ঢাকা, রবিবার   ১৬ জুন ২০২৪

শিশুর বিকাশে মেডিটেশন

ডা. দীপা সাহা

প্রকাশিত : ১৬:১০, ২২ মে ২০২৪

ডা. দীপা সাহা

ডা. দীপা সাহা

শিশুর যথাযথ বিকাশ নিয়ে আজকাল অনেক অভিভাবকই সচেতন হয়ে উঠছেন। এটি খুব ভালো লক্ষণ। তবে অনেকেই শুধু খাবার দিয়ে শিশুর বিকাশ করাতে চান। কেউ কেউ শুধু লেখাপড়া বা এ জাতীয় বিষয় দিয়ে শিশুর বিকাশ ঘটাতে চান। এটি একটি আংশিক বা অসম্পূর্ণ চিন্তা। আরও অনেক বিষয় আছে যা দিয়ে পরিপূর্ণ বিকাশে ভূমিকা রাখা সম্ভব।

খাবারের মধ্যে ব্রেনের জন্যে উপকারী কিছু খাবার রয়েছে। যাকে বলা হয় ব্রেন ফুড। ব্রেন ফুডের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাদাম, মাছ, ফল, সবজি ইত্যাদি। যেমন-ইলিশ ও ভেটকি মাছ প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের উৎস। বাদাম, বিশেষত কাঠবাদাম ও আখরোট। তাজা ফল ও সবজি যেমন- পেয়ারা, টমেটো, পালং শাক ও বরবটি। এছাড়া স্ট্রবেরি, ব্লু বেরি ও কিউই ফলের কথাও বলা যায়। 

ষাটোর্ধ্ব বয়সী ৩৭৭৮ জন মানুষকে নিয়ে একটি গবেষণা করে দেখা যায়, দিনে দুই বাটি তাজা সবজি ও ফল খেয়েছেন যারা তাদের বয়সজনিত মানসিক ক্ষমতা হ্রাসের হার ৩৮% ভাগ কম হয়েছে; যারা এর চেয়ে কম খেয়েছেন। তবে শুধু খাবারই যথেষ্ট নয়। শিশুর দরকার ইতিবাচক পরিবেশ। যেখানে তাকে প্রশংসা করা হবে, নিন্দা নয়। যেখানে তাকে উৎসাহ দেয়া হবে, বকা নয়। সাহস দেয়া হবে, ভীতি নয়।

ব্যায়াম ও খেলাধুলার ফলে শিশুর বিকাশ যথাযথভাবে হয়। শহরে এসবের সুযোগ কম থাকলেও অভিভাবকদের উচিত কোনো না কোনোভাবে এসবের ব্যবস্থা করা। কারণ এসবের আসলে কোনো বিকল্প নেই। অন্য শিশুদের সাথে মেলামেশা করিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিতে পারলে তাদের সামাজিক বিকাশ ভালো হয়। আসলে শিশুদের দরকার শিশুদের সঙ্গ। একটি এপার্টমেন্ট ভবনের ১০টি ফ্ল্যাটে যে পাঁচটি শিশু থাকে তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ফ্ল্যাটে গৃহবন্দী থাকে। অথচ তাদেরকে এক জায়গায় জড়ো করিয়ে কিছু খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দেয়া গেলে কতই না ভালো হতো!

মেডিটেশন বা ধ্যান শিশুদের বিকাশের জন্যে হতে পারে আরেকটি কার্যকর একটি মাধ্যম। এটি চর্চা করার জন্যে খুব বেশি জায়গার দরকার নেই। খুব বেশি সময়েরও দরকার নেই। আরাম করে বসতে পারলেই হলো। দমচর্চা করে নিজে নিজেই মনের গভীরে ডুব দেয়া যায়। রিল্যাক্স হয়ে যাওয়া যায়। শিশুমনের রাগ ক্ষোভ দুঃখ কষ্টগুলো ধীরে ধীরে দূর করা যায়। এটি মনে করার কোনো কারণ নেই যে শিশুদের মনে কষ্ট নেই। বরং তাদের মনেও অনেক গভীর যন্ত্রণা লুকিয়ে থাকতে পারে খুব গোপনে। সেগুলো সময়মতো বের করে দেয়া না গেলে বড় হয়ে তা তাদের মানসিক সমস্যার বা মনোদৈহিক সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই তাদের দুঃখ বেদনাকেও আমলে নেয়া দরকার। ধমক দিয়ে তার মুখ বন্ধ করিয়ে দেয়া কোনো কাজের কথা নয়। বরং তাকে মেডিটেশন চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। যেন সে নিজের দুঃখ কষ্ট গোপন বেদনা নিজেই দূর করতে পারে। যেন সে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে।

মেডিটেশন নিয়ে এখন অনেক গবেষণা চলছে। ব্রেনের বিকাশে যে মেডিটেশন কার্যকর ভূমিকা রাখে তা নানা গবেষণায় এখন প্রমাণিত। ৩/৪ বছরের শিশুকেও মেডিটেশন বা ধ্যান চর্চা করানো যেতে পারে। তাহলে সে ছোটবেলা থেকেই ইতিবাচক হয়ে উঠবে। তবে মনে রাখতে হবে, মেডিটেশনের মতো ইতিবাচক চর্চাও কখনো জোর করে চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। শিশুকে বুঝিয়ে শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করে করে মেডিটেশন, ব্যায়াম ইত্যাদি ভালো ভালো অভ্যাস আয়ত্ত করাতে হবে।

লেখক-সহযোগী অধ্যাপক, চাইল্ড নিউরোলজি বিভাগ, আদ-দ্বীন মহিলা মেডিকেল কলেজ। 
 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি