ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

যেভাবে সন্তানকে স্বনির্ভর করবেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৩২, ১৩ আগস্ট ২০১৯

সন্তানের প্রতি মায়া মমতা সবারই থাকে। তা এমন পর্যায় নিয়ে যাবেন না যা সন্তানের আত্মনির্ভরশীল বা স্বনির্ভর হতে বাধা সৃষ্টি করে। অন্যান্য শিক্ষার সঙ্গে এই শিক্ষাও চালু রাখুন। তাতে সন্তান একসঙ্গে সব শিক্ষায় পারদর্শি হবে। নিজের কাজ নিজে করে আনন্দ পাবে। 

সন্তান পরনির্ভর কেন হয় ভেবে দেখেছেন কী? ছোট থেকে সন্তানকে অতিরিক্ত আগলে রাখলে, সে পারবে না ভেবে সব কাজ করে দিলে, তার হয়ে সব সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করলে তার ফলে কোন দিনই সন্তানের ‘কিছু পারা’ হয়ে ওঠে না৷ 

পানিতে ফেলে না দিলে যেমন মানুষ সাঁতার শেখে না, এও তেমন একটা ব্যাপার৷ ছোট থেকে স্বনির্ভরতার প্রশিক্ষণ না দিলে সারা জীবন পরমুখাপেক্ষী হয়ে দুর্বিসহ জীবন কাটাতে হয়৷

বিপদ হয় তখনই, যখন সন্তানকে অতিরিক্ত চাপে রাখা হয়। এতে তার ব্যক্তিত্ব বিকশিত হতে পারে না বলে সব কাজেই পরের মুখ চেয়ে জীবন কাটায় এরা৷

আবার কিছু মানুষের সমস্যা অন্যরকম৷ স্বভাবগত দিক থেকেই ব্যক্তিত্বহীন হন তারা৷ ফ্রয়েডিয়ান মতে, এর প্রধান কারণ ‘ফ্লিক্সেশন ইন ওরাল ফেজ’৷ অর্থাৎ জন্মের পর বাচ্চা যদি বুকের দুধ না পায় বা তার এতে অতিরিক্ত আসক্তি থাকে, বড় হয়েও তার মনের গভীরে এই নির্ভরতা থেকে যায়, যা অনেক সময় প্রকাশিত হয় পরনির্ভরতার মাধ্যমে৷

কখনও আবার সমস্যার মূলে থাকে পরিবার৷ কিছু পারিবারিক সংস্কারে স্বাধীনতার চলই নেই৷ মেয়ে হলে তো আর কথাই নেই৷ এ রকম পরিবারে বড় হলে বাচ্চার পক্ষে স্বাধীনচেতা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম৷ আবার এমন কিছু পরিবারের পুত্রসন্তান অতিরিক্ত আশকারা পেয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। অন্যকে স্বাধীনতা দেওয়ার কোনও বোধই তৈরি হয় না তাদের।

কী ভাবে সমাধান করবেন জেনে নিন :

সমস্যা এড়াতে ছোট থেকেই সন্তানের দিকে নজর রাখুন৷ তাকে সব সময় আগলে বা দমিয়ে রাখবেন না৷ যে কোন কাজে তাকে এগিয়ে দিয়ে লক্ষ্য রাখুন, সাহায্য করুন৷ কিন্তু আগ বাড়িয়ে করে দেবেন না৷ বা কেন সে করতে পারল না তা নিয়ে চূড়ান্ত শাসন করবেন না৷ বরং তার মতকে গুরুত্ব দিন৷

কিছু বলতে চাইলে তা শুনুন৷ তার সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করুন৷ তা হলে ভাল–মন্দের ফারাক বুঝে সে সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে৷ মনে রাখবেন, বাচ্চার মন কিন্তু ফুলের মতো৷ সে ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে৷ আপনার কাজ সার ও পানি দিয়ে যেভাবে গাছটাকে বাঁচান, তেমনি সন্তানের বেলায়ও একই।

মেয়েদের মানুষ করার সময় কোনও বিভেদমূলক আচরণ করবেন না৷ তাকে যে নিজের ভরসায় জীবন কাটাতে হবে তা শেখান প্রতি পদক্ষেপে৷ সে যে কারও থেকে কোথাও কম কোনো দিনই ছিল না, এসব ভাবনা যে আমাদের সমাজের ভুল ধারণা, তা বুঝিয়ে দিন প্রতি ক্ষেত্রেই।

পরনির্ভরতার মূল কারণ হীনমন্যতা৷ মনের গভীরে নিজেকে ছোট ভাবা, অযোগ্য ভাবা৷ এই জায়গাটিকে টার্গেট করুন। তার জীবনের সাফল্যের ক্ষেত্রগুলোকে একে একে তুলে এনে দেখান যে সে যা ভাবছে, তার সবটা ঠিক নয়৷ গুণ বা যোগ্যতার অভাব নেই তার৷ অভাব শুধু আত্মবিশ্বাসের৷ 

সেই অভাবের কারণ তার বেড়ে ওঠার পরিবেশ৷ আত্মশক্তিতে বিশ্বাস রেখে কোন কিছু করার সুযোগই হয়তো সে পায়নি৷ ফলে তাতে মরচে ধরে গেছে৷ তবে ভয়ের কিছু নেই, সুযোগ পেলে এই মরচে সাফ করে তাকে ঝকঝকে ইস্পাত করে তোলা এমন কোন বড় ব্যাপার নয়৷

ধাপে ধাপে ছোটখাটো কাজ তাকে দায়িত্ব নিয়ে করতে বলুন৷ সাফল্য এলে চোখে আঙুল দিয়ে দেখান, কী ভাবে যোগ্যতার পাশাপাশি তার সুপ্ত আত্মবিশ্বাস বাড়ছে দিনে দিনে৷ চাইলে তাকে আরও বাড়িয়ে তোলা সম্ভব।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি