ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

আলোচনাসভায় বক্তারা

সাংবাদিকতার জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন

প্রকাশিত : ২২:৫৫, ৪ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ০৯:১০, ১৯ মার্চ ২০১৯

‘আমাদের ১১ ভাই বোনের সংসার। বড় সংসারে বড় সন্তানের উপর প্রত্যাশা একটু বেশিই থাকে। বাবা আশা করতেন, বড় ভাই লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে ছোটদের উপরে উঠার সিঁড়ির ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু আমার ভাই ছিলেন অন্যরকম মানুষ। তিনি সাংবাদিকতার জন্য লেখালেখির জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন।’

কথাগুলো বললেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি শাহ আলমগীরের ছোট ভাই এস এম আজম।

সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) শাহ আলমগীরের মৃত্যুতে স্মরণসভার আয়োজন করে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ আরও অনেকে। বক্তারা তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।

শাহ আলমগীরের ভাই আজম বলেন, ‘আমার আব্বার স্বপ্ন ছিল, ছেলে (শাহ আলমগীর) ডাক্তার হবে। কিন্তু তা হয়নি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে এসে পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়ে যান। এরপর বাবা ভেবেছিলেন, তিনি হয়ত সরকারি বড় কর্মকর্তা হবেন। দাদা বিসিএস দিয়ে প্রশাসনে যোগদানও করেছিলেন, তারপর তা ছেড়ে দেন। আব্বার চাকরির সূত্রে দাদার উচ্চ মাধ্যমিক কাটে ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলে। দাদা কলেজ জীবন থেকেই বিভিন্ন পত্রিকা, জার্নাল, সংগঠন করতেন। সেগুলোতে আমাকেও সম্পৃক্ত করতেন। ঢাকায় আসার পরও তার এগুলো অব্যাহত ছিল।’

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শাহ আলমগীর ছিলেন অল্পভাষী। তার মধ্যে ছিলো কর্মনিষ্ঠা। একজন মানুষের মধ্যে যত গুণাবলী থাকা প্রয়োজন তার মধ্যে সবগুলোই ছিল। তিনি একজন দক্ষ প্রশাসকও ছিলেন। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর তাকে পিআইবির মহাপরিচালক হিসেবে আমি তাকে যতটুকু দেখেছি, সেই জায়গা থেকে এসব কথা বললাম। পিআইবিতে যত কাজ হয়েছে, তিনি মহাপরিচালক হওয়ার পরে তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিনি প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করেছেন, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়ও কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন নিরহঙ্কার একজন মানুষ। আমি কখনও ভাবিনি, তিনি এত অল্প সময়ে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। মানুষ অসুস্থ হওয়ার পর কিছুটা হলেও সময় পায়। কিন্তু তিনি কোনো সময় আমাদের দেননি। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তার চিকিৎসার জন্য সব নির্দেশনা ছিল।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের এই প্রেস ক্লাব নির্বাচনে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু সেটা তিনি কাউকে জানতে দেননি। অথচ নির্বাচন করাটা ছিল খুব কঠিন। অসুস্থ শরীর নিয়েই তিনি সব দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করেছেন। এটা আমরা পরে জানতে পেরেছিলাম।

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ‘এখন আমাদের সমাজে পরিশ্রমী, সৎ, সর্বোপরি ভালো মানুষ কমে গেছে। শাহ আলমগীর ভাই ছিলেন সেই ধরনের একজন মানুষ। তার মতো ভালো মানুষ আর পাওয়া যাবে না।

উল্লেখ্য বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহ আলমগীর গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তিনি লিউকোমিয়া ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।

মৃত্যুকালে তিনি বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী, এক মেয়ে, এক ছেলে ও ভাই-বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি