ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪

শহীদ ডা. মিলনের আত্মত্যাগ ও গণতন্ত্র

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৪৪, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

২৭ নভেম্বর ১৯৯০। জেনারেল এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের দুর্নীতি আর দুঃশাসনের কারণে সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রাজপথে ফেটে পড়ে সেদিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশের সড়কে এরশাদের পেটোয়া বাহিনীর গুলিতে মারা যান তৎকালীন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম মহাসচিব ডা. শামসুল আলম খান মিলন।

ডা. মিলনের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি আসে এবং ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে এরশাদের পতন ঘটে। ফলে গণমানুষের বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং গণতন্ত্রের শুভ সূচনা হয়।

অনেকের মতে, আজকের যুবসমাজের মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। যুবসমাজ আজ লক্ষ্যভ্রষ্ট, দিগ্ভ্রান্ত। অথচ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সব কটি জাতীয় আন্দোলনের পুরোধায় ছিল ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ। আমাদের রাষ্ট্রীয় যা কিছু অর্জন, তা এই তরুণদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে, এ কথা আমরা ভুলে যেতে পারি না।

১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর যতগুলো রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছিল, তার প্রতিটিতেই মিলনের অংশগ্রহণ ছিল অবধারিত। ১৯৮২ সালে মজিদ খান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন, ১৯৮৪ সালে সামরিক শাসনের অবসান ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গণ-আন্দোলন, ১৯৮৬ ও ৮৭-র আন্দোলন নিয়ে মিলন ডায়েরিতে লিখেছিল ‘মুক্তিপাগল মানুষের স্রোত নেমেছে রাজপথে। সেই স্রোত ব্যর্থ হয় ষড়যন্ত্রের নীলনকশায়। ১৯৮৭-তেও ব্যর্থ হয় লাগাতার হরতাল। নূর হোসেনের আত্মদান ব্যর্থ হয়ে যায়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন করে মিলন জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল। স্বপ্ন দেখেছে, বাংলাদেশ হবে সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাসী একটি রাষ্ট্র, যেখানে শ্রেণিবৈষম্য থাকবে না, বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। তাই জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি চিকিৎসকদের পেশাগত আন্দোলনও সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। তাই তো এরশাদ সরকার প্রণীত গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধাচরণ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তার আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র।

সেই থেকে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচিতে দিনটিকে পালন করে আসছে। আজ বুধবার শহীদ ডাক্তার মিলন দিবস। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

তবে মিলনের হত্যার সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক শক্তি দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছে। গণতন্ত্রের লেবাস পরে এর নেতারা সংসদের আসন অলংকৃত করেছেন। এই হত্যার কোনও বিচার হয়নি। সে কারণেই হয়তো তার দলের একজন নেতা কিছুদিন আগে শহীদ নূর হোসেন সম্পর্কে সদর্পে উচ্চারণ করেছেন ‘নূর হোসেন একজন ইয়াবাখোর নেশাখোর ছিল।’ অপর একজন নেতা (সেই দলেরই) শহীদ মিলন সম্পর্কে বলেছেন, মিলনকে হত্যা করা হয়েছে কি না, সেটা বিতর্কিত বিষয়।

তাই সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে বাঙালি জাতিকে ৯০-এর মতো ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নিতে হবে।

একে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি