ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে তরুণদেরই

বেলায়েত বাবলু

প্রকাশিত : ২৩:০৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এবং ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর অগণিত মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি একটি স্বাধীন মানচিত্র। পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হয়েছি, সেই বিজয়ী বীর সেনানীদের মর্যাদা রক্ষা করার দায়িত্ব তরুণদের।

আমাদের মধ্যে যারা পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরতা দেখিনি তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জবীত হয়ে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যেতে হবে একটি স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। আমরা নতুন প্রজন্মের তরুণরা বিজয় দেখিনি; কিন্তু আমরা আমরা উত্তরসূরিদের কাছ থেকে শুনেছি জেনেছি সেই বিজয়ের আত্মকথা। 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ভয়াল কালো রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর যে কামানের গোলাবর্ষণ শুরু হয়ে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অসংখ্য প্রাণের আত্মদান, অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, তা জানলে শিউরে উঠবে তরুণপ্রাণ। দেশের প্রতি জাগবে তাদের ভালোবাসা। 

আগামী বছর বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি পালন করা হবে স্বগৌরবে। আমাদের সবাইকে বিজয় দিবসের অর্জনকে ধারণ করে নতুনদের কাছে বিজয় দিবসের কথা তুলে ধরতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নির্যাতনে নিষ্পেষিত হওয়ার কথা জানাতে হবে সকলকে। 

বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির প্রাক্কালে আমরা যদি পিছনে ফিরে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে- আমরা ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আগে আমাদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছেনি বলেই আমাদের পূর্বসূরিদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা আমাদের তেমন একটা নাড়া দিত না। বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন শুধু দেশকে ভালোবাসতেন বলে। এখনকার তরুণ প্রজন্মের আমরা আমাদের স্বাধীনতা সেদিনই পাব, যেদিন মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থাকা কালো হাতগুলোকে উপযুক্ত শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে পারব। 

বিজয় মাসে আমরা যখন দেখি মহান নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতার নামে একটি অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তখন আমরা বর্তমান প্রজন্ম ঘরে বসে থাকতে পারিনা। আসলে মুক্তিযদ্ধের পক্ষের শক্তির অনৈক্যের কারণেই আজও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি দম্ভোক্তি প্রকাশের সাহস পায় বলে মনে করি।

আজ যদি নিজেরাই নিজেদের প্রশ্ন করি- আমরা কি আমাদের প্রিয় দেশ, মানচিত্রের কিংবা পতাকার সঠিক সম্মান দিয়েছি বা দিচ্ছি? প্রতিনিয়ত উঠতে-বসতে আমরা আমাদের পতাকার অপমান করছি নিজেদের অজান্তেই। শহীদ মিনারের বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণের নামে এখনও অনেককে দেখতে পাই জুতা পায়ে সেলফি তুলছে। 

গর্ভধারিণী মাকে একজন মানুষ যেভাবে ভালোবাসে, সেভাবেই প্রিয় দেশকেও ভালোবাসতে হবে। দেশপ্রেমের প্রথম ধাপ হিসেবে নিজের পতাকাটাকে ভালোবাসতে হবে এবং এর মাঝেই দেশটাকেও আপন করে নিতে হবে। জাতি হিসেবে আমরা যে স্বাধীন তা যেন না ভুলি। যে চেতনা থেকে আমরা বাঙালি জাতি স্বাধীনতা ও বিজয় পেয়েছি, সেই চেতনা থেকে আমরা যেন দূরে সরে না যাই। 

আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা- মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের অগ্রজরা ছিলেন আমাদের মতোই তরুণ। তাঁদের মধ্যে কাজ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা দেশপ্রেম। দুঃখজনক হলেও সত্যি আজকের প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানসমৃদ্ধ তরুণদের অনেকেই স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয় না। তাদের অনেকেই বিপথগামী। তারপেরও পূর্ব পুরুষদের মতো আমরা আশাবাদী হতে চাই। 

আজকের তরুণরা যদি সেই পিছিয়ে পড়া সমাজের জন্য লড়াই করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতাহত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, দেশ থেকে ধর্ষণ, বাল্যবিয়ে ও যৌতুকের মতো ব্যাধির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে একটি মেয়েকে নবজীবন দান করতে পারে, অনাহারীর মুখে খাবার তুলে দিতে এবং সর্বোপরি নিজের রাজনৈতিক চেতনার সুষ্ঠু বিকাশ ঘটাতে পারে, তাহলেই আমাদের বিজয়ের সাফল্য আসবে। তখনই মানুষ উপভোগ করবে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ।

আমাদের বিজয় সেদিনই সফল হবে, যেদিন বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের অবদানে বাংলার ১৬ কোটি মানুষের মুখ থাকবে হাস্যোজ্বল। থাকবে না কোনও দুর্নীতি, থাকবে না কোনও অনাহারী, থাকবে না অশিক্ষা। তাই বর্তমান সময়ের মূল দাবি হচ্ছে বর্তমানের তরুণদের জানাতে হবে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস। তাদের ভেতরে সৃষ্টি করতে হবে মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম। 

আমরা এ প্রজন্মের সন্তানরা বিশ্বাস করি- সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদমুক্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে যেদিন আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হব, সেদিনই শহীদদের সোনার বাংলার স্বপ্ন সত্যি হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে নিরস্ত্র বাঙালিকে যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সশস্ত্র পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীর বাঙালি দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন। 

আজ আমাদের তরুণ প্রজন্ম উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। আজ উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। আমাদের যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। দেশকে সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিতে আশাবাদী হয়ে বর্তমান প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে আমরা এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নই। আমরা এখন সারা বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। 

মনে রাখতে হবে- বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। দরিদ্রতা ও দুর্নীতিকে আমাদের চরম শত্রু মনে করতে হবে। আমরা প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে সব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাব। এ দেশটাকে বিশ্বের বুকে উচু জায়গা দিতে যারা সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন তাঁদের সেই আত্মত্যাগ কখনও বৃথা যেতে দিবোনা- এটাই হোক তরুণদের বিজয় দিবসের দীপ্ত শপথ। জয় বাংলা।

লেখক- সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি