ঢাকা, বুধবার   ২৭ আগস্ট ২০২৫

রাজধানীতে গৃহকর্মী সাপ্লাই চক্রের টার্গেটে ব্যারিস্টার ওমর সোয়েব চৌধুরী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫৫, ২৭ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১২:৫৮, ২৭ আগস্ট ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

রাজধানীতে আবারও সক্রিয় হয়েছে কথিত কাজের মেয়ে বা গৃহকর্মী সরবরাহ চক্র। এই চক্র বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে পরিবারের মধ্যে গৃহকর্মী ঢুকিয়ে দেয় এবং পরে মিথ্যা নির্যাতনের অভিযোগে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। সর্বশেষ এই চক্রের টার্গেটে পড়েছেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ওমর সোয়েব চৌধুরী। গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে ওমর সোয়েব চৌধুরীর দাবি, এটি একটি সাজানো অভিযোগ এবং আসল লক্ষ্য আর্থিক ব্ল্যাকমেইল। তার কথায়, একটি দালালচক্র ও কিছু অসাধু অভিভাবকের যোগসাজোসে তাকে লক্ষ্য করে মামলা তৈরি করা হয়েছে। অভিযোগকারীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল কেবল আর্থিক সুবিধা আদায়।

রোববার (২৪ আগস্ট) ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ওমর সোয়েব চৌধুরীর পক্ষ থেকে দেওয়া এক জবানবন্দিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তিনি জানান, তিশা বেগম ছয় মাস আগে এবং সুমাইয়া দুই মাস আগে আমার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে। তারা মো. রইস নামের এক দালালের মাধ্যমে আসেন। কাজ শুরু হওয়ার সময়ই আমরা লক্ষ্য করি যে, তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে বহু পুরনো ক্ষতচিহ্ন, আঘাত এবং পোড়া দাগ রয়েছে। এ অবস্থায় আমরা রইসকে জানিয়েছিলাম যে, আমরা এই দুইজনকে গৃহকর্মী হিসেবে রাখতে চাই না। তখন দালাল জানায়, তিশার বাবা-মা তাকে নিয়মিত মারধর করতেন এবং এলাকায় চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিও খেয়েছে। সুমাইয়ার শরীরেও পূর্ববর্তী কর্মস্থল থেকে প্রাপ্ত আঘাতের দাগ ছিল। তাদের দুজনের দাগই পুরনো। মামলার প্রেক্ষিতে তিশার ডাক্তারি রিপোর্টেও ‘OLD BURN’ উল্লেখ আছে, যা সাত মাস আগে হওয়া দাগ নির্দেশ করে। যদিও রিপোর্টে ‘৭ মাস আগের’ উল্লেখ ছিল, পরে সেটি কেটে দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, গত ১৬ আগস্ট তিশার বাবা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নিজ হাতে তাদের (তিশা ও সুমাইয়া) নিয়ে যান। সে সময় তিশার বাবাকে স্বেচ্ছায় নগদ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয় এবং তার বোনের বিয়ের উপহার হিসেবে আমার স্ত্রী একটি স্বর্ণের নাকফুল দেন। ওইদিন তারা কোনো অভিযোগ তোলেননি। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর, ১৭ আগস্ট থেকে তারা আরও টাকা দাবি করা শুরু করেন। টাকা না দেওয়ায় সাজানো ও মিথ্যা মামলা করা হয়।

প্রমাণ আছে উল্লেখ করে ওমর সোয়েব চৌধুরী বলেন, থানায় অভিযোগ করার পর তিশার বাবা সরাসরি আমাকে জানান, ‘টাকা দিলে অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে আমার কাছে ভিডিও প্রমাণ রয়েছে। এছাড়া, আমার গৃহপরিচারিকা জাহানারা বেগম এবং ব্যক্তিগত ড্রাইভার জাহিদ প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থিত আছেন।

পুলিশের আচরণও পক্ষপাতমূলক ছিল উল্লেখ করে ব্যারিস্টার সোয়েব চৌধুরীর অভিযোগ, গত ১৮ আগস্ট রাত ৩টার দিকে আমাকে থানায় হাজির হতে বলা হয় এবং সরাসরি গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হয়। অথচ মামলার মূল তথ্য-প্রমাণে অসঙ্গতি রয়েছে। প্রথমে অভিযোগে বলা হয় আমি একাই নির্যাতন করেছি, পরে বলা হয় আমার স্ত্রীও এতে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া দুই মেয়ের কাছ থেকেও সাংবাদিকদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি আইনজীবী, আমি আইন জানি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি সত্যিই আমি নির্যাতন করতাম, তবে কেন তাদের চিকিৎসা না করিয়ে তাদের বাবার হাতে তুলে দিতাম?

পুরো ঘটনাটি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ উল্লেখ করে, ব্যারিস্টার সোয়েব বলেন, তারা প্রথমে কাজের মেয়ে সরবরাহ করে, পরে পরিবারের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে সাজানো মামলা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। এটি একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের কৌশল।

তিনি আদালত ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের আবেদন জানিয়ে বলেন, আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।

ব্যারিস্টার সোয়েবের স্ত্রী ফাতেমা বেগম সাথীর অভিযোগ, আমার স্বামী কাউকে মারধর করেননি। তিনি নিজ সন্তানদের সাথেও সময় দিতে পারেন না, অন্যকে মারধরের প্রশ্নই আসে না। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমি থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)র সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তিনি আমার কথা শোনেননি। এমনকি অভিযোগকারীদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগও দেননি। জোরপূর্বক অভিযোগকারীদের সহায়তায় মামলা দায়ের করেছেন।

ফাঁসানো হচ্ছে হচ্ছে উল্লেখ করে তার দাবি, আমাদের এই ঘটনায় সংঘবদ্ধ দালাল চক্র জড়িত থাকতে পারে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো. জসিম উদ্দিন জানান, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি