ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪

সাধু সাবধান...

আরিফা সুলতানা

প্রকাশিত : ১৯:৩৪, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

"পৃথিবী হইতে দাস ব্যবসায় উঠিয়া গিয়াছে শুনিতে পাই, কিন্তু আমাদের দাসত্ব গিয়াছে কি?"

শত বছর আগে 'স্ত্রী জাতির অবনতি'তে বেগম রোকেয়া নারীদের অবস্থা তুলে ধরেছিলেন এভাবেই। শত বছর পরেও অবস্থার আহামরি কোনো পরিবর্তন হয়নি। আর সে কারণেই আমরা এখনো শুনতে পাই, 'একজন সফল পুরুষের পেছনে, একজন নারী থাকেন'। হঠাৎ করে কি মনে হচ্ছে, কিসের মধ্যে কি নিয়ে আসলো! যদি মনে হয়, তাহলে একটু সবুর করেন, রসুন কেবল বুনছি। 

এরিস্টটলের দাস ব্যবস্থার কথাই ধরুন, তিনি মনে করতেন- দাসরা যেহেতু বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা করতে সক্ষম না, তাই তাদের শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত। তাদের শ্রম শোষণ করে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করবেন দাস মালিক। আর এটাই 'প্রকৃতির নিয়ম'। 

যুগে যুগে এভাবেই আধিপত্যবাদীরা নিজেদের ভাবনাকে 'প্রকৃতির/সৃষ্টিকর্তার নিয়ম' বলে চালিয়ে গেছেন অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এভাবেই দাস ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে, বর্ণ ছাড়িয়ে লিঙ্গ ভেদে। তাইতো পুরুষ যখন পড়ালেখা শেষে নিজের যোগ্যতা যাচাই করতে দৌঁড়ে বেড়ায় বিশ্বময়, তখন নারীকে হতে হয় পুরুষের সফলতার হাতিয়ার হিসেবে (এখনো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটাই বাস্তবতা)। 

এমতাবস্থায় নারী দিনের পুরোটা সময় যখন ঘরের দায়িত্ব পালন করেন, তখন আমরা বলি- 'সে তো কোন কাজ করেন না'। সে গৃহিণী, শুধু বাচ্চা পালে! শুধুই ভাত রান্না করেন! শুধু ঘরের কাজ করেন! শুধু বসে থাকেন! 

অর্থাৎ নারীর ঘরের এই কাজের অর্থমূল্য না থাকায়, সেটা 'শুধুই কাজ' হিসেবেই থেকে যায়। আর যারা কর্মজীবী নারীদের ভোগান্তি যে কতটা কঠিন, সেটা তারা ছাড়া অন্যদের বুঝবে এমন আশাই করি না। কারণ সারাদিন কাজ শেষে 'স্বামী' প্রাণীটার এক কাপ চা করে খেতেই কত কষ্ট হয়! সেখানে বেশিরভাগ কর্মজীবী নারীদের বাইরের কাজের পরও সংসার, রান্না ও সন্তান পালনের কাজের বড় একটা অংশ তাদের করতে হয়। 

এসব কথার প্রেক্ষিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা যে কথাগুলো সাধারণত শুনে থাকি, তা হলো- 'ঘরের কাজ করে মেয়েরা কাজ করছে না!', 'যে রাধে, সে চুলও বাঁধে'!  

অর্থাৎ যাবতীয় কাজ নারীকেই করতে হবে। এজন্যই ঘরের কাজকে, প্রকৃতির নিয়ম বলে চালিয়ে দেই আমরা। সেখানেই প্রশ্ন থেকে যায়, নারীর ডিএনএ-তে এসব কাজ করার উপাদান রয়েছে কিনা!

শুধু কি তাই, নারীর অর্জনকে বড় দেখাতে যেয়ে, যখন খোদ তাকেই ছোট করে বলা হয়- 'মেয়েটা ঘরে-বাইরে সব দায়িত্ব একাই পালন করে। ও তো আমার মেয়ে নয়, ছেলে! তখন আসলে বিষয়টা কেমন দাঁড়ায়, ভাবুন তো।  মেয়েকে 'জাতে' উপরে তোলা হলো কি! 'দ্বিতীয় লিঙ্গ' থেকে তাকে 'প্রথম লিঙ্গে' তুলে ধরলাম! 

আমাদের জীবন যাপনে এমন হাজারো বিষয় রয়েছে, যা নারীকে কোন না কোনভাবে হেয় করছে। তার অস্তিত্বের সংকট তৈরি করছে। সেই প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা আবার নারী পুরুষ উভয়েই ধারণ করছে। কারণ উভয়ের বেড়ে ওঠা তো এই প্রতিক্রিয়াশীল সমাজেই।

তাই যদি ভেবে থাকেন, পুত্র-কন্যা উভয় সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করবো, তাহলে মনে রাখবেন তারা শুধু আমাদের মুখের ভালো ভালো কথা শুনে বড় হবে না। আমরা যা করছি তা দেখেও বড় হবে। আগামী দিনে তাদের চিন্তাও গড়ে উঠবে ঘরে-বাইরে যা ঘটছে তা দেখে। সুতরাং, সাধু সাবধান।

লেখক-সাংবাদিক

আরকে//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি