ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

যে কারণে সৌদির সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে বাংলাদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:০৬, ১১ আগস্ট ২০১৯

আমাদের দেশে অনেক অঞ্চলেই ঈদ উদযাপন চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। অথচ বিশ্বের অনেক দেশেই চাঁদ দেখা না সত্ত্বেও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করা হয়। যেমন আজ রোববার বাংলাদেশের কয়েকটি জেলার কিছু কিছু এলাকায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম, বরিশাল, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শেরপুর, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ।

চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক আছে। সংখ্যায় কম হলেও বাংলাদেশেও অনেক অঞ্চলে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখেই রোজা আর ঈদ পালন করে। কিন্তু কেন সৌদির সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে বাংলাদেশের মানুষ?
 
এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ড. শমসের আলী বলেন, ‘পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলা আছে, ওরা তোমাকে (মহানবী সা.) নভঃ, চন্দ্র সর্ম্পকে জিজ্ঞস করবে, এগুলো সময় গণনার জন্য, হজের জন্য আর মানব জাতির জন্য। সুতরাং সময় গণনা এটা হজের জন্য।

ড. শমসের আলী আরও বলেন, আমাদের সূর্য একটা, চন্দ্র একটা। একটা নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের আলো খুব ক্ষীণভাবে পৌঁছায়, সেই সময়ে যদি চাঁদ উঠে যায়, তাহলে মাস শুরু হয়ে গেল। আর মাস শুরু হয়ে গেলে যখন রমজান মাস পাবে, তখন রোজা রাখবে-ভাঙবে, ঈদ পালন করবে। আসল কাজ হলো- রমজানে রোজা রাখা, সেই রোজা রাখা নিয়ে কোনও কথা বলা হচ্ছে না। হচ্ছে- দিনক্ষণ নিয়ে।

চাঁদ সর্ম্পকিত একটি হাদীসের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ।’ 

একজন লোক চাঁদ দেখলেই সবার চাঁদ দেখা হয়ে গেল। ওই সময় উম্মাতের সংখ্যা কম ছিল। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা ঘোড়া দাপিয়ে সংবাদ পৌঁছানো হতো। এখন সেই ঘোড়ার জায়গাটা নিয়েছে রেডিও, টেলিভিশন। সুতরাং কোনও জায়গায় চাঁদ উঠলেই খবর হয়ে যায়।

আমাদের পশ্চিমের লোকেরা চাঁদ দেখে ঈদ পালন করছে, পূর্বের লোকেরাও পালন করছে। আমরা চাঁদ দেখতে পারি নাই দেখে করতে পারছি না। চশমা দিয়ে দেখলে শুধু একটা লেন্স দিয়ে দেখা হয়। সে রকম পেরিস্কোপ দিয়ে দেখলে বড় লেন্স দিয়ে দেখা হয়। পরিষ্কার করে বললে- ২০১৯ সালে চাঁদ কোথায় কোথায় উঠবে তার ক্যালকুলেশন দেওয়া হয়েছে এবং এসব ক্যালকুলেশনের ব্যত্যয় হয় না। 

চাঁদ দেখা নিয়ে যে মতবিরোধ রয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে অধ্যাপক শমসের বলেন, ‘কোনও একটা জায়গায় চাঁদ দেখতে হবে, সেই চাঁদ যদি দেখা হয়ে যায়, তাহলে চারটা মাজহাব রয়েছে, হানাফী মাজহাবে লেখা রয়েছে স্থানের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়। ’

তিনি বলেন, ‘ওআইসির একটা ডেক্লারেশন আছে। সেই ডেক্লারেশনে ফিকহ কমিটিতে বলা হয়েছে, কোনও একটা জায়গায় চাঁদ দেখলে সেটা ফরজ হয়ে যায়। তার মানে এই নয় যে, একই সময়ে নামাজ পড়বো। নামাজটা আমরা পড়ি ঘড়ির সময় অনুযায়ী। আগে আমরা ছায়া দেখে পড়তাম এখন আমরা ঘড়ি দেখে পড়ি। সুতরাং সব জিনিস চিন্তা করলে পৃথিবীর সব জায়গায় একদিনে রোজা শুরু করা দরকার। একদিনে ঈদ করা দরকার। শুধু খবরটা পেলে হয় যে, কোন জায়গায় চাঁদ দেখা গেল কিনা।’

ড. শমসের বলেন, ‘একশ বছর আগেও ঘড়ি দেখে নামাজ পড়া ছিল না, তারপর নামাজে মাইক ব্যবহার নিষেধ ছিল, এখন মাইক এলাউ করে। তো আস্তে আস্তে মানুষ বুঝবে। এদেশের বহু লোক পশ্চিমের খবর পেয়ে রোজা-ঈদ করা শুরু করেছে। চাঁদপুর এবং অন্যান্য জেলা এবং আস্তে আস্তে এই সংখ্যা বাড়ছে। ’

সৌদি আরবের সঙ্গে একই সময়ে চাঁদ দেখে রোজা এবং ঈদের বিষয়ে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে ড. শমসের আলী বলেন, ‘সরকারের উচিত হবে চাঁদ দেখা কমিটিকে বলা, তোমরা শুধু নিজেদের দেশের চাঁদ দেখা গেছে কিনা খোঁজ নেবে না, আশেপাশে কোনো দেশে চাঁদ দেখা গেছে কিনা সে খোঁজ নেবে। যদি দেখা যায়, তাহেলে রোজা রাখা যাবে। একসঙ্গে হলে আর অসুবিধা কি?

তবে ড. শমসের আলীর সঙ্গে একমত নন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, যারা সৌদির সঙ্গে মিল রেখে রোজা-ঈদ পালন করেন তাদের এ কাজটি শুদ্ধ নয়। 

এর ব্যাখ্যায় মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, ঈদের ঘোষণা না এলে ঈদ পালন করা জায়েজ নয়। একটি সামষ্টিক বিষয় এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। রাসূল (সা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ‘যেদিন মানুষ রোজা শুরু করবে, সেদিন থেকে রোজা পালন করা হবে। আর যেদিন মানুষ ইফতার বা ঈদ পালন করবে সেদিনই ঈদ ।’ সুতরাং এটি সামষ্টিক ঘোষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান।

সৌদির সঙ্গে মিল করে রোজা বা ঈদ পালনের বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কেন সৌদি আরবের সঙ্গে ঈদ পালন করা হবে? আদৌ কি আমাদের কোনও ইবাদত সৌদি আরবের সঙ্গে পালন করার কথা বলা হয়েছে? সৌদি আরব ও বাংলাদেশে কি একই সময় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়? চাঁদ কি একই সময় উদয় হয় ও অস্ত যায়?

এই প্রশ্নগুলোর জবাবে তিনি নিজেই বলেন, কোনও ইবাদত আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে করব না। কারণ, সৌদি আরবের সঙ্গে কোনো ইবাদত করার নির্দেশনা আমাদের দেওয়াই হয়নি। সৌদি আরব না থাকলে কি আমরা কোনও ইবাদত করব না? সুতরাং এ কাজটি মোটেও শুদ্ধ নয়।

কেউ বলতে পারেন যে, সৌদি আরবের সঙ্গে ঈদ পালন করছি। কারণ, তারা আগে চাঁদ দেখেছে। এটি সহিহ নয়। যদি তাই হয়, তাহলে সৌদি আরবের আগে যারা চাঁদ দেখেছে, তাদের সঙ্গে ঈদ পালন করা উচিত। সুতরাং এখানে বড় ধরনের ভুল এবং বিভ্রাট রয়েছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের যেমন ভৌগোলিক কোনও মিল নেই, তেমনি চান্দ্রিক বর্ষ অথবা সৌরবর্ষ কোনওটির সঙ্গেই মিল নেই। তাই কোনওভাবেই একে একদিনে মেলানো যাবে না। একদিন আগে ও পরের হিসাবে ধরতে হবে। এটি ভৌগোলিক বাস্তবতা।

এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘চাঁদ না দেখা পর্যন্ত তোমরা সিয়াম (রোজা) পালন করবে না, অনুরূপভাবে যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন চাঁদ না দেখবে, তোমরা ঈদ পালন করবে না।’ তাই কোনও ব্যক্তি যদি চাঁদ দেখে রোজা রাখে এবং ঈদ পালন করে, তাহলে চোখ বন্ধ করে সে সুন্নাহ অনুসরণ করেছে। আর যদি কোনও ব্যক্তি সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালন করে, তাহলে সে চাঁদ না দেখে তা পালন করছে। এটি সম্পূর্ণ ভুল।

এনএস/এমবি


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি