ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৬:৫৫, ২৭ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৮:২২, ২৭ মে ২০১৯

আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

সোমবার দুপুরে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসলাম জগলুল হোসেন ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এর আগে রোববার তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।এদিন প্রতিবেদন দাখিল করলে মামলার বাদী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেন।

আদালতের রায়ে বাদী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, নুসরাতের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের কথা ওসিকে জানাতে গেলে ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাতের অমতে যে ভিডিও করেন এবং ভিডিওতে যা করা হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এটি স্পষ্টত আইনের চরম লঙ্ঘন। 

তাই আমরা ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি ধারায় ( ২৬, ২৯, ৩১) মামলা করি। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ওসির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ- অনুমতি ব্যতীত ভিডিও ধারণ, ছড়িয়ে দেয়া ও সোশ্যাল মাধ্যমে মানুষের মাঝে অস্থিরতা তৈরি করা। তিনটি ধারায় পৃথকভাবে এসব কথা বলা হয়েছে। আর এসকল আইনের  মামলায় পৃথকভাবে নিম্নে ৫ বছর সাজার কথা বলা হয়েছে।

সে অনুযায়ী ওসি মোয়াজ্জেমের ১৫ বছর সাজা হওয়া উচিত।তিনি আরও বলেন, ২৬ ধারা অনুযায়ী আদালত মামলা গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, অত্যন্ত আন্তরিকভাবে তারা তদন্ত করে খুব কম সময়ের মধ্যেই তদন্ত শেষ করে গতকাল রোববার আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত আজ ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ব্যারিস্টার সুমন প্রধামন্ত্রী ও পিবিআইকে ধন্যবাদ জানান। দ্রুততম সময়ে ওসি মোয়াজ্জেমকে আইনের আওতায় আনতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যতদিন ওই ওসি বাইরের বাতাস নিতে পারবেন, নুসরাতের আত্মা ততোদিন কষ্ট পাবে। এ মামলার মধ্যদিয়ে দেশের সব ওসির রুম নিরাপদ ঘোষণার দাবি জানান তিনি।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, যেসব ভিডিও মানুষের মাঝে ও সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে সেগুলোও প্রচার করা নিরাপত্তা আইনের লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। তাই এর থেকে বেরিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। সাইবার ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, মামলাটি এখন বিচারের জন্য প্রস্তুত। আসামি যদি গ্রেফতার কিংবা আত্মসমার্পণ করতে আসে তাহলে আদালত নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে চার্জ করবেন, বিচারের তারিখ নির্ধারণ করবেন। এরপর বিচার শুরু হবে।  ন্যায় বিচারের স্বার্থে যা যা করা দরকার আদলত তা করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।   

গত ২৭ মার্চ রাফিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এমন অভিযোগ উঠলে রাফিকে থানায় ডেকে নেন তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করার সময় রাফির বক্তব্য ভিডিও করেন তিনি। এ সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে রাফি ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন রাফি। ওসি যখন ভিডিও করছিলেন, তখন রাফি তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। ওই সময় ওসি আপত্তি করে বলেন, ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও।’ এ সময় তিনি রাফিকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’

ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, ওসি মোয়াজ্জেম আপত্তিকর ভাষায় একের পর এক প্রশ্ন করছিলেন রাফিকে। পরবর্তী সময়ে ওসির মোবাইল থেকে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।এদিকে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন রাফিকে হেনস্তা করেও ক্ষান্ত হননি। রাফির গায়ে দুর্বৃত্তরা কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে তিনি আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছিলেন।

এ কাজে এসআই ইকবাল হোসেন ওসিকে সহায়তা করেন। এ ঘটনায় ওসিকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। 

এদিকে রাফি হত্যার ঘটনায় ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম সরকারেরও গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি। তাকেও বদলি করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলমান রয়েছে। প্রসঙ্গত, ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। বোরকা পরিহিত কয়েকজন কৌশলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ রাফি। এর আগে ২৭ মার্চ রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ পর্যন্ত রাফি হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ২২ জনের মধ্যে সিরাজ উদ্দৌলাসহ ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

 

আই/



 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি