ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রবীণরা ছাড় দেন, ছেড়ে দেননা!

মুসফিকা নাজনিন

প্রকাশিত : ১৪:৫৬, ১ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ১৫:০৪, ১ অক্টোবর ২০১৯

বাবা কখনও বৃদ্ধ হতে চাইতেন না। ৭৫ বছর বয়সেও মনের দিক থেকে তিনি ছিলেন সবুজ, তরুণ। দেশালের ডিপ নীল গেঞ্জি পরে আমাকে বললেন, ‘মা, কেমন লাগছে বলোতো?’

অধ্যাপক কবীর চৌধুরী কিন্তু লাল শার্ট পরেন। আমি বললাম, ঠিক আছে। তোমার জন্য আরও নিয়ে আসবো। এক শরতে অনেক রঙের শার্ট আর গেঞ্জি পেয়ে খুব খুশী হলেন। তবে পেস্ট কালারের শার্ট আর নেয়া হয়নি। সুযোগ দেননি কিনতে। তার আগেই চলে যান সেই সাদা নীল আকাশে। সবসময় নিজের কাজ নিজে করতেন বাবা। একবার বাজার করতে গিয়ে ইটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পরে যান। কেউ একজন সেটি দেখে বাবাকে তুলতে যান। আর বলতে থাকেন- ‘আহারে বয়স্ক মানুষটা পরে গেছে’। এ কথা শুনেই বাবা দ্রুত উঠে দাঁড়ান। বৃদ্ধ তিনি হবেনই না।

বাসায় এসে হাসতে হাসতে আমাদের বলেন, ‘ইটের উপর হোঁচট খেয়ে ব্যথা পেয়েছি। তারচেয়ে বেশি ব্যাথা পেয়েছি ব্যাটা আমাকে বুড়ো বলায়।’

আমরাতো তার কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। বয়স্ক মানুষের কত মজার গল্প। বাবাকে ক্ষেপাতে বুড়ো বলতে বড় ইচ্ছে করে আজ।

বারডেমে গেলাম এক শুভাকাংখীর মাকে দেখতে। শুনলাম পাশেই অপির শিশির নামে এক কলিগের শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছেন। ভাবলাম দেখে আসি। রুমে ঢুকেই আমি মুগ্ধ। পৃথিবীর খুব সুন্দর ও পবিত্র এক দৃশ্য তখন আমার চোখের সামনে। শিশির তার অসুস্থ প্রবীণ শাশুড়িকে খাইয়ে দিচ্ছেন। একটু পর পর তার মুখ মুছে দিচ্ছেন পরম মমতায়। কোনো বিরক্তি নেই।

আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। কথা বলে এত সুন্দর দৃশ্য আমার নষ্ট করতে ইচ্ছে করলো না। সময়টাকে রুপালী এক ফ্রেমে বেঁধে ফেলতে ইচ্ছে করলো আমার। মনে মনে ভাবলাম ইস সব ঘরে ঘরে যদি শিশিরের মতো এমন অসাধারণ মানবিক মানুষরা থাকতেন! তাহলে মনখারাপ করা এতো এতো লেখা আর লিখতে হতো না। ঘর হয়ে যেতো স্বর্গ।

জানলাম, শিশির অফিস থেকে সোজা চলে এসেছেন হাসপাতালে। শাশুড়িকে খাইয়ে তারপর বাসায় যাবেন। আমার চোখে পানি চলে এলো। জয়তু শিশির। সবাই সবার পরিবারকে সমান ভাবে দেখা উচিত। ভেদাভেদ না করে পাশে থাকা উচিত। যা আমরা অনেকেই হয়তো করিনা।

আজ ‘প্রবীণ দিবস’। বৃদ্ধ হলেই তাদের অপাংতেয় ভাবা হয়। অথচ এই মানুষরাই আমাদের পথচলা মসৃণ করে দেন। তারা সারাজীবন ছাড় দেন তবে ছেড়ে দেননা। অদৃশ্য এক সুঁতায় বেঁধে রাখেন অতি মমতায়। বিপদে আপদে মনখারাপে আজও আমরা অবচেতন মনে তাই ছুঁটে যাই তাদের কাছেই। কোন এক মনখারাপ করা বিকেলে, মা কিংবা বাবাকে ফোন করে যদি বলি ঝামেলায় আছি, একটু দোয়া করতো আমার জন্য। ব্যস মন ভারমুক্ত। জানি আর্শিবাদ পাবোই। বিপদ যাবে কেটে।

আমরা হুট করে তাদের ভাঁজ পরা হাত ছেড়ে দিলেও তারা কখনো ছাড়েন না। ওনারা আমাদের আর্শিবাদ। যাদের সংসারে প্রবীণ প্রিয় মানুষেরা আছেন সময় করে একটু সময় দেয়া গেলে মন্দ হতো না। একসময় আমরাও প্রবীণ হবো। কেউ কি পাশে থাকবে তখন? আমি যা করবো প্রকৃতি হয়তো তাই একদিন ফিরিয়ে দিবে। এপার ওপারে থাকা সব বাবা-মাসহ প্রবীণ মানুষদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি