ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘নারীকে এখনও ভোগের উপকরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে’

কাজী ইফতেখারুল আলম

প্রকাশিত : ২০:০৩, ৮ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৩৬, ২৯ জুলাই ২০২৩

ফারহানা এ রহমান

ফারহানা এ রহমান

নারী ভালোবাসা ও সৌন্দর্যবোধের অনুপম প্রতীক। নারী মানেই মা, ভগিনী, জায়া। একজন পুরুষ পরিবেশগতভাবে যে আনুকূল্য পায় সেই তুলনায় একজন নারীর সুযোগ সুবিধা খুবই নগণ্য। সমাজ পরিবার-রাষ্ট্রের মধ্যে নারী-পুরুষের মধ্যে রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। তবুও দিন শেষে একজন পুরুষকে তাঁর কাঙ্ক্ষিত নারীর কাছেই ফিরতে হয়। তাঁর কাছেই পুরুষ আশ্রয় নেয়। আর দিন শেষে পুরুষকে ঘরে ফেরাতে নারীর অনন্য অবদান রয়েছে।

আবার অনেক ক্ষেত্রে একজন নারীই তাঁর মাতৃত্বের জায়গা থেকে ছেলে সন্তানের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েন। এজন্য যে সব সময় পুরুষ-ই দায়ী তা সত্যি নয়। একজন মায়ের কাছে মেয়ের তুলনায় ছেলেরা বাড়তি অগ্রাধিকার পায়। এরমধ্যেও এক ধরণের ভালোবাসার বৈষম্য সৃষ্টি হয় । বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান লেখক হুমায়ূন আজাদ এর লেখায় সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্যের চিত্র এভাবেই খুঁজে পাওয়া যায়।

‘ছেলেটি তার বিছানা গুছিয়ে না রাখলে মা খুশি হয়, দেখতে পায় একটি পুরুষের জন্ম হচ্ছে; কিন্তু মেয়েটি বিছানা না গোছালে একটি নারীর মৃত্যু দেখে মা আতংকিত হয়ে পড়ে ।’

পুরুষের ক্লান্তি-শ্রম ঘামের যথার্থ মূল্যায়ন কেবল একজন নারীই দিতে পারেন। অথচ পুরুষের স্বার্থপরতার কারণে নারীকে মানুষ হিসেবে নয়, যেন ভোগের আর ব্যবহারের উপকরণ মনে করা হয় এখনও। নারীকে যদি পুরুষের মত সমান চোখে দেখা হত তবে বিশ্বব্যাপী নারীর অধিকার নিয়ে কথা উঠত না।বিশেষ করে নারী দিবসেরও প্রয়োজন হতো না। নারীরা ঘরে বাইরে অবহেলিত বলেই তাঁর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ দিবস অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এমনটিই মনে করেন ইউওয়াই সিস্টেম কোম্পানি লিমিটেডের কর্ণধার ফারহানা এ রহমান

নারীর প্রতি পুরুষশাসিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রাত্যাহিক সমস্যা থেকে নারীর প্রগতি, এবং জাগরণের বিষয় নিয়ে নারীর অধিকার, কর্মপরিবেশ, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী সম্পর্কে পারিপার্শ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে তিনি একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। আইটি উদ্যোক্তাদের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বেসিসের এ ভাইস প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ নারী সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?

ফারহানা এ রহমানঃ মূলত নারীকে সামনে নিয়ে আসার জন্য আমরা নারী দিবস উদযাপন করি । এই দিবসের অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। নারীর অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করবার জন্য এই রকম একটি দিনের দরকার ছিল। নারী দিবসে নারীকে আলাদা করে দেখার প্রয়োজন নেই। যেহেতু নারীরা সমাজে পুরুষের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে আছে, সেই জন্য নারী দিবসের মাধ্যমে নারীকে বাঁধা জয় করার একটা অনুপ্রেরণা দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সে তাঁর মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হতে পারবে বলে মনে করি। সমাজে সফল নারীর সংখ্যা হাতেগুনা। সুতরাং নারী দিবসে সবার প্রতি একটাই চাওয়া সেটা হল সমাজে নারী পুরুষের মধ্যে যেন বৈষম্য না হয় এই ব্যাপারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে কোন সমস্যাকে দায়ী করছেন ? 

ফারহানা এ রহমানঃ  নারীদের  প্রতিষ্ঠিত হওয়া অবশ্যই কঠিন। আমি নিজেকে প্রমাণ করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। কারণ আমি নারী। আর নারী বলেই এই সমস্যাগুলি মেনে নিতে হয়েছে। আমার উঠে আসার গল্পটা ভিন্ন নয়, আমার মতো এই রকম সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশে বহু নারী রয়েছে। তাঁদেরও দু`চোখ ভরা স্বপ্ন আছে, কিন্তু সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ জানা নেই।  আমাদের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক যেহেতু নারী এদের একটা বড় অংশ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছে। নারীদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মক্ষেত্র নেই বলেই মূলত নারীরা পুরুষের মতো সমানতালে  উঠে আসতে পারছে না। এই ক্ষেত্রে পারিবারিক পরিবেশের সঙ্গে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিটাকে প্রধান বাঁধা হিসেবে দেখছি। সাহসিকতার মাধ্যমে নারীরা সফল হতে পারবে আর না হয় এরা বোঝা হয়ে থাকবে।

 একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে কি করা উচিত?

ফারহানা এ রহমানঃ নারী বলেই তো কেউ বিশেষ সুবিধা পাবে না। সব নারীকেই যোগ্যতা অর্জন করেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর যেহেতু নারী তাই এক্ষেত্রে তাঁদের নিষ্ক্রিয় ভুমিকা দেশ ও সমাজকে পিছিয়ে দেয়। যদি তারা অর্থনৈতিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করে তবে দেশের উন্নয়ন এবং গ্রগতিতে রাষ্ট্র এগিয়ে যায়। আমি যে সেক্টরে কাজ করি সেখানে তো নারীর অংশগ্রহণ একেবারেই সীমিত। একসময় আমি বেসিসের যখন ডিরেক্টর ছিলাম তখন যেকোনো ভাতে ঘর ভর্তি পুরুষ দেখতাম, এই জায়গাতে নারীর আরও উঠে আসা দরকার। সর্বক্ষেত্রে নারীর পদচারনা বাড়ানো গেলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হবে। আর এজন্য নারীদের রোল মডেল যারা তাঁদেরকে আরও বেশি এগিয়ে আসতে হবে। অবশ্য আগের চেয়ে  নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। আমার মনে হয় শিক্ষিত নারীরা আইটি খাতে এলে ভালো করবেন। এই খাতে এখন প্রচুর জনবল প্রয়োজন।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আইটি খাতে কাজ করতে গিয়ে আপনি কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন কিনা?

ফারহানা এ রহমানঃ দেখুন, একটা মেয়েদের কেউ কাজে নিতে চাইতো না। এই জন্য নারীদেরকে সংগ্রাম করে  আজকের এই অবস্থানে আসতে হয়েছে। আইটি খাতে কাজ করতে গিয়ে আমি কোনো সহযোগিতা পাইনি।আমি নারী বলে ব্যাংক আমাকে লোন দেয়নি। সবাই বলতো ওনি কয়েকদিন পরে এই কাজে  আর থাকবেন না। মেয়েদের সম্পর্কে পুরুষের ধারণা মেয়েরা কোনো কাজ ভালো মত করতে পারে না। আমার পারিবারিক সাপোর্ট থাকার কারণে আমি এই কাজে সফলতা পেয়েছি। এরপরেও আমি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারিনি। আমার ছেলেটা প্রতিবন্ধি। এই রকম একটি বাচ্চা নিয়ে আমার উঠে আসতে হয়েছে। যেহেতু ওকে সব সময় নজরে রাখতে হয় তাই তাকেও ছোট বেলা থেকে আইটি কাজে পারদর্শি করে তুলেছি। সেও এখন অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখছে। আমাকে সহযোগিতা করছে। 

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : আমাদের দেশে আইটি খাতের সুযোগ-সুবিধা কেমন? তরুণরা এ সুযোগটা কেমন কাজে লাগাতে পারছে?

ফারহানা এ রহমান : আমাদের দেশে আইটি খাত এখন অনেক দূর এগিয়েছে। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও মানুষ জানতো না, প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘরে বসেই উপার্জন করা যায়। দেশে এবং দেশের বাইরে এ সেক্টরে কাজের সুযোগ বেড়েছে। এমনকি কেউ চাকরি করতে না চাইলেও, ইচ্ছে থাকলে উদ্যোক্তা হতে পারেন। আমাদের দেশ থেকে ট্রেনিং নিয়ে এখন অনেকেই বিদেশে বড় বড় ফার্মে কাজ করছে। দেশে অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার আইটি ফার্ম রয়েছে, যারা সফটওয়্যার তৈরি, ওয়েব ডিজাইন, ই-কমার্সের কাজ করে বছরে কোটি ডলার আয় করার সামর্থ্য রাখে। এছাড়া সরকারের সব মন্ত্রণালয় এখন অটোমেটেড হচ্ছে। কাগজ-কলম ছেড়ে অটোমেশনের দিকে যাচ্ছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : আইটি খাতে এত সুযোগ থাকার পরও আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারছি না কেন?

ফারহানা এ রহমান : আমাদের দেশে একজন সিইওকেই (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) সব কাজ করতে হয়। ক্রেতা নিয়ে আসা, গুণগত পণ্য নিশ্চিত করা, বিদেশে বাজার তৈরি করা, কর্মী পরিচালনা করা-সবকিছু একজনকেই করতে হয়। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে একজন সিইউকে এসব কাজ করতে হয় না। এদের ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক শক্তিশালী। যার যার কাজ প্রত্যেকেই সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেন তারা। অথচ আমাদের দেশে দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে না। যারা তৈরি হচ্ছেন, তাদের কেউ কেউ বিদেশে চলে যাচ্ছেন, না হয় উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তবে আমি মনে করি এ খাতে আমাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দক্ষ জনবল তৈরি না হওয়া।

এ খাতে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো আইটি উদ্যোক্তাদের কোনো ধরণের সহযোগিতা করে না। এ বিষয়ে দেশে কোনো নীতিমালা নেই দাবি করে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো এ খাতে বিনিয়োগ করে না। অথচ গার্মেন্টস, ফার্মিং-এ খাতগুলোতে ব্যাংকগুলো সহজেই বিনিয়োগ করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা করে নিতে হলে অবশ্যই ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : আপনাদের মতো আইটি উদ্যোক্তারা তাঁদের যোগ্যতা দেখিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বড় বড় কাজ নিয়ে আসছেন। বিপরীতে আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বাইরের ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন, বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

ফারহানা এ রহমান : আমাদের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে সফটওয়্যার আমদানি করছে। কখনো কখনো বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে এসে সফটওয়্যার তৈরি করছে। এতে প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক ভোক্তা হয়ে পড়েছি। প্রডিউসার হতে হলে আমাদের প্রথমেই নজর দিতে হবে দক্ষ জনশক্তি তৈরির উপর। দেশের আইটি খাতে দক্ষ জনবল যত বাড়বে, আমাদের উৎপাদন ক্ষমতাও তত বাড়বে। একই সঙ্গে বিশ্ব দরবারে দেশীয় পণ্যের গুণাগুণ তুলে ধরতে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন।

অন্যদিকে দেশীয় বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। স্বজাত্যবোধ তৈরি হতে হবে। দেশীয় পণ্যের উপর শতভাগ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। বিদেশি পণ্যই সেরা এই বোধ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবেই দেশের আইটি খাত অনেক দূর এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়গুলোর বিদেশমুখী প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশ থেকে সফটওয়্যার তৈরির একটি চুক্তি করলেও সেটি আলোর মুখ দেখছে না। তাই দেশি উদ্যোক্তাদের এ ধরণের সুযোগ দেওয়া হলে, এ খাতে আরো বেশি প্রাণ সঞ্চার হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারের কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

ফারহানা এ রহমান : দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে না। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। সবাইকে গতানুগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের একটা অংশকে অবশ্যই কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। সরকার সে লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে পারলে অবশ্যই জনশক্তি বাড়বে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : আইটি খাত সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে সরকারের কাছে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি কি আশা করেন?

ফারহানা এ রহমান : দেখুন, এদেশে আইটি খাত যতটুকু বিকাশ ঘটেছে, তার মূলে রয়েছে প্রাইভেট সেক্টর। বাজারে প্রতিনিয়তই আইটি খাতে নতুনত্ব আসছে। তার সঙ্গে আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের অভাবে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না। তার কারণ আমাদের সেক্টরকে অন্যান্য সেক্টরের মতো ভ্যালুয়েশন করা হচ্ছে না। যার কারণে ব্যাংকগুলো আমাদেরকে লোন দিতে চায় না। আইটি খাতের উন্নয়নে সরকারের প্রথম যে কাজটা করতে হবে, তাহলো কিভাবে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো যায় সে বিষয়গুলো সরকারকে আরো আন্তরিকভাবে ভাবতে হবে। যাতে আমাদের মতো উদ্যোক্তারা যোগ্যতা থাকা সত্বেও শুধু বিনিয়োগের অভাবে হারিয়ে না যায়।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আপনি কতটুকু আশাবাদী?

ফারহানা এ রহমান : ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান আসার পর সবাই এখাতে ঝাপিয়ে পড়ছে। শুধু ঝাপিয়ে পড়লেই হবে না, আমাদের ফোকাস থাকতে হবে, গোল থাকতে হবে, টার্গেট থাকতে হবে। সেটা অর্জন করার জন্য যদি কৌশল পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তাও করতে হবে। কিন্তু টার্গেট পরিবর্তন করা যাবে না। এ লক্ষ্যে আমাদের জনবলকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশ থেকে যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তারা পেশাগতভাবে দক্ষ নন। কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা যাবে না, তবেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : সম্প্রতি দেখা গেছে, তরুণরা ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে? এই ইন্টারনেটকেই কাজে লাগিয়ে কিভাবে আয় করা সম্ভব?

ফারহান এ রহমান : ব্রডব্যান্ডের তুলনায় মোবাইল ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা বেশি হওয়ায় এ সমস্যাটা হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা মোবাইলে ফেসবুকিং, ইউটিউবিং আর গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। যত দ্রুত ব্রডব্যান্ড প্রসারিত হবে ততদ্রুত ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে ছেলে-মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম হবে। তবে আমাদের দেশে গ্রামে-গঞ্জে এখনো ইন্টারনেট সেবা পৌঁছোয়নি। এ সেবা পৌঁছালে প্রান্তিক পর্যায়েও শিক্ষার্থীরা আউটসোর্সিংয়ে যুক্ত হবে। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : আইটি খাতে আসতে চায়, এমন শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি? আন্তর্জাতিক মানের কর্মী হয়ে উঠতে হলে তাদের কোন দিকটির প্রতি নজর দিতে হবে?

ফারহানা এ রহমান : আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা ভাসা ভাসা জ্ঞান রাখে। কিন্তু ভাসা ভাসা জ্ঞান দিয়ে আইটি সেক্টরে ভালো করা সম্ভব নয়। তাকে যে কোনো একটি বিষয়ের উপর জোর দিতে হবে এবং ঐ বিষয়ে এক্সপার্ট হতে হবে। যেমন কেউ ওয়েব ডিজাইনিং করলে, তাকে অবশ্যই ওয়েব ডিজাইনিংয়ের খুঁটিনাটি সবই জানতে হবে। কেউ গ্রাফিক্স ডিজাইনিং করলে তাকে অবশ্যই গ্রাফিক্স ডিজাইনের সব বিষয়ে জানতে হবে। আমি সব পারি এই ধারণা থেকে তরুণদের বেরিয়ে আসতে হবে। একটা কাজ আমি ১০০ ভাগ পারি, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : আইটি বিষয়ে পড়ালেখা না করেও কি কেউ এখানে কাজের সুযোগ পেতে পারে?

ফারহানা এ রহমান : আইটি বিষয়ে পড়ালেখা না করেও নিঃসন্দেহে এখানে ভালো করার সুযোগ আছে, তার উদাহরণ আমি নিজেই। তবে তার আগে তাকে ট্রেনিং নিতে হবে। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার অনেকগুলো ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে।

পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা আইটি বিষয়ে ট্রেইনিং দিচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে যে কোনো শিক্ষার্থী এখানে কাজের সুযোগ পেতে পারেন। কারা আপনার এখানে কাজ করছে এমন আরেকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিপ্লোমা পাশ কিংবা আইডিবি থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ছেলে-মেয়েরা এখানে বেশি আসছে। এছাড়া কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীরাতো আসছেই।

এমন অনেক কর্মী আছেন যারা দুই থেকে তিন বছর এখানে চাকরি করে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। তবে তার আগে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য স্থির করতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফারহানা এ রহমান : একুশে টেলিভিশন অনলাইন কে ধন্যবাদ।

আরকে// এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি