ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪

রমজানে রোজার মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মোচন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৩৭, ৮ এপ্রিল ২০২৪

আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার প্রতি বিভিন্ন সময় তাঁর ক্ষমার কুদরতি হাত প্রসারিত করেন, বিশেষ করে পবিত্র মাহে রমজানে অগণিত মানুষকে ক্ষমা করেন। রমজানের রোজার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়। রোজার সঙ্গে গুনাহ মাফের সম্পর্ক খুব গভীর। রমজান মাসে মাগফিরাতের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে দেয় বান্দার সব পাপ।

রমজান মাসের বিশেষ তিন ধাপে গুনাহ মাফের অন্যতম মাধ্যম:

▪︎১. সিয়াম পালন।
▪︎২. কিয়ামুল লায়ল আদায় (রাতের নফল সালাত/তারাবিহ এর সলাত আদায়) 
▪︎৩. লাইলাতুল কদরে (শবে কদরে) রাত জেগে নফল সলাত ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করা।

(১) ফরজ সিয়াম (রোজা) মহান আল্লাহ যা শুধু রমজান মাসেই মুসলিম জাতিকে দান করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা রেখে রমজানের সিয়াম রাখে, তার পূর্বেকার পাপরাশি মাফ হয়ে যায়। (বুখারি, হাদিস নম্বর ৩৫)

(২) ক্বিয়ামুল লাইল তথা তারাবির নামাজ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা রেখে তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পূর্বেকার পাপরাশি মাফ হয়ে যাবে। (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৩৭)

৩) লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত, যা রমজান মাস ব্যতীত বছরের আর কোনো মাসে পাওয়া যায় না। এ রাত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। এই রাতে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমাদানের রাতে কিয়াম করে (তারাবিহ/তাহাজ্জুদ সলাত আদায় করে) করে তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা
হয়।"  (বুখারি ও মুসলিম)

তিনি আরও বলেছেন:

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমাদানের সিয়াম পালন করে তার পূর্বকৃত সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে কিয়াম করে তারও পূর্বের সকল গুনাহ মোচন করা হয়।" 
(বুখারি ও মুসলিম).

রমজানে রোজা, আমল এবং নফল ইবাদত নিয়ে কিছু হাদিস নিন্মে বর্ণিত করা হলো-

পবিত্র রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে বান্দার দোয়া কবুল হয়। যেমন ইফতারের আগমুহূর্তে। এই সময়গুলোতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা এবং অতীত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা আবশ্যক। রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না—ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যতক্ষণ না সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।

(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫২)
তাই আমাদের উচিত রমজানে হতভাগা না হয়ে তাওবা করে নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়া।

রোজা রাখো, যাতে তোমরা সুস্থ থাকতে পারো।
—আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা), আবু হুরায়রা (রা); তাবারানী

রোজা সবরের অর্ধেক। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা-পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।
—সুফিয়ান সাওরী (র); তিরমিজী

সবকিছুর জন্যেই যাকাত (শুদ্ধি প্রক্রিয়া) রয়েছে। শরীরের যাকাত হচ্ছে রোজা।
—আবু হুরায়রা (রা); ইবনে মাজাহ

আল্লাহ বলেন, মানুষের প্রতিটি আমল বা কাজ হচ্ছে তার নিজের জন্যে। আর রোজা হচ্ছে কেবল আমার জন্যে। (আমার জন্যেই সে খাবার ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকে এবং যৌন কামনা-বাসনাকে সংযত করে।) তাই রোজার পুরস্কার আমিই তাকে দেবো। রোজা হচ্ছে (পাপাচার ও জাহান্নামের আগুনের বিরুদ্ধে) বর্ম। অতএব তোমরা যখনই রোজা রাখো, তখন ফালতু আজেবাজে অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে না, চেঁচামেচি করবে না। কেউ গালি দিলে বা ঝগড়া করতে এলে বলবে, আমি রোজাদার। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির (বিশেষ সুগন্ধি) গন্ধের চেয়েও পছন্দনীয়। রোজাদার দুটি আনন্দ লাভ করে। প্রথমত, ইফতারের সময়। দ্বিতীয় আনন্দ লাভ করবে—যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

মানুষের প্রত্যেকটি সৎকর্মের নেকি আল্লাহ গুণিতক করেন। ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি দান করেন। আর রোজার নেকি আল্লাহ নিজে দেবেন, কোনো সীমা ছাড়া, তাঁর ইচ্ছানুসারে।
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম

রমজানে দান শ্রেষ্ঠ দান।
—আনাস ইবনে মালেক (রা); তিরমিজী

আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আত্মশুদ্ধির নিয়তে যে রমজান মাসে রোজা রাখে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

অসুস্থতা বা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কেউ রমজান মাসের একটি রোজাও ত্যাগ কোরো না। এই একটি রোজার পরিবর্তে সারাজীবন ধরে রোজা রাখলেও—যা তুমি হারিয়েছ তা কখনো পূরণ হবে না।
—আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী, ইবনে মাজাহ

যদি তুমি রোজা রাখার কথা ভুলে গিয়ে হঠাৎ করে কিছু খেয়ে ফেলো বা পান করো, তবে তুমি অবশ্যই রোজা পুরো করবে। (ভুলবশত খেয়ে ফেলায় তোমার রোজা ভেঙে যাবে না) আসলে আল্লাহই তোমাকে খাইয়েছেন।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

রোজাদার যদি মিথ্যাচার ও অশোভন কাজ পরিহার না করে, তবে তার পানাহার বর্জন আল্লাহর কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে না।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী। 

নবীজী (স) রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে এতেকাফ করতেন। নিজে সারারাত জাগতেন। নিজের পরিবারবর্গকে জেগে থাকতে উদ্বুদ্ধ করতেন। কঠোর সাধনা ও ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। নবীজীর (স) ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীগণও রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করেছেন।
—আয়েশা (রা); বোখারী, মুসলিম

তোমরা রমজানের শেষ ১০ বেজোড় রাতগুলোয় (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রমজানে) শবে কদর অনুসন্ধান করো।
—আয়েশা (রা); বোখারী

পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আত্মশুদ্ধির নিয়তে কদরের রাতে নফল ইবাদতে মগ্ন হও, তোমার অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

কদরের রাত পেলে আমি কী প্রার্থনা করব? নবীজী (স) বললেন, কদরের রাত পেলে তুমি প্রার্থনা করো—‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা করতে ভালবাসো। আমায় ক্ষমা করো।’
—আয়েশা (রা); তিরমিজী

(সূত্র-হাদিস শরিফের বাংলা মর্মবাণী বই থেকে হাদিসগুলো নেয়া হয়েছে)। 
কেআই//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি