠা আর নান্দনিকতা অন্য আঁকিয়েদের রসদ জোগাচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ আর্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ শিল্পী সমীরণ চৌধুরী বলেন, সে যখন কাজ করে তখন কিছু না জানতে চাইলেও আমি বলে দিতাম। শিক্ষকদের যে ধর্ম, সেটাই কর্মের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতাম। মোটামুটিভাবে সে অনেক দূর এগিয়েছে, আরও এগিয়ে যাবে। ফ্রেম করতে গেলে কিছু কাগজ, কাঠ, রং বেঁচে যায়। ওই এক্সট্রা রং দিয়েই একটা কাগজের উপর অ্যাপ্লাই করে করে সে টেস্ট পেয়ে যেতো।

গুলশান রিগ্যাল হেরিটেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদনান হোসেন বলেন, সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য ধাপে ধাপে অনেকগুলো ধাপ পেরুতে হয় সেটা তো তার নাই। কিন্তু সে ট্যালেন্টেট। সেখান থেকেই তার শুরু।

বনানী সিজান আর্ট গ্যালারির তত্ত্বাবধায়ক সাইদুর রহমান বলেন, দেখে দেখে ওখান থেকে উৎসাহ-উদ্দিপনা পাওয়া। তারপর কাজের ফাঁকে ফাঁকে উনি চেষ্টা করতো, চেষ্টা করে করে আজকে এই পর্যায়ে চলে এসেছে।

সময়ের ক্রান্তিকাল ছবির ভাষা দিয়ে উৎরাতে চান শিল্পী নূরউদ্দিন।

শিল্পী নূরউদ্দিন লাভলু বলেন, এক জীবনে মানুষ কতটাই বা পায়, চাওয়ার শেষ নাই। কিন্তু আমি যেটা চাই, তাহলো প্রতিনিয়ত ভালো কিছু করার।

শিল্পী নূরউদ্দিনের স্ত্রী নাসরিন আক্তার কিরণ বলেন, কালার বানিয়ে দেই, রঙ-তুলি রেখে যায় তা ধুয়ে রাখি। তার যতটুকু সহযোগিতা দরকার তা আমি সংসারের কাজ পরে করে দেই। 

জামালপুরের সরিষাবাড়ির নূরউদ্দিন ছোটবেলায় দেখেছেন নদীর ঢেউ, আকাশের রঙ। আর উপলব্ধি করেছেন গাছের পাতার রিনিঝিনি শব্দ। সেখান থেকে চাকরি সুবাদে ঢাকায় আসা, কাজের সুবাদে পরিচয় হয় আর্ট গ্যালারির বিভিন্ন শিল্পীদের সঙ্গে। অতপর তিনি এঁকে চলেছেন নগর সভ্যতার কঠিন সংগ্রামের সঙ্গে গ্রামের সারল্যপনার এক অবয়ব।
ভিডিও :


এএইচ/এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি