ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪

বঙ্গাসন কেন করবেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:১২, ১১ জুলাই ২০২৩

সারা পৃথিবীর মানুষের এটা আদি আসন, তারা জেনে করুক না জেনে করুক আমাদের পূর্বপুরুষরা এই বঙ্গাসন করেছে। হয়তো বঙ্গ শব্দটা তখন প্রচলনও হয় নাই তখন থেকে তারা এই আসন করছে। কারণ প্রথম মানুষ যখন বসতে শিখেছে তখন সে এভাবে বসেছে, যখন সে নিতম্ব মাটিতে লাগানো ছাড়া বসেছে তখন সে এভাবেই বসেছে।

আসলে এখন ১৯.৫ শতাংশ মানুষ পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম করেন না বা তারা শারীরিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয় নন। শহরের মানুষ এবং অফিসমুখী মানুষ এপার্টমেন্টের ছোট্ট জায়গায় আবদ্ধ মানুষ আসলে কায়িকশ্রম করার সুযোগ যে নাই তা না সুযোগ আছে কিন্তু প্রয়োজন হয় না তার। এই প্রয়োজন পূরণ ছাড়াই সে চলতে পারে।

আগে যেটা হচ্ছে যে, প্রত্যেকের আলাদা ঘর ছিল বারান্দা ছিল সামনে একটু উঠান ছিল ব্যালকনি ছিল। এই ছিল অনেককিছু পরিষ্কার করতে হতো। এখন সেটার কোনো ঝামেলা নাই বরং এখন দরজা জানালাও বন্ধ থাকে যে, এটা খোলার জন্যেও কষ্ট করতে হয় না। বাড়িতে গেলে লাইট জ্বালিয়ে দেয়া হলো ফ্যান, এসি ছেড়ে দেয়া হলো এবং গিয়ে সোফা আছে সোফাতে আমরা বসে পড়লাম।

আপনি যখন কুশনে বসছেন চেয়ারে বসছেন তখন কী হচ্ছে? পুরো শরীরের ভারটা ঊরুর ওপরে পড়ছে। তো এই যে নিষ্ক্রিয়তা,এই নিস্ক্রিয়তা থেকে বাঁচার জন্যে হচ্ছে বঙ্গাসন।

বঙ্গাসনের উপকারিতা কী?

আসলে যখন আপনি চেয়ারে বসছেন বা সোফাতে বসছেন তার চেয়ে পায়ের বেশি পাঁচ গুণ বেশি একটিভ হয় তৎপর হয়। যখন আপনি চেয়ারে বসছেন সোফাতে বসছেন তখন পায়ের পেশির কোনো একটিভিটিজ নাই এবং যে কারণে রগে টান পড়া এবং খিঁচুনি লাগা, পায়ের মাসেল ক্র্যাম্প করা।

এটার কারণ হচ্ছে যে ঐখানে রক্ত চলাচল নাই তো রক্ত চলাচল কম। যার ফলে সেখানে টক্সিন জমে যায়। তো যখন আপনি বঙ্গাসনে বসছেন তখন পায়ের পেশি পাঁচ গুণ বেশি তৎপর হয় চেয়ারে বা সোফায় বসার চেয়ে। এবং দাঁড়িয়ে থাকলে যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ হতো এই বসে সেইম পরিমাণ ক্যালরি আপনি খরচ করছেন।

সবসময় মনে রাখতে হবে যে ক্যালরিটা বার্ন-আউট হতে হবে। যত ক্যালরি বার্ন-আউট হবে তত আপনি আপনি শক্ত থাকবেন স্লিম থাকবেন শক্ত থাকবেন তত অতিরিক্ত ওজন আপনার কম হবে।

যখন আপনার এই পায়ের পেশির এই যে তৎপরতা এর ফলে মূলত মেদ কোথায় জমে? তলপেট মানে পেট এবং ঊরুর এলাকাতে এই এলাকাটা ভারি হয়ে যায়। মেদ জমে প্রথম আপনার দেহের মধ্য প্রদেশ ভারি হয়।

তো যখন আপনি বঙ্গাসন করছেন তখন এই পেট পেটের নিস্নাংশ এবং ঊরু এখানে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। যার ফলে বাড়তি যে মেদ এই মেদটা ঝরে যায়। রক্ত চলাচল যেখানেই বাড়বে পেশির একটিভিটিজ যেখানেই বাড়বে সেখানে মেদ থাকবে না।

যেরকম ঘাড়ে মেদ সবচেয়ে কম থাকে। কারণ এটা সবসময় মুভমেন্টে থাকে। সবসময় এটা নড়াচড়ায় থাকে তো যার ফলে ঘাড়ের মুভমেন্টা ঘাড়ে মেদ কম থাকে। এবং অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ব্যাড কোলেস্টেরল যেটা এটা কমে যায় এই বঙ্গাসনের ফলে কারণ রক্তের চলাচলটা খুব বাড়ে।

হাঁটু কোমর এবং গোড়ালির যে অস্থিসন্ধিগুলো এই অস্থিসন্ধিগুলো জড়তাটা কমে যায়। এটার একটিভিটিজটা বাড়ে এটার মধ্যে গ্রিসটা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। অর্থাৎ গ্রিস মানে হচ্ছে বডির গ্রিস। অর্থাৎ এটার যে স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে জড়তাটা থাকে না মুভমেন্টা বাড়ে।

দেহের হাড় এবং পেশি দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকে। কারণ নিচ যত শক্ত হবে মানে মানুষের সমস্যা শুরু হয় কিন্তু পা থেকে হাঁটুব্যথা কোমরে ব্যথা পায়ের ব্যথা। হাত কিন্তু পরে ধরে ওপরের অংশে পরে আসে নিচের অংশ যদি ঠিক থাকে ওপরের অংশ এমনিতে ঠিক থাকবে।

দেহের হাড় এবং পেশি এটা দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকে এবং পুরুষদের পোস্টেড গ্ল্যান্ড এবং ব্লাডার মূত্র তন্ত্রের যে সুস্থতা এই সুস্থতায় এটা চমৎকার উপকার করে।

প্রফেসর ড. আবুল হোসেন যিনি এই মূত্র রোগ বিশেষজ্ঞ এবং তিনি চমৎকারভাবে তার অভিজ্ঞতা বলেছেন যে, তিনি নিজে বঙ্গাসন চর্চা করতেন করেন। বঙ্গাসন তার অভিজ্ঞতা হচ্ছে যে বঙ্গাসন চর্চা শুরু করার পর মনে হচ্ছিল হজম তন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা সহজে মলত্যাগ ও হেমোরয়েডের মতো পায়ুপথের রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে এর ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এক রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে নিশ্চিত হলাম মূত্রতন্ত্রের সুস্থতা এই আসনের কার্যকারিতা অনেক।

তার কাছে এক রোগী এলো যার প্রস্রাব ক্লিয়ার হতো না। তিনি তাকে কিছুক্ষণ অনেক কষ্টে বঙ্গাসন করালেন , বঙ্গাসন কিছুক্ষণ করার পরে বলে যে আমি টয়লেটে যাব টয়লেটে যাব। এবং সাথে সাথে উঠে টয়লেটে গেলেন এবং ফিরে এসে বললেন।

তার বক্তব্য হচ্ছে, আজ আমি মূত্রথলি খালি করে প্রস্রাব করতে পেরেছি। মানে মূত্রথলি তার খালি হতো না। তার মানে হচ্ছে এই যে শরীরের পোস্টেড গ্লান্ড থেকে শুরু করে ব্লাডার থেকে শুরু করে নিচের যে অংশ, পেটের নিচের অংশের অংশের যে অর্গানগুলো রয়েছে এই অর্গানগুলোর তৎপরতার ক্ষেত্রে এই বঙ্গাসন অত্যন্ত কার্যকরী।

নারীদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে জরায়ুর নিয়ন্ত্রণকারী যে স্নায়ুসমূহ এই স্নায়ুসমূহের যে ক্ষয় এই ক্ষয় রোধ হয় এই বঙ্গাসনে।

হার্নিয়া ডাইভার্টিকুলোসিস এবং পেলভিক অর্গানগুলোর স্থানচ্যুতির সম্ভাবনা আশঙ্কা এই স্থানচ্যুতির আশঙ্কা কমে যায়।

আমরা আগেই বলেছি এরপর যখন আপনি বঙ্গাসন করছেন তখন শরীরের নিচের অংশে রক্ত প্রবাহ বাড়ে এবং সংশ্লিষ্ট অংশে রক্তনালী এবং পেশির যত রোগ আছে এই রোগ প্রতিরোধে এটা চমৎকারভাবে সহায়তা করে সাহায্য করে।

আর নারীদের জন্য বঙ্গাসন

আসলে যারা মা হবেন তাদের জন্যে বঙ্গাসনের কোনো বিকল্প নাই, তারা আগে থেকেই এই বঙ্গাসন করবেন এবং যত নিয়মিত বঙ্গাসন করবেন স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনাটা বাড়বে। একজন ডাক্তার তার অভিজ্ঞতা বলেছেন যে তিনি জনস্বাস্থ্যবিদ এবং অধ্যাপক ড. রবিন এলিজ ওয়েইজ। নয় সন্তানের মা তিনি এবং প্রত্যেক সন্তানই নরমাল ডেলিভারি। 

আর বঙ্গাসনের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর, কোষ্ঠ পরিষ্কার করে।

কমোডটাও একটা চেয়ার কারণ ওখানে ঊরুর ভারটা কোথায় পড়ছে? কমোডের ওপরে পড়ছে। আর বঙ্গাসন যখন করছেন তখন ঊরুর ভারটা দুই পায়ের ওপরে পড়ছে এবং দুই পায়ের ওপরে যখন ঊরুর ভারটা পড়ে তখন নিচের অর্গানে চাপ পড়ে। চাপ পড়লে হচ্ছে মলদ্বার যতটা ফাঁক হওয়া দরকার ততটা ফাঁক হয়ে যায় এবং মল খুব দ্রুত বেরিয়ে আসে।

নবীজী (স) তাবারানীর হাদীস হচ্ছে হযরত আবু উমামা (রা) বর্ণিত নবীজী (স) প্রায়শই কারফাসা ভঙ্গিতে বসতেন। বঙ্গাসনেরই আরবি নাম হচ্ছে কারফাসা।

তো আপনি যখন বঙ্গাসন করছেন শারীরিক উপকারিতা শুধু হচ্ছে না এবং এর সাথে সাথে একটা সুন্নত আপনি আপনার জীবনে জারি করছেন এবং একটা সুন্নত পালন করার যে সওয়াব যে সুন্নত নবীজী (স) প্রায়শই করতেন সেই সুন্নত পালন করার সওয়াব আপনি পাচ্ছেন।

বঙ্গাসন কীভাবে করবেন?

এটা করাটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার দেহের ভর কিন্তু সমানভাবে দুই পায়ের গোড়ালির ওপর রেখে বসতে হবে। দুই পায়ের গোড়ালিতে যেন সমান ভর পড়ে ডানে বা বামে কম বেশি নয় সমান ভর দিতে হবে এবং পায়ের পেশি ঊরু স্পর্শ করবে এবং কিন্তু নিতম্ব মাটি স্পর্শ করবে না। নিতম্ব যেন মাটি স্পর্শ না করে।

এবং দৃষ্টি সামনে থাকবে মেরুদণ্ড যতদূর সম্ভব সোজা থাকবে হাত দুটো দুই হাঁটুর ওপরে থাকবে লম্বা লম্বি এভাবে থাকতে পারে অথবা দুই হাঁটু ধরে থাকতে পারেন। দুই পাশে থাকতে পারে এবং দুই পায়ের মাঝখানে এক হাত বা কম্ফোর্টেবল পরিমাণ ফাঁক থাকবে দুই পায়ের মাঝখানে।

এবং দুই পায়ের ওপর সমান ওজন সবসময় খেয়াল রাখবেন এই সমান ওজনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাতে হচ্ছে বডি ব্যালেন্সটা ঠিক থাকবে।

এবারের আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে আমরা প্রত্যেকে মানুষকে সুস্থ রাখার জন্যে এই নিষ্ক্রিয়তার কারণে যে স্বাস্থ্যঝুঁকি ১৯ শতাংশ মানুষ যে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এই স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে তাদের বাঁচানোর জন্যে আমরা অন্যদের সচেতন করতে পারি।

বঙ্গাসন চর্চায় সতর্কতা

তো এক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাদের হাঁটুতে কোনো ক্ষয়রোগ রয়েছে বা মারাত্বক কোনো রোগ রয়েছে যাদের বসতে অসুবিধা হয় তারা অবশ্যই আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। ডক্টরের পরামর্শ করে তখন করবেন।

এসবি/ 
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি