ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৩ মে ২০২৫

যে কারণে ভারতে ট্রোলিংয়ের মুখে বিক্রম মিশ্রি ও তার মেয়ে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪৭, ১৩ মে ২০২৫ | আপডেট: ১২:১৬, ১৩ মে ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ভারতের সর্বোচ্চ কূটনীতিবিদ তথা পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এবং তার কন্যা দেশটিতে ব্যাপক ট্রোলিংয়ের শিকার হয়েছেন। এ কারণে ব্যক্তিগত এক্স অ্যাকাউন্ট 'লক' করে দিয়েছেন তিনি। তার এক্স হ্যান্ডলটি এখন 'প্রাইভেট' করে দেওয়া হয়েছে, যেখানে বাইরের কেউ এসে কোনও কমেন্ট করতে পারবেন না।

বিক্রম মিশ্রি দিনকয়েক আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের চালানো 'অপারেশন সিন্দুরে'র সময় থেকে নিয়মিত অভিযানের নানা দিক নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে আসছেন এবং কার্যত ভারতের 'মুখ' হয়ে উঠেছেন তিনি। তার পেশাদারিত্ব ও কূটনৈতিক দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করছেন অনেকে।

তবে সোশ্যাল মিডিয়াতে একদল লোক বিক্রম মিশ্রিকে 'গদ্দার' (বেইমান) ও 'দেশদ্রোহী' বলে আক্রমণ করতেও দ্বিধা করেননি। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে তার একমাত্র কন্যা ডিডন মিশ্রিকেও জড়িয়ে নিয়ে অনেকে তাদের 'একটা নির্লজ্জ লোক আর নির্লজ্জ পরিবার' বলেও আক্রমণ করেছেন।

এমন কী সোশ্যাল মিডিয়াতে ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে ডিডন মিশ্রির ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারও।

ভারতের সর্বোচ্চ ডিপ্লোম্যাট যখন চূড়ান্ত পেশাদারি দক্ষতায় ও দারুণ সফলভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করছেন বলে বেশির ভাগ ভারতীয় মনে করছেন, তখন দেশেরই আর একটা অংশের কাছ থেকে এই ধরনের ট্রোলিং এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ ও কুৎসা নিয়ে সারাদেশ জুড়েই ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে।

গত শনিবার (১০ মে) ভারতীয় সময় রাত ১১টার সময় শেষবারের মতো সংবাদমাধ্যমের সামনে এসেছিলেন বিক্রম মিশ্রি, যখন তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করার অভিযোগ আনেন। এর কয়েক ঘন্টা পরেই তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট লক করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত তিনি আর প্রকাশ্যে আসেননি।

বিক্রম মিশ্রি ও তার কন্যাকে নিয়ে ট্রোলরা ক্ষুব্ধ কেন?
১৯৮৯ ব্যাচের ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস অফিসার বিক্রম মিশ্রি গত বছরের জুলাই মাসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের পদে আসেন। ভারতের অন্তত তিনজন প্রধানমন্ত্রী– আই কে গুজরাল, মনমোহন সিং ও নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে মি মিশ্রির। যা সরকারের খুব সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যেও অত্যন্ত বিরল।

ভারতে পেশাদার আমলারা সচরাচর পর্দার আড়ালেই থাকেন, কিন্তু গত ৭ই মে (বুধবার) পাকিস্তানে ভারতের অভিযানের পর দিল্লিতে সকালের ব্রিফিংয়ে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় বিক্রম মিশ্রিকেই। তার সঙ্গে ছিলেন সামরিক বাহিনীর দুজন নারী কর্মকর্তাও।

সেই ব্রিফিং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ও ভারতের প্রায় সব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল– আর তখন থেকেই মি. মিশ্রি দেশের কোনায় কোনায় একটি পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন।

কিন্তু সেই বিক্রম মিশ্রিই যখন শনিবার (১০ মে) সন্ধ্যায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কথা নিশ্চিত করেন, তারপর থেকেই ভারতের একদল নেটিজেন তার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিষোদ্গার করা শুরু করেন।

তাদের পোস্ট দেখে মনে হয়েছে, পহেলগাম হামলার 'বদলা' নিতে ভারতের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিল বলে তারা মনে করছেন এবং যুদ্ধবিরতিতে ভারতের রাজি হওয়ার 'হতাশা' তারা বিক্রম মিশ্রির ওপরেই চাপিয়ে দিচ্ছেন।

সেই সঙ্গেই তারা আক্রমণের নিশানা হিসেবে যুক্ত করেছেন পররাষ্ট্র সচিবের একমাত্র কন্যা ডিডন মিশ্রিকেও। 

প্রায় এক দশক আগে বিক্রম মিশ্রি সোশ্যাল মিডিয়াতে তার স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে একটি ফ্যামিলি ফটো পোস্ট করে নিজের পরিবারের সঙ্গে দুনিয়ার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সঙ্গে ক্যাপশন ছিল, "এযাবত আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন!" সেই ছবিটিকেও তুলে এনে বিক্রম মিশ্রি ও তার পরিবারকে আক্রমণের নিশানা করা হতে থাকে।

ডিডন মিশ্রি এখন লন্ডনে একজন আরবিট্রেশন আইনজীবী হিসেবে কর্মরত, কিন্তু প্রায় এক দশক আগে একজন আইনের ছাত্রী হিসেবে ভারতে তার লেখা কিছু নিবন্ধ ও গবেষণাপত্রের সূত্র ধরেই তাকে আক্রমণের নিশানা করা হয়।

তিনি তখন 'দ্য ওয়্যার' পোর্টালে শিক্ষানবিশ হিসেবেও কিছুদিন কাজ করেছেন– যে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ভারত সরকারের কখনওই তেমন সুসম্পর্ক ছিল বলা যাবে না। এখন গত ক'দিনে খুঁড়ে বের করা হয়েছে 'দ্য ওয়ারে' লেখা ডিডন মিশ্রির পুরনো নিবন্ধগুলোও।

তিনি তখন গবেষণা করতেন ভারতে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে, এই বিষয়টিকেও আক্রমণের 'যুক্তি' হিসেবে বেছে নিয়েছেন এই ট্রোলরা। 'জে আর নায়ার' নামের একটি হ্যান্ডল থেকে লেখা হয়েছে, "সবচেয়ে শকিং ব্যাপার হলো যখন আপনারা জানবেন বিক্রম মিশ্রির মেয়ে ঠিক কী করেন!"

"তিনি রোহিঙ্গাদের আইনি সহায়তা দেন! এখন আবার লন্ডনে পাড়ি দিয়েছেন!"

এমন পরিস্থিতিতে ভারতে বিভিন্ন দলের শীর্ষ রাজনীতিবিদ পররাষ্ট্র সচিবের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তার পেশাদারিত্ব ও কূটনৈতিক দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

হায়দ্রাবাদের এমপি তথা এআইএমআইএম দলের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি পোস্ট করেছেন, বিক্রম মিশ্রি একজন সৎ ও দক্ষ কূটনীতিবিদ যিনি দেশের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।

দেশটির সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এক দীর্ঘ পোস্টে বলেন, এ ধরনের মন্তব্য দেশের জন্য দিনরাত নিষ্ঠার সাথে কাজ করা সৎ কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে দেয়। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি