ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

শেখ আজিজকে শত কোটি সালাম

প্রকাশিত : ১৭:২২, ১০ এপ্রিল ২০১৯

ভোরবেলা অত্যন্ত জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পৃষ্ঠায় জাতির পিতার ঘনিষ্ঠতম সহচরদের একজন শেখ আবদুল আজিজের মহাপ্রয়াণের খবরটি দেখে শোকে আচ্ছন্ন হয়ে যায় হৃদয়মন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেয়ে বয়সে দশ বছরের ছোট হলেও তিনি তাকে ‘তুমি’ বলতে পারা গুটিকয়েকদের একজন।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে জঘন্য ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডের পর কলিকালের মীরজাফর খুনি মোশতাকের মন্ত্রিত্বের আহ্বানে লাথি মেরে শেখ আজিজ সেই যে জেলে গেলেন, তার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে অনেক ‘বঙ্গবন্ধু অন্তঃপ্রাণ’ বড় নেতা কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও শেখ আজিজকে একটা ‘নির্বাচনী মৌসুমের’ জন্য ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। জাতির পিতার মতোই বৃহত্তর খুলনা জেলার বাগেরহাট মহকুমার মোরেলগঞ্জের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন শেখ আজিজ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুজিব সরকার পাঁচ লাখ সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার, পঁচিশ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ, স্বল্পতম মূল্যে যথাসময়ে কৃষি উপকরণ সরবরাহ, কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ সব কৃষিবান্ধব নীতি প্রণয়নে কৃষিমন্ত্রী শেখ আবদুল আজিজ বড় পরামর্শকের ভূমিকা পালন করেন।

দেশের দুর্নীতি প্রতিরোধ, কার্যকর সুশাসন ও কল্যাণ রাষ্ট্রে জনগণের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে জোয়ার আনার জন্য বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) প্রতিষ্ঠাকালে কৃষি খাতে আমূল পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন। সমবায়ের রূপরেখা দেন এবং বহুগুণ উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকের হিস্যা অন্তত দ্বিগুণ করার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। বাকশালের নীতি নির্ধারণী কার্যনির্বাহী কমিটির ১৫ নম্বর সদস্য শেখ আবদুল আজিজ এর বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন বলেই ধারণা করা হয়েছিল। শোক নিবন্ধটি বড় হয়ে যাচ্ছে জেনেও একটি বেদনার কথা প্রকাশ না করে পারছি না। বছর ছয়েক আগে গুলশানের সাত নম্বর রোডে জনাব শেখ আবদুল আজিজের বাড়িতে গিয়ে বেশ কষ্ট করেই তার সাক্ষাৎ পাই।

ডাক্তার মেয়ে মেঘলা ওই সময় বাড়িতে ছিলেন না। কিছুকাল আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বাসায় এসে দেখা করে গেছেন বলে চোখেমুখে একটা তৃপ্তি সহকারে আনন্দ প্রকাশ করলেন। তবে কেন জানি না, তার মধ্যে একটা না পাওয়ার বেদনাও লক্ষ্য করেছিলাম। সে ধারণার বশবর্তী হয়ে শেখ আবদুল আজিজ, ফজলুর রহমান ও নূরুল ইসলামের স্বাধীনতা পদক পাওয়া উচিত বলে মনে করি। স্বাধীনতার অন্যতম বীর সেনানী শেখ আবদুল আজিজ। আইয়ুব-মোনেমের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ও বিদগ্ধ শিক্ষাবিদ টেক্সবুক বোর্ড চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান পাঠ্যপুস্তকে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো উপাদান অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি হননি, ফলে করাচিতে নির্বাসিত হন।

আর আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফেসর নূরুল ইসলাম স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতার চিন্তাধারার ফসল পরিকল্পিত অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। স্বাধীনতা পদকের মন্ত্রিসভা পর্যায়ের কমিটি প্রধানের কাছে নামগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ধরনা দিয়েছি। ধারণা পেয়েছি যে, এরা পুরনো ‘রাবিশ’। হয়তোবা আমার মতো ‘অপদার্থ’ মৌসুমি পাখির কথা যে কত মূল্যহীন তাই তিনি বুঝিয়ে দেন। জানি না এসব বিষয় সরকারপ্রধানের নজরে আসে কি-না। আমি মরহুম শেখ আজিজের আত্মার মাগফিরাতে দোয়া করি। আগামী বছর জাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকী। সেই শুভক্ষণে স্বাধীনতা পদকের জন্য যেন তিনি (শেখ আবদুল আজিজ), জনাব ফজলুর রহমান ও প্রফেসর নূরুল ইসলাম বিবেচিত হন।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ এবং সমাজ সেবক।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি