ঢাকা, রবিবার   ০৫ মে ২০২৪

শুকরিয়ার মাধ্যমেই জীবনের সাফল্য

প্রকাশিত : ১৯:৪৫, ৯ এপ্রিল ২০১৯

প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

ভালো কাজের শুকরিয়া আদায় করতে হবে। জীবনে সাফল্য আনার জন্য শুকরিয়া আদায় করা দরকার। মানুষ শুকরিয়া আদায় করে জীবনকে ইতিবাচকভাবে গড়ে তোলতে পারে। নিম্নে শুকরিয়ার আদায়ের কিছু কারণ তুলে ধরা হলো-

১. শোকরগোজার হোন : একটি প্রবাদ আছে, ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান বয়। আর ইতিবাচক বা শোকরগোজার মানুষই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, শুকরিয়ার হাত ধরেই কল্যাণ ও সুখের প্রসার ঘটে। শুকরিয়ার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য ত্বরান্বিত হয়, পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন হয়, প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়ানো সহজতর হয়।
আসলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বা শুকরিয়ার প্রকাশ জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প রয়েছে।
এক সুলতানের মাছ খুব পছন্দ। ভালো মাছ পেলেই তিনি তা কিনে নেন। এক জেলের কাছ থেকে চার হাজার দিরহাম দিয়ে তিনি মাছ কিনে নিলেন। জেলের সঙ্গে কথাবার্তার সময়ে সুলতান জানতে পারলেন এটি বিশেষ প্রজাতির মাছ। এর পুষ্টিগুণও অনেক বেশি। সুলতান খুশি হয়ে তখন জেলেকে আরও দুই হাজার দিরহাম দিয়ে দিলেন।

বুড়ো জেলে চার হাজারের বদলে ছয় হাজার দিরহাম পেয়ে খুশি মনে বাড়ির দিকে রওনা হলেন। কিন্তু প্রাসাদের সদর দরজা পার হওয়ার আগেই থলিটা ছিঁড়ে গিয়ে একটি দিরহাম একটু দূরে চলে গেছে। জেলে হন্যে হয়ে তা খুঁজতে লাগলেন। সুলতান ছাদে বসে জেলের এই খোঁজাখুঁজির দৃশ্য দেখতে পেলেন। এর পর সুলতান জেলেকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, একটি মাত্র দিরহাম! সেটির মায়াও ছাড়তে পারছ না। একটি দিরহাম না পেলে কী এমন লোকসান হবে তোমার? এই খোঁজাখুঁজিতে এত সময় নষ্ট করছ। তোমার প্রাপ্যের চেয়ে অনেক বেশিই তো তুমি পেয়েছ।

জেলে খুব ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দিলেন, মহারাজ, লোকসানের জন্যে নয়, আমি একটি বিশেষ কারণে দিরহামটি খুঁজছি। এ তো সাধারণ কোনো দিরহাম নয়, এ তো সুলতানের কাছে পাওয়া ইনাম। আপনার ইনামের এক একটি দিরহাম আমার কাছে এক লাখ সোনার মোহরের চেয়েও দামি। জেলের মুখে এ কথা শুনে সুলতান মনে মনে ভাবলেন, এর আগে বহুজনকে কত কত ইনাম দিয়েছি কিন্তু কেউ তো সে ইনামের মর্যাদা এভাবে বোঝেনি, এতটা গুরুত্ব দেয়নি, এভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনি। সুলতান তখন খুশি হয়ে কর্মচারীকে বললেন, জেলেকে আরও আট হাজার ইনাম দিয়ে দাও।

গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখতে পাব, সুলতানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ফলে, তার পাওয়া ইনামের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে যদি আরও ইনাম পাওয়া যায়; তাহলে যে স্রষ্টা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রতি শুকরিয়া প্রকাশ করলে, তাঁর দেওয়া নেয়ামতের প্রতি, জীবনের প্রতি গুরুত্ব দিলে আরও কত নেয়ামত পাওয়া যাবে তা একবার ভাবুন তো। কারণ স্রষ্টা শোকরগোজার বান্দাকে পছন্দ করেন। আর এই অমূল্য জীবন তো তাঁর কাছ থেকে পাওয়া ইনাম।

অনেকে আছি যে, ভেবেই পাই না শুকরিয়া করব কী নিয়ে। কত কিছু পাইনি তা নিয়ে আমাদের হাহাকার থাকে, অতৃপ্তিতে মনটা ছেয়ে যায়। কিন্তু তাকাতে হবে, আপনার চেয়ে যারা খারাপ আছে তাদের দিকে। অনেক সময় শুকরিয়া ভেতর থেকে আসতে চাইবে না। কিন্তু একে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। যত এটি অভ্যাসে পরিণত করব তত তা অন্তরে প্রবেশ করবে। তখন এটি অস্তিত্বের অংশে পরিণত হবে। সবসময় চিন্তা করতে হবে কী কী পেয়েছি , আরো কী কী করা সম্ভব আমাকে দিয়ে।

এজন্যে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ! প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ একটি নতুন দিনের জন্যে। যদি কোনো কারণে সকালে বলতে ভুলে যান, দিনে যখনই মনে পড়বে আরও কয়েকবার বলবেন। দিনে কুশল জিজ্ঞেস করলে বলুন, ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ।’

২. জীবনের লক্ষ্যকে সুনির্দিষ্ট ও বড় করুন : এ কালের একজন অনন্য মানুষ ভারতের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট এ পি জে আবদুল কালাম বলেছেন, ছোট লক্ষ্য রাখা অপরাধ। শুকরিয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরুন, কেন আপনি পৃথিবীতে এসেছেন। আপনার লক্ষ্য কী? সুদীর্ঘ গবেষণার ফলাফলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, যারা বেঁচে থাকেন একটি লক্ষ্যকে ঘিরে তারা লাভ করেন দীর্ঘজীবন। ঘুম ভালো হয় তাদের। স্ট্রোক ও বিষণ্নতার ঝুঁকি থেকে তারা মুক্ত থাকেন। আসলে লক্ষ্য না থাকলে আপনি সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা নিতে পারবেন না। আপনি সময়কে সুন্দরভাবে ব্যয় করতে পারবেন না। যা আপনার জীবনকে ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যাবে।

৩. নেতিবাচক মানুষ থেকে মানসিক দূরত্ব বজায় রাখুন : নেতিবাচক মানুষ দেখলেই মনে করতে হবে সে ভালো কাজ করতে আগ্রহী নয়। আসলে যে নিজের, পরিবারের এবং সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে সে কারো বন্ধু হতে পারে না। মনের দিক থেকে তাদের সঙ্গে থাকবেন যারা সমমনা, যাদের চেতনা ও বিশ্বাসে মিল রয়েছে, যারা ইতিবাচক, আশাবাদী, শোকরগোজার, জ্ঞানী ও আলোকিত মানুষ। এদের সঙ্গে থাকলে আপনার নিজেরও কল্যাণ হবে।

৪. মেডিটেশনের নিমগ্ন হোন প্রতিদিন : আমার সেতার আমি কোন সুরে বাজাব তা নিয়ন্ত্রণ করে আমার মন। আর মন নিয়ন্ত্রণ করে মেডিটেশন বা ধ্যান। একজন ধ্যানী ঠাণ্ডা মাথায় নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারেন। অনুধাবন করতে পারেন কেন তিনি কৃতজ্ঞচিত্রে বা শোকরগোজার হবেন। আর শোকরগোজার মানুষ নুতন উদ্যমে শুরু করতে পারেন এবং জীবনের লক্ষ্যকে সামনে তুলে ধরতে পারেন। তখন তার মধ্যে কর্মস্পৃহা সৃষ্টি হয়। মেডিটেশনের কারণে সবসময়ে ইতিবাচকতার অনুরণনে থাকার ফলে দেহ ও মনে সুস্থতার একটি স্পন্দন সৃষ্টি হয়, ফলে তিনি খুব সহজেই শতকরা ৭৫ ভাগ মনোদৈহিক রোগ থেকে মুক্তি পান। দেহ মনে প্রশান্তি ও ইতিবাচকতা এবং সঠিক জীবনদৃষ্টি লাভ করার ফলে তিনি হয়ে ওঠেন আশেপাশের সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

পৃথিবীর সুখী মানুষ হিসেবে খ্যাত ম্যাথু রিকার্ড ৩৫ বছর ধরে মেডিটেশন করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রেনের যে অংশে আনন্দ উদ্দীপক হরমোন সৃষ্টি হয় দীর্ঘদিন মেডিটেশন করায় ম্যাথুর সেই অংশটি বেশি সক্রিয়।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি