ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিশুর চোখ পরীক্ষায় দেরি হলে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে: গবেষণা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৩, ২৮ আগস্ট ২০১৮ | আপডেট: ১০:০১, ৩০ আগস্ট ২০১৮

বর্তমান সময়ে শিশুদের চোখে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ছোট বেলায় সমস্যা ধরাপড়ার পরও অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান না। এমনিতে ভালো হয়ে যাবে, এই ভেবে। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের চোখের সমস্যা স্থায়ী হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ সঠিক সময়ে চোখ বা দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা না করা। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক করেছেন যুক্তরাজ্যের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করে ব্রিটেনের অ্যাসোসিয়েশন অব অপটোমেট্রিস্টস-এওপি। তারা ১২শ জনের ওপর জরিপ পরিচালনা করে জানতে পারে যে এরমধ্যে এক চতুর্থাংশ শিশুর বাবা মা তাদের সন্তানদের সঠিক সময়ে চোখ পরীক্ষা করান না।

এছাড়া বাবা মায়ের ওপরে জরিপ চালিয়ে জানা যায় যে, তাদের ৫২ শতাংশই ভাবতেন যে তাদের সন্তানদের চোখ পরীক্ষা বুঝি তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়েই দেওয়া হবে। এজন্য তারা আর নিজ উদ্যোগে সন্তানদের চোখ পরীক্ষা করাননি।

তবে সঠিক সময়ে শিশুর চোখ পরীক্ষা না করালে, রোগের চিকিৎসার ভাল ফল পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের প্রতি ৫০জন শিশুর মধ্যে একজনচোখের অ্যাম্বলিওপিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেটা কিনা ‘অলস চোখ’ নামে পরিচিত। এই রোগে আক্রান্ত শিশুর একটি চোখ অপরটির তুলনায় দুর্বল হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দুটি চোখের দৃষ্টিশক্তিই দুর্বল হতে পারে।

মূলত, এই রোগের ফলে আক্রান্তদের একটি বা উভয় চোখ মস্তিষ্কের সঙ্গে শক্তিশালী সংযোগ সৃষ্টি করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এতে ওই শিশুগুলোর দৃষ্টিশক্তি সঠিকভাবে বিকাশ লাভ করতে পারে না।

তবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে তা পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্রিটেনের এনএইচএস সুপারিশ করে যে শিশুর বয়স চার বছর হলেই যেন তাদের চোখ পরীক্ষা করানো হয়। কেননা ছয় বছর বয়সের পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখের চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

শিশুদের চোখের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে সঠিক পাওয়ারের চশমা পরানো সেইসঙ্গে আই প্যাচ ও চোখের ড্রপ দেওয়া। যেন তাদের দুর্বল চোখগুলোকে সারিয়ে দৃষ্টি আরও স্পষ্ট করে তোলা যায়।

জেন থম্পসনের মেয়ে, ইভ। এখন তার বয়স ১৪। যখন তার বয়স সাত বছর ছিল তখন তার চোখে অ্যাম্বলিওপিয়া রোগটি ধরা পড়ে। চক্ষু বিশেষজ্ঞ ইভের ব্যাপারে বলেন যে তার রোগ নির্ণয়ে অনেক দেরী হয়ে গেছে, এজন্য ইভকে আই প্যাচিংয়ের চিকিৎসা দেওয়া যাবেনা।

 

তবে প্রেসক্রিপশন চশমা ইভের দৃষ্টিশক্তি ঠিক করতে অনেকটা সাহায্য করেছে। ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের বাসিন্দা জেন থম্পসন তার মেয়ের এই চোখের সমস্যার জন্য এখন নিজেকেই দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমার মনে হচ্ছিলো আমি বুঝি অনেক খারাপ একজন অভিভাবক।

সত্যিই, কারণ আপনি আপনার সন্তানদের জন্য সবচেয়ে ভালোটাই করতে চান। তারপর উপলব্ধি করেন যে এই সমস্যাটা যদি আগেই খুঁজে বের করা যেতো। কিন্তু আপনি এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন না। এটা মেনে নেয়াটা সত্যিই অনেক কঠিন।

থম্পসনের মেয়ে ইভ বলেন, আমি সবসময় শুধু আমার ডান চোখ দিয়েই দেখতাম। তখনও আমি বুঝতে পারিনি যে কোন সমস্যা আছে কিনা। কিন্তু চোখ পরীক্ষার সময় যখনই আমার ডান চোখটা ঢেকে দেওয়া হল তখন দেখি আমার সামনের সব জিনিসই ঝাপসা, অস্পষ্ট। খুব ভয় পেয়েছিলাম। আমি আমার বাম চোখ দিয়ে প্রায় দেখিই না।

উল্টোটা ঘটেছে নিকোলা রোথেরার ৫ বছর বয়সী মেয়ে ক্লোইর সঙ্গে। ক্লোইর বয়স যখন তিন বছর তখন তার চোখ পরীক্ষায় অ্যাম্বলিওপিয়া রোগটি শনাক্ত হয়। তবে বয়স কম থাকায় ক্লোইকে পুরোপুরি সারিয়ে তুলতে আই প্যাচের চিকিৎসাই যথেষ্ট ছিল।

ব্র্যাডফোর্ডের বাসিন্দা নিকোলা বলেন, যদি আমি ‌আমার মেয়ের চোখের অসুস্থতা ওই অবস্থাতেই ফেলে রাখতাম। তাহলে বাম চোখটি হয়তো এখনকার মতো স্বাভাবিক হতো না। আর এটা তার ভবিষ্যৎ জীবনকে সীমাবদ্ধ করে ফেলত।

তাই একটি নির্দিষ্ট বয়সে শিশুর চোখ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে মনে করেন মিসেস নিকোলা।

নিকোলা বলেন, অনেক শিশুর ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে তারা হয়তো ছয় বছর বয়সে, অথবা তার চেয়েও বেশি বয়সে তাদের প্রথম চোখ পরীক্ষা করিয়েছে। কিন্তু ততদিনে হয়তো সেই রোগ সারিয়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। যদি কারও চোখে সমস্যা থাকে। তাহলে সেটা সঠিক সময়ে নির্ণয় করা গেলে হয়তো পুরোপুরি ঠিক করা সম্ভব।

অ্যাসোসিয়েশন অফ অপটোমেট্রিস্টস (এওপি) এ বিষয়ে আরও ১২৪৬ জন প্র্যাকটিসিং অপটোমেট্রিস্ট অর্থাৎ সেবায় নিয়োজিত চক্ষু বিশেষজ্ঞের ওপর গত বছর একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে, ১. ৭৪% শতাংশ চিকিৎসকই জানান যে, তাদের কাছে যেসব শিশু চিকিৎসা নিতে এসেছিল, তাদের রোগটি আরও আগে সনাক্ত করা গেলে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা আরও সফলভাবে সমাধান করা যেত।

 

২. এর মধ্যে, ৮৯% পরীক্ষাতেই অ্যাম্বলিওপিয়া রোগটি নির্ণয় হয়। যদি তারা আরও আগে চিকিৎসা নিতে আসতো তাহলে আরও ভাল চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হতো। এওপি এর ফারাহ টপিয়া জানান, শিশুর দৃষ্টিশক্তি বিকাশের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে তার চোখের অবস্থা সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া অনেক জরুরি। তিনি বলেন, অ্যাম্বলিওপিয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসা আগেভাগে করালে দৃষ্টিশক্তি ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

সূত্র : বিবিসি।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি