ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

নিজেকে প্রমাণ করুন!

মানিক মুনতাসির

প্রকাশিত : ১৮:৫১, ২১ নভেম্বর ২০২২

হলিউড তারকা মরগ্যান ফ্রিম্যানের সঙ্গে গনিম-আল-মুফতাহ্

হলিউড তারকা মরগ্যান ফ্রিম্যানের সঙ্গে গনিম-আল-মুফতাহ্

কাতার বিশ্বকাপের উদ্বোধন হলো এক শারীরিক প্রতিবন্ধীর হাত ধরে। আপনার জন্ম যদি হয় রাজা কিংবা ধনকুবেরের ঘরে, আর সেই সম্পদে যদি হন কোটিপতি, কি লাভ তাতে? আবার শরীরের উচ্চতা যদি হয় সাড়ে ছয় ফুট, লাফিয়ে চলেন ২৫ ফুট! তাতেই বা অহংকার কিসের? 

বরং অভাবীর ঘরে জন্ম নিয়ে নিজেকে লাখপতি করুন, আর তিন ফুট উচ্চতা নিয়ে ১৫ ফুট লাফিয়ে নিজেকে প্রমাণ করুন যে, আপনি আসলে পারেন! যেমন- এ সময়ের সবচেয়ে সার্থক বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং আর গনিম আল মুফতাহ। 

হকিং অবশ্য বেঁচে নেই। তবে অঙ্গহানি নিয়ে জন্মেও নিজেকে প্রমাণ করা যায়। সেটাও এবার দেখিয়ে দিল কাতারের গনিম-আল-মুফতাহ্। ছবির এই যুবকের বয়স মাত্র ২০ বছর। তার চেয়েও বড় কথা- তিনি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। কোমরের নিচ থেকে শরীরের অর্ধেক অংশই নাই তার।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বলছে, এই মুহূর্তে কাতারের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত এবং বিখ্যাত একজন ব্যক্তি তিনি। কারণ তার হাত ধরেই বেজে উঠলো ফিফা বিশ্বকাপ-২০২২ এর বাঁশি। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আসরের উদ্বোধন করলেন গনিম-আল-মুফতাহ্। আল বাইয়াত ষ্টেডিয়ামের এই অনুষ্ঠান উপভোগ করলো গোটা বিশ্বের ফুটবল প্রেমীরা।

"গনিম-আল-মুফতাহ্"-এর শরীরের নিচের অংশ নেই, জন্মের আগেই দুটো পা হারিয়ে ফেলেন তিনি। ঠিক সেটাও নয়, আসলে মায়ের পেট থেকে পৃথিবীতে আসেন অর্ধেক শরীর নিয়েই। "কোডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম" রোগে আক্রান্ত গনিমের শরীরের নিম্নাংশ না থাকা সত্ত্বেও তিনি গোটা কাতার তথা আরব বিশ্বের একজন রোল মডেল। আরবের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে তার ভক্ত ও সমর্থক।

তিনি একজন বিশ্বখ্যাত মোটিভেশনাল স্পীকার। তার বক্তব্যের মাধ্যমে উজ্জীবিত, বর্ণময় হয়ে ওঠে হাজারও বর্ণহীন জীবন।

গনিম যখন মাতৃগর্ভে, তখনই আলট্রা-সাউন্ড মেশিনে ধরা পড়ে তার শরীরের অবিকশিত অংশ। ডাক্তার গর্ভপাতের পরামর্শ দেন। কিন্তু গনিমের মা-বাবা এই পরামর্শ গ্রহণ করেননি। কারণ ইসলামের বিধান অনুযায়ী, গর্ভপাত হলো চূড়ান্ত অপরাধ।

মাতা "ইমান-উল-আবদেলি" এবং পিতা "মুহাম্মদ-আল-মুফতাহ্" এটাকে মহান আল্লাহর সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নিয়ে বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দিলেন। মাতা ইমান-উল-আবদেলি পিতার উদ্দেশ্যে বলেন, "আমি হবো সন্তানের বাম পা, আর তুমি হবে তার ডান পা। আমরা দু’জনে সন্তানকে কখনো নিম্নাংশের অভাব টের পেতে দেবো না।"

২০০২ সালের ৫মে পৃথিবীর আলো দেখেন গনিম। কোডাল রিগ্রেশন সিনড্রোমকে সঙ্গী করেই জন্ম নেন তিনি। শিশুকাল থেকেই পদে পদে সামাজিক বঞ্চনার শিকার হয়ে পড়েন গনিম। স্কুল, খেলার মাঠসহ বিভিন্ন জায়গায় তাকে অপমানিত হতে হয়। 

তবে তিনি এসবের তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে যেতেন নিজ পথে; একেবারে নিজস্ব ছন্দে। বন্ধুদের বোঝাতেন- তার অসম্পূর্ণ শরীরের জন্য তিনি মোটেও দায়ী নন। আল্লাহ তাকে যে পরিমাণ অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্রদান করে পাঠিয়েছেন, এর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। বর্তমানে মোটিভেশনাল স্পীকার হিসেবে তিনি আরব বিশ্বে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। 

এই অর্ধেক শরীরের মানুষটাই আজ বিশ্ব দরবারে নিজের পরিচিতি তুলে ধরলেন। তিনি প্রমাণ করে দিলেন যে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সাফল্যের পথে কোনো অন্তঃরায় হয়ে উঠতে পারে না। প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর পারিপার্শ্বিক সহযোগিতাই মানুষকে অদম্য করে তোলে। 

আপনার আশপাশে এমন শারীরিক কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধী কেউ থাকলে তাকে সহায়তা করুন। সাহস দিন। তার মধ্যে যে বিশেষত্ত্ব আল্লাহ পাক দিয়েছেন তার প্রস্ফুটনে সহায়তা করুন।

লেখক- সাংবাদিক।

এনএস//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি