ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘মা’ তোমায় ভীষণ ভালোবাসি

বেলায়েত বাবলু

প্রকাশিত : ০০:০৯, ১০ মে ২০২০

আজ বিশ্ব মা দিবস

আজ বিশ্ব মা দিবস

‘মা’। একটি শব্দ। একটি মমতার নাম। কিন্তু এর ব্যাপ্তি তিন ভূবনজুড়ে। এক কথায় ত্রিভূবনের সবচেয়ে মধুরতম শব্দ ‘মা’। কবি কাজী কাদের নেওয়াজ যথার্থই লিখেছেন- ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি/কিন্তু জেনো ভাই/ইহার চেয়ে নাম যে মধুর/ত্রিভূবনে নাই।’ আসলেই মায়ের মতো কেউ আপন নয়, কস্মিনকালেও কেউ হতে পারে না। নির্দ্বিধায় বলা যায়, ‘মা’ তার সহজাত মমত্ব দিয়ে আমৃত্যু সন্তানকে আগলে রাখেন অসামান্য দরদে। সন্তানের রোগে-শোকে মা-ও তাই আক্রান্ত হন।

আজ মে মাসের দ্বিতীয় রোববার, বিশ্ব মা দিবস। প্রতি বছর এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় মায়ের মর্যাদার কথা। প্রতিটি সন্তানের মধ্যে কাজ করে মাকে ভালোবাসার ও তার কাছে ঋণের কথা ভেবে উদ্বেল হওয়ার বাড়তি প্রেরণা। দিনটিতে তারা অনেকেই মাকে কিছু না কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করেন। ছুটে গিয়ে মায়ের আঁচলতলে আশ্রয় নেন। কেউবা দূরে থাকা মায়ের ছোঁয়া পেতে দ্বারস্থ হন টেলিফোনের। আর যারা ইতিমধ্যেই মা-কে হারিয়েছেন তারা স্রষ্টার কাছে দু’হাত তুলে অশ্রুপাত করেন।

আসলে ‘মা’ এমন একটি শব্দ যার মূল্য আজ পর্যন্ত কেউ পরিশোধ করতে পারেনি। আমি সর্বদা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ‘মা’ শব্দের ওজন এতো বেশি যে কেবল ব্যক্তি নয়, এর ভার এই জমিন কিংবা আকাশও বহন করতে পারেনি। তাইতো তার পদতলেই আমাদের স্বর্গ। ‘মা’ কখনোই হেলাফেলার কিছু নয়। ‘মা’ তো ‘মা’-ই। কিন্তু তারপরও এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। আমাদের অনেকেই ভুলে যান তার শেকড়-কে। সন্তানদের অবহেলায় মা-বাবার ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম।
 
আসলে কালের বির্বতনে আমরা সবাই কেমন যেন স্বার্থপর হয়ে উঠছি। আজ মমতাময়ী মাকে দেয়ার মতো তেমন কোন সময় আমাদের হাতে নেই। মায়ের পছন্দের জিনিসটি তার হাতে তুলে দিতে আমরা বারংবার ব্যর্থ হই। মোবাইলে টাকা ভরে আমরা দিনরাত প্রেমিক-প্রেমিকার সাথে কথা বলি। প্রতিনিয়ত তাদের ভালমন্দের খবর রাখি। কিন্তু দুই-এক টাকা খরচ করে মায়ের খবর নিতে পারিনা। তার ঔষধ কেনার পয়সা আমাদের হয়না। তাকে কিছু কিনে দেয়ার মতো সামর্থ আমাদের থাকেনা। আবার সামর্থ থাকলেও কেমন যেন মায়ের প্রতি অবহেলা করি। 

জীবন চলার পথে এতাটুকু বুঝেছি, জগৎ সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর স্নেহ-ভালবাসা আমার সমস্ত বেদনা দূর করে দেয়, সেই মানুষটিই হলো আমার ‘মা’। মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। মা-ই সন্তানের একমাত্র নিঃস্বার্থ বন্ধু। দুঃখে-কষ্টে, সংকটে-উত্থানে যে মানুষটি স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেন, তিনি হচ্ছেন আমার সবচেয়ে আপনজন ‘মা’। 

একটি কথা সকলেই আমার সাথে এক বাক্যে স্বীকার করবেন যে, প্রত্যেকটি মানুষ পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা মায়ের। পৃথিবীর প্রতিটি মা যদি সহিষ্ণু, মমতাময়ী, কল্যাণকামী না হতেন তবে মানব সভ্যতার চাকা শ্লথ হয়ে যেত। জন্মের সূচনাপর্ব থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মায়ের অবদান অতুলনীয়। সন্তানের জন্ম ও বেড়ে ওঠার পেছনে মা-বাবার উভয়ের হাত রয়েছে-একথাটিও অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এটি সর্বজনস্বীকৃত যে, এতে মায়ের ভূমিকাই প্রধান। 

আমি প্রতিনিয়ত উপলদ্ধি করি, মা হচ্ছেন সন্তানের সুখ-দুঃখের অনন্ত সাথী। মা সন্তানের সুখে সুখী হন, আবার সন্তানের দুঃখে দুঃখী হন। নিজের সমস্ত স্বাদ-আহ্লাদ, আনন্দ-বেদনা বিলিয়ে দেন সন্তানের সুখ-শান্তির জন্য। তার হৃদয়ের প্রবাহমান প্রতিটি রক্ত কণিকায় রয়েছে সন্তানের জন্য ভালবাসা। মা তার সন্তানকে তিলে তিলে গড়ে তোলেন। সন্তানকে ঘিরেই মায়ের স্বপ্নের ডাল-পালা বিস্তার করতে থাকে। পৃথিবীতে একমাত্র মায়ের ভালবাসা ও দানই নিস্বার্থ ও বিনিময়হীন। মায়ের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় আমরা দেখতে পাই সুন্দর পৃথিবীর এই বিচিত্র সৌন্দর্যের সমারোহ। মায়ের কাছেই আমরা গ্রহণ করি জীবনের প্রথম পাঠ। ‘মা’ শব্দটি উচ্চারণের মধ্যদিয়েই প্রত্যেকের পরিচয় ঘটে ভাষার বিস্তৃত ভূবনের সাথে। মা আমাদেরকে শেখান মহানুভবতার শিক্ষা, সেবার আদর্শ, মহৎপ্রাণ চাহিদা।  

‘মা দিবস’ সেই মমতাময়ী মায়ের জন্য। শুধুই তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। সবচেয়ে আপন মানুষটি মা-কে আরো বেশি ভালোবাসার জন্য। যদিও সন্তানের জন্য গর্ভধারিণীকে বিশেষভাবে ভালোবাসার কোনো বিশেষ দিন নেই। তারপরও কালক্রমে নানা সূত্রে মায়ের অপার মহিমা তুলে ধরারও একটি দিন এসে গেছে। প্রতি বছর মা দিবসে মায়েদের নিয়ে কিছু লেখার চেষ্ঠা করি। আর যার বেশীরভাগ জুড়ে থাকে আমার মমতাময়ী মায়ের কথা। 

আমি আমার উপলদ্ধি থেকে বুঝেছি, একজন মা তার সন্তানের জন্য কতোটা ত্যাগ করতে পারেন। আজ বিশ্ব মা দিবসে আমি বিশ্বের সকল মায়ের পাশাপাশি আমার জনম দুঃখী মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। আমি জানি এবং সবসময় মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, আমার মা আমাকে আগলে না রাখলে আজ আমার ভালভাবে বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া করা কোন কিছুই হয়ে উঠতো না। মা না থাকলে আমার জীবনের গল্প এতো সুখকর হতোনা। বার্ধ্যকের কারণে মমতাময়ী মা আমার আজ বিছানায় শয্যাশায়ী। অনেক দিন হয়ে গেছে মায়ের হাতের রান্না খাইনা। এখন মান ভাঙাতে কেউ আর মুড়ি আর ডিম ভেজে আমার সামনে দেয়না, বাবলা বলে কেউ আর ডাক দেয়না। সময়ের বির্বতনে আমিও কেমন যেন স্বার্থপর হয়ে গেছি। আগের মতো মায়ের খোঁজ রাখিনা, তাঁর পাশে গিয়ে বসিনা। মা আমি তোমাকে আসলে প্রতিটা মুহূর্তে স্মরণ করি। তুমি আমার উপর রাগ করোনা। আমি তোমাকে ভুলে যাইনি। সবসময় তোমাকে মিস করি। কষ্ঠে থাকলেই আমি তোমার মুখটা সামনে এনে সাহসী হই। মাঝে মাঝে মনের অজান্তেই বলে উঠি, মা তোমায় ভীষণ ভালোবাসি।

লেখক- সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি