মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৩৫ জনের সাক্ষ্য
প্রকাশিত : ১৬:৫৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৭:০১, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে আনা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ শেষ হচ্ছে।
আজ সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) দশম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নবম দিন পর্যন্ত ২৯ জনের সাক্ষ্য জেরা শেষ হয়। আজ ৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম জানান, কমবেশি ৪০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হতে পারে এ মামলায়।
প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানান, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ৫ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। যেখানে আইসিটি বিডি কেস হিসেবে ৫ মামলায় বিচার চলছে। বিচারাধীন ৫ মামলায় আসামি সংখ্যা ৬২ জন। তিনি বলেন, আরও ২৬টি মামলা মিস কেস রয়েছে।
এ প্রসিকিউটর জানান, তিনটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। মামলা তিনটি হলো- শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে একটি, চানখাঁরপুলে ৬ জনকে হত্যা মামলা এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা মামলা।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন একই মামলার আসামি। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুন কারাগারে, অন্য দুজন পলাতক।
এছাড়া আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলার অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর দিন ধার্য রয়েছে।
রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা ছাত্রকে গুলির মামলায় ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এ মামলায় আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এখন সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
চব্বিশের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এছাড়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্যটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের মামলা।
এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
মামলা ও বিচারের অগ্রগতি প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, বিচারপ্রার্থীর প্রত্যাশা, আইন, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড, আসামির অধিকার, যথাযথ তদন্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ, আইনি প্রসিডিউর অনুসরণসহ সার্বিক বিষয়গুলো সমন্বয় করতে হয় প্রসিকিউশনকে।
তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে যেন পৃথিবীর কোথাও কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর। প্রথমবারের মতো ইতিহাসে বিচার কার্যক্রম টেলিভিশনে লাইভ করা হচ্ছে।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে যেটা হয়েছে, সেটা হলো সাধারণ মার্ডার থেকে আকাশ-পাতাল তফাৎ। একজন মানুষ খুন করে, সেটা অনুসন্ধান করে। আর এখানে দেড় হাজার লোক খুন হয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হয়নি। ফ্যামিলি মেম্বারদের খবর দেওয়ার সুযোগ তারা দেয়নি। বলেছে, কেউ যদি নিয়ে যাওয়ার মতো থাকে, নিয়ে যাক। অজ্ঞাত পরিচয়ে লাশ হিসেবে দাফন করে ফেলতে হবে। সেখানে শহীদের সহযোগী ও পরিবারের সদস্যদের রাতে মানুষের অজান্তে কবর দিতে হয়েছে। তাই এসব মামলার তদন্ত অত্যন্ত জটিল। ইতোমধ্যে অকাট্য প্রমাণ হাতে এসেছে। আন্তর্জাতিক প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে অপরাধের প্রমাণ উঠে এসেছে বলে জানান তিনি।
এএইচ
আরও পড়ুন