ঢাকা, সোমবার   ০৬ মে ২০২৪

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: সুন্দর ভবিষ্যতের দ্বিতীয় স্বদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৪৬, ১৪ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ২৩:৩১, ২৬ জুলাই ২০১৮

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বেশ কিছু নেতিবাচক খবর ইদানিং পত্র-পত্রিকার পাতায় বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক চ্যানেলেও সচিত্র প্রতিবেদন আকারে প্রচারিত হয়েছে। এসবের কারণ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট  কর্তৃপক্ষের ব্যবসায়িক চিন্তা ভাবনা, এ বিষয়ে তার অজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির নিয়মাবলীর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যের ফারাক, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি এবং শিক্ষার্থীর (যিনি বাইরে যেতে ইচ্ছুক) আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালমত জ্ঞান না থাকা। শুধু তাই নয়, এ ব্যাপারে আমাদের সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও নীতিমালা না থাকা।

 সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, কতিপয় সুবিধাবাদী, কমিশন এজেন্ট লাইসেন্সধারী, অশিক্ষিত ব্যক্তিবর্গের খামখেয়ালীপনায়, ছলচাতুরীতে বিশাল সম্ভাবনায় এ খাতটি অচিরেই প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে। আদৌ কি শেষ পর্যন্ত এই  “স্টুডেন্ট কনসাল্টিং ফার্ম” নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি সুন্দরভাবে, সুষ্ঠুভাবে একটি সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে টিকে থাকতে পারবে? সুতরাং চমৎকার এই মহান সম্ভাবনাময় ব্যবসাটি দেশের অর্থনীতিতে যে উজ্জ্বল আলোর প্রতিফলন ফেলেছে ইতিমধ্যেই, অতএব তাকে এভাবে ধ্বংসের মুখে ফেলে দেওয়া যায় না।

এজন্যে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত জরুরি উদ্যোগ ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ। এ ব্যাপারে উচ্চ শিক্ষার্থী আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদেরও রয়েছে অনেক সচেতনতা, দায়িত্ববোধ ও নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবার পূর্ণ অধিকার।

এমন একটা সময় ছিল যখন শহরগুলোতে হাতেগোনা কয়েকজন পাওয়া যেত বিভিন্ন পেশার মানুষ যারা বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। আর এখন প্রতি মহল্লাতেই কয়েকজন পাওয়া যাবে যারা বিদেশে পড়াশোনা করে এসেছেন। কিন্তু দেশে এসে বেকার অথবা পারিবারিক কারও সঙ্গে বা বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসা করছেন। এভাবে উচ্চশিক্ষার নামে নিজের সঙ্গেই প্রতারণা করা বোঝায়। অপচয় হচ্ছে দেশের অর্থ, বিদেশ থেকে বোঝা হয়ে আসছে আজকাল কিছু ছাত্র-ছাত্রী। ধরে নেওয়া যাক এটি একটি সামাজিক ব্যাধি।

সিদ্ধান্ত নিন কী হতে চান ?

আপনি এইচএসসি পাস করেছেন, কি করবেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণের জন্য কোচিং সেন্টারে গিয়ে নিয়মিত ক্লাস করলেই হয়ে গেল? তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে? ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়ে গেলেন। ব্যস আপনাকে আর পায় কে?  না, এটা কোন জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। গ্র্যাজুয়েশন করে ভাবছেন, একটা চাকরি পেলে লেখাপড়ার ঝামেলা থেকে পাট চুকিয়ে ফেলবেন। কিংবা বড়জোর এমএসটা করে নেবেন! তারপর বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কোমর বেঁধে রাত জেগে পড়াশোনা করছেন, বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে দেখলেন কিছুই নেই তাতে। মহা মুশকিল।

চাকরি একটা পেয়ে ভাবছেন ভালো অফার পেলে এটা ছেড়ে ওটায় জয়েন করবেন। স্যালারিও বেশি। সুযোগ-সুবিধাও বেশি। জীবনের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক । কিন্তু কেনই বা আপনি তাহলে ওই চাকরিতে জয়েন করে এই মূল্যবান সময়টা নষ্ট করলেন? এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করার জন্য না? এটাও কোন জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। আবার ধরুন, আপনি বিদেশে উচ্চ শিক্ষার্থে যাওয়ার জন্য মনস্থির করেছেন এবং নিজে হোক বা কারো মাধ্যমেই হোক কাগজপত্র প্রসেসিং করে ইউকে এমব্যাসিতে দাঁড়ালেন এবং ভিসা রিফিউজ অ্যাপি-কেন্ট হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন ধ্যাত মালয়েশিয়াতেই চলে যাই। খরচও কম, ভিসা না পাওয়ার ঝামেলাও নেই। এক সময় চলেও গেলেন। ইউকে, ইউএসএ, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া, জাপান, ওসব দেশে টিউশন ফি বছরের পর বছর পরিশোধ করে লেখাপড়া করা আমাদের দেশের কতগুলো পরিবারের পক্ষে সম্ভব? চাকরি করে যে এখন বিশ্বের কোনো দেশে উচ্চ শিক্ষা শেষ করা সম্ভব নয়, সেটা সব সময় মনে রাখতে হবে। তাহলে কি দাঁড়াল, অর্থাভাবে লেখাপড়া শেষ করতে না পেরে ডিপোর্ট হয়ে দেশে ফিরে এলেন। তাহলে ভাবছেন এমব্যাসি ভিসা দিল কেন? মার্কিনিরা কিংবা ব্রিটিশরা এমনকি উন্নত সব দেশের রাষ্ট্রনায়করা ভালো করেই জানেন, ব্যবসা কী ভাবে করতে হয় এবং কাদের দিয়ে ব্যবসা সম্ভব? এক বছর বিদেশে থাকা-খাওয়া বাবদ আপনি যা খরচ করেছেন, সেটাই ওই দেশের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস পলিসি, ওটাই তাদের প্রোফিট।

দ্বিতীয় বছর থেকে আপনি যখন টিউশন ফি দিতে পারবেন না, তখন বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে আসা ছাড়া আর কোনো গতি নেই। যদি আপনি থাকতে পারেন, জীবনের ক্যারিয়ারে আপনার ষ্ট্যাটাস হবে জাস্ট লেবার, আর কিছুই না। বিদেশে অনেক ডক্টরেট করা ডিগ্রি অফিসের জুনিয়র অফিসার মাত্র। আর আপনি বড়জোর গ্র্যাজুয়েট কিংবা এইএসসি পাস, অর্থাভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে না পারলে আপনি হলেন গিয়ে শেষ পর্যন্ত ওই দেশের টোকাই বা পথশিশু। না এটাও জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না।

কী করতে হবে-  

একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নের শুরু থেকেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করে ফেলুন। কী হতে চান আপনি? পরিবারের অন্যান্য সদস্য কিংবা আত্মীয় স্বজন নিজেদের কীভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। আপনাকে নিয়েই বা তাদের স্বপ্ন কী? এসব বিষয়কে মূল্যায়ন করে যে কোন একটা বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রসর হোন। বন্ধু মেডিকেলে চান্স পেয়েছে বলে আপনাকেও যে এমবিবিএস পড়তে হবে, এমন কথা নেই। আরেক বন্ধু ভিসা পেয়ে অস্ট্রেলিয়া গেছে বলে আপনাকেও ধার-দেনা করে যেতে হবে, এমন কোন ইচ্ছা করবেন না। আপনি সত্যি সত্যি কি হতে পারবেন এবং এজন্য পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও চারপাশ থেকে কতটুকু সাপোর্ট পাবেন তার ওপর ভিত্তি করেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করুন। সর্বাগ্রে প্রয়োজন আপনার স্থির বিচক্ষণতা, পরিবেশ পরিস্থিতি সর্ম্পকে আপনার পরিস্কার ধারণা, নিজের একাগ্রতা, অধ্যবসায় এবং ইচ্ছা। নিজেকে বিশ্বের সঙ্গে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে নিচের কয়েকটি টিপস মেনে চললে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। চেষ্টা করে দেখুন না, আপনি কতটুকু ক্যারিয়ার সচেতন?

 

প্রতিদিন ভোর ৬টায় ঘুম থেকে ওঠা এবং রাত্র ১১টার মধ্যে ঘুমুতে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

   প্রতিদিনকার হোমওয়ার্ক সেদিনই শেষ করে ফেলার জন্য একটা পরিকল্পনা করে ফেলুন এবং শেষে টিক চিহ্ন দিয়ে রাখুন। না পারলে পরবর্তী দিনের জন্য শিফট করুন।

   নিয়মিত ক্লাস করুন আর যারা চাকরিজীবী তারা প্রতিদিন অফিসে উপস্থিত হোন নির্দিষ্ট সময়ে।

   প্রতিদিন বিকেলে লাইব্রেরি, খেলাধুলার স্থান, ব্যায়ামাগার কিংবা পার্কে যে কোন একটিতে সময় কাটানোর জন্য নিজেকে তৈরি রাখুন।

   লেখাপড়া বা চাকরির পাশাপাশি সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখুন। এটাও জীবনের একটা অংশ। ওইসব কর্মকাণ্ডে আপনার অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা অনেক বড় ফল দিতে পারে।

 

   বিদেশি ভাষা শেখা, শর্ট কোর্স (ইনটেরিয়র-এক্সটেরিয়র, কম্পিউটার, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, সেক্রেটারিয়াল, ইনফরমেশন সায়েন্স, সোস্যাল এডুকেশন,গাইড ইত্যাদি) কিংবা পত্রিকায় লেখালেখির অভিজ্ঞতা নিজের ক্যারিয়ারে বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে সংযোজন করুন। কোনো শিক্ষাই বিফলে যাবে না।

লেখক: সিইও, শা এসোসিয়েটস্।

 

কেআই/এসএইচ/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি