ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশি নার্সরাও আন্তর্জাতিক মানের: তন্দ্রা শিকদার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৬, ২৪ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৫:০৮, ২৫ জুলাই ২০১৮

বাংলাদেশের মানুষের বেড়েছে গড় আয়। কমেছে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার। মুত্যু হার আরও কমিয়ে নাগরিকদের গড় আয়ু বাড়াতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি (সেবিকা ও ধাত্রী) অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের এ কার্যক্রমে পূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসের তাগিদ ও জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে শিশু ও নবজাতক মৃত্যুহার হার কমানোর মাইলফলক। মা ও শিশুর সেবা ত্বরান্বিত করতে বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনাসহ নানাবিধ বিষয় নিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) তন্দ্রা শিকদারের। যার কথায় উঠে এসেছে উন্নত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে নার্সিং পেশার তুলনা, কর্মসংস্থান, সমস্যা ও সম্ভাবনাসহ নানাবিধ দিক। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমাদের দেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেকেই বিদেশের প্রতি আস্থাশীল বেশি। নার্সদের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও কি তাই? দক্ষতার বিচারে আমাদের নার্সরা আন্তর্জাতিক মানের কি না?

তন্দ্রা শিকদার: এটা একটা সার্ভের বিষয়। বিষয়টি দেখার জন্য আমি আগে বার্সেলোনা গিয়েছিলাম, কানাডায় গিয়েছিলাম। দেশগুলোর সম্মেলনে আমি দেখেছি যে তাদের যে নার্স ও মিডওয়াইফস আছে, তাদের দক্ষতার তুলনায় আমাদের দেশের নার্স ও মিডওয়াইফসরা কোন অংশেই কম নয়। সেসব দেশের সম্মেলনে নার্সদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ আমি দেখেছি। আমাদের দেশের নার্সদেরও আমি হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেখেছি। উভয় প্রশিক্ষণ তুলনা করলে আমরা বলতে পারি যে আমাদের নার্সরা আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে সক্ষম।

আপনি জেনে খুশি হবেন, আমাদের নার্সদের মধ্যে ইতিমধ্যে প্রায় ১৭ জন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছে। থাইল্যান্ড সরকারের সহায়তায় এটা অর্জন সম্ভব হয়েছে। এতে বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন ও সহায়তাও ছিল। চলতি বছর থেকে সুইডিশ সরকারও আমাদের দুইজন করে নার্স পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ করে দিচ্ছে। এছাড়া সুইডেনের ওয়েববেস মাস্টার্স কোর্সে এরই মধ্যে আমাদের ৬০ জন নার্স সক্ষমতা দেখিয়েছে। সুইডিশ সরকারের দক্ষ প্রতিনিধীরাই বাংলাদেশে এসে এ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।  

আমরা যখন ইউনিয়ন পর্যায়ে মিডওয়াইফসের নিয়োগ দিতে পারবো। তখন এ সেবাটা একটা কোয়ালিটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবো। তবে এখনই বিদেশ থেকে আমাদের অফার আসে যে আমরা নার্স পাঠাতে পারবো কি না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৮ লাখ। বিপুল সংখ্যক এ বেকারদের কর্মসংস্থানে নার্সিং ও মিডওয়াইফস অধিদপ্তরের কতটুকু অবদান রেখেছে?

তন্দ্রা শিকদার: আমাদের দেশে যেখানে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার, সেখানে এই সেক্টরে লেখা-পড়া শেষ না হতেই চাকরির নিশ্চয়তা আছে। বিশ্ববিদ্যায়লয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে যেখানে বেকার, সেখানে লেখা-পড়া শেষ না হতেই সরকারি চাকরি! এটা বড় একটি সুযোগ। আমাদের সিনিয়র স্টাফ নার্সরা ছাত্রত্ব ঘোচানোর সঙ্গে সঙ্গেই চাকরি পেয়ে যাচ্ছে পিএসসির অধীনে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সেবামূলক কাজে নারীরাই বেশি দক্ষতা দেখাতে পারে। তাই সেবা খাতগুলোতে নারীর প্রধান্য থাকা উচিৎ বলে অনেকে মনে করেন। সে বিবেচনায় নার্সিং সেবাই নারীর ক্ষমতায়নটা কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে?

তন্দ্রা শিকদার: আমাদের নার্সিং সেবাটা নারীদেরই জায়গা। এখানে মাত্র ১০ শতাংশ পুরুষ। আর বাকি সব নারী। নারীর ক্ষমতায়ন যদি বলতে হয়, পুরো ক্ষমতায়ন আমাদের এ নার্সিং সেবাতে আছে। আমাদের এ উপমহাদেশে জিডিপিতে যদিও নিটুটভাবে ফূটে উঠে না যে নারী কতটুকু কাজ করছে। কিন্তু আমাদের নার্সিং পেশাতে শতভাগ দৃর্শমান যে নারী তার সংসারের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দেশের মা ও নবজাতক শিশুর সেবা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে কোন প্রতিবন্ধকতা দেখছেন কি না?

তন্দ্রা শিকদার: আমি গত এক বছর ধরে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। তাতে আমার মনে হয়েছে। আমাদের নার্সরা যে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন। এ উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের দরকার আছে। কারণ প্রশিক্ষণ ছাড়া দক্ষ নার্স পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ থেকে বিশেষ বিশেষ প্রশিক্ষণগুলো নিশ্চিত করা দরকার। আমরা এরই মধ্যে ১৩শ’ নার্সকে বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছি। এটা আরও বাড়ানো দরকার। যদি আমাদের অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হয় তবে আমরাও এ প্রশিক্ষণগুলো বাড়াতে পারবো। এছাড়া আমাদের এ নার্সিং সেবার সম্প্রসারণ করতে যে জনবল দরকার তাও আমাদের অধিদপ্তরে ঘাটতি আছে। এটাও বাড়ানো দরকার।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দেশে অনেক পেশায় তো আছে, একটি মেয়ে কেন এ পেশা বেঁছে নিবে?

তন্দ্রা শিকদার: এটি এমন একটি পেশা, যেখানে সেবা, সম্মান ও কর্মসংস্থান একসঙ্গে গাথা। একজন শিশু যখন পৃথিবীতে আসে সে প্রথমে মিডওয়াইফসের হাত ধরেই আসে। মা তার সন্তানকে দেখার আগে মিডওয়াইফসকে দেখেন। এটা একজন মিডওয়াইফসের জন্য বড় পাওয়া।

একটি মেয়ে লেখা-পড়া শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ পেশায় আসতে পারছে। সে নিজের অর্থনৈতিক মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের সেবাইও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।

আমি মনে করি আগামী প্রজন্মের জন্য এ পেশায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আছে। দেশ ছাড়া দেশের বাইরেও চাকরির জন্য আমাদের নার্সদের চাহিদা আছে। দক্ষ নার্স গড়ে তোলার মাধ্যমে ভবিষ্যতে আমরা সে বৈদেশিক চাহিদা কাজে লাগাতে পারবো। বিদেশে নার্স পাঠাতে পারবো। তাতে আমাদের অর্থনৈতিক ভীতও শক্তিশালী হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: নার্স ও মিডওয়াইফসদের উদ্দেশ্যে আপনার পরার্শ কি?

তন্দ্রা শিকদার: নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা বলতে পারি নার্স এবং মিডওয়াইফারিদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একসঙ্গে তিন হাজার পদ সৃষ্টি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকেও সেটা পাশ হয়ে আসছে। সেখানে উপজেলা পর্যায় থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত আমাদের মিডওয়াইফসদের পদায়নের পরিকল্পনা আছে। এরই মধ্যে আমরা এক হাজার ৬০০ স্ট্যাফ নার্সদের ছয় মাসের একটা স্পেশাল কোর্স করিয়ে ইউনিয়ন পর্যন্ত পদায়ন করতে পেরেছি। তাদের সাময়িকভাবে পদায়ন করা হয়েছে। স্পেশালাইস্ট নার্স হিসেবে। কেননা আমাদের মিডওয়াইফ সংকট আছে। তবে এরই মধ্যে আমাদের প্রায় ৬০০ মিডওয়াইফস কোর্স শেষ করে, পিএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর পদায়নের অপেক্ষায় আছে। তাদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশনও শেষ পর্যায়ে আছে।

সর্ব শেষ প্রতিবেদন হচ্ছে মাত্র আটজন প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশন বাকী আছে। এই আটজনের পুলিশ ভেরিফিকেশন হলেই আমরা তাদের সবাইকে পদায়ন করতে পারবো। সেটি মন্ত্রণালয় থেকে এরই মাধ্যে কাদের কোথায় পদায়ন করবে সে ব্যাপারে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। এ মিডওয়াইফসদের যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তবে আমাদের মাতৃ মৃত্যুর হার আরও কমে যাবে। নবজাতক মৃত্যুর হারও কমে যাবে।

 

এসএইচ/

 

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি