ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে দশ বছরেই এই অর্জন সম্ভব হতো’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫৮, ২২ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৯:১২, ৪ এপ্রিল ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের এই অর্জনের (এলডিসি থেকে উত্তরণ) জন্য দেশের জনগণই মূল শক্তি। এই জনগণই পারে সবরকম অর্জন করতে। বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন, বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। কাজেই কোন বাধাই আমাদের দাবায়ে রাখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার দশ বছরেই এই অর্জন সম্ভব হতো।

বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের স্বপ্নপূরণ করায় জাতির পক্ষ থেকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সংবর্ধনার আয়োজন করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যে বৈরি পরিবেশে দেশে এসেছিলাম, সেখান থেকে জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে যে যাত্রা শুরু করেছিলাম, আজ আমি মনে করি সেখান থেকে বাংলাদেশকে একটি ধাপ আমরা এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। যে স্বপ্নটি জাতির পিতা দেখেছিলেন। তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পউন্নত দেশে রেখে গিয়েছেন। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।’

বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের কথা চিন্তা করে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ যে বাংলাদেশের মানুষের অর্জন তিনি দেখতে পাচ্ছেন কি না! তিনি বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন। সব সময় এদেশের মানুষে কথা ভেবেছেন, এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের কথা চিন্তা করেছেন। তিনি সব সময় ভেবেছেন বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে, ভালোভাবে বাঁচবে। আজ সেই সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে। আমরা একটি ধাপ এগিয়ে গেছি। যদি তিনি বেঁচে থাকতেন হয়তো দশ বছরের মধ্যে আমরা এই অর্জন করতে পারতাম। কিন্তু তা হয়নি। আমাদের বহু বছর লেগে গেলো। আমরা ৪৭ বছর হলো স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আগামী ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতার ৪৭ বছর পূর্ণ হবে। আজ আমরা প্রায় ৩৭ বছর পরে এই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। নিশ্চই আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে। লাখ শহীদ সহ কত মানুষের আত্মত্যাগ তাদের সবার আত্মায় শান্তি আসবে। তাই এই অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে হবে। এ যাত্রা পথ যেনো থেমে না যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে আমার এটুকুই আবেদন যে- আমরা গর্বিত জাতি হিসেবে বাঁচতে চাই। আমরা মাথা উঁচু করে চলতে চাই। আমরা যে সংগ্রাম করে, যুদ্ধকরে, বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি, আমরা কেনো পিছিয়ে থাকবো? কেনো অন্যের কাছে হাত পেতে চলবো? কোন আমরা পারবো না নিজের পায়ে দাঁড়াতে? আমরা যে পারি সেটা আজ প্রমাণ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘যে রাজনীতি বাবার কাছ থেকে শিখেছি জনগণ্যের কল্যাণ, জনগণের উন্নয়ন, জনগণের স্বার্থে কাজরার, নিজের ভাগ্য রচনা না, নিজের ভোগ বিলাশ না, জনগণ যেনো একটু ভালো থাকে, সুস্থ থাকে সেটাই লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছি। আর সে জন্যই আজকের এই অর্জনটা সম্ভব হয়েছে। কাজেই যতটুকু অর্জন আমি মনে করি তা বাংলার জনগণের। আমি বিশ্বাস করি, আমরা ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব।’

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত উৎসব অনুষ্ঠানে এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতিপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর পর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করায় ডাকটিকিট, ৭০ টাকার স্মারক মুদ্রা এবং উন্নয়ন আলোকচিত্র অ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সামরিক সচিব। স্পিকারের পক্ষ থেকে আবদুর রাজ্জাক, মাহবুব আরা গিনি ও রফিকুল ইসলাম; প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানী; মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে অর্থ, পররাষ্ট্র ও পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও শুভেচ্ছা জানান। ১৪ দলের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ নাসিম, রাশেদ খান মেনন; মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধানরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকেও।

পরে ভিডিওবার্তায় শুভেচ্ছা জানান জাতিসংঘ মহাসচিব, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও এডিবির প্রধান। এর পর বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষে থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের পক্ষে শুভেচ্ছা জানান এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, উইমেন চেম্বারের সভাপতি সেলিমা আহমেদ, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

শিক্ষাবিদদের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম শুভেচ্ছা জানান।

মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও আশালতা বৈদ্যসহ অন্যরা। সাংবাদিক সমাজের পক্ষে অভিনন্দন জানান জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান ও শাহনাজ বেগম।

কবি ও সাহিত্যিকদের পক্ষে শুভেচ্ছা জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান ও শিশু একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। শিল্পী সমাজের প্রতিনিধি দলে ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, আবুল হাশেম খান ও আতাউর রহমান।

আইনজীবীদের পক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী বাসেত মজুমদার ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষে শুভেচ্ছা জানান ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ প্রতিনিধিরা।

খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি দলে ছিলেন মারিয়া মান্দা, সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা।

শুভেচ্ছা জ্ঞাপন পর্ব শেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ও ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরুর পর উন্নয়নের এ স্তরে উত্তরণ এবং জাতিসংঘের সুপারিশপত্র গ্রহণ পর্যন্ত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

ডকুমেন্টারির মূল বক্তব্যে বলা হয়েছে, একটি সুখীসমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তার অবর্তমানে যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সেই সোনার বাংলা গড়তে বিরামহীনভাবে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বাধীন সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন ছুঁয়ে গেছে শহর থেকে গ্রাম। শুধু অবকাঠামোই নয়, উন্নয়নের সেই ছোঁয়া লেগেছে আর্থ-সামাজিক সব খাতেই। আর সব কিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন দর্শনের ফলে।

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি