ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

সৈয়দ হক ছিলেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী : আসাদ চৌধুরী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:০৮, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২০:৪৩, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

কবি আসাদ চৌধুরী

কবি আসাদ চৌধুরী

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৮২তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটগল্প, কবিতা, উপন্যাস, কাব্যনাট্য, শিশুসাহিত্য, নাটক, গান, প্রবন্ধ সহ সাহিত্যের সব শাখায় তার বিচরণ। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘খেলা রাম খেলে যা’, ‘নীল দংশন’, ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নুরলদীনের সারাজীবন’, ‘পরানের গহীন ভেতর’প্রভৃতি।

বাংলা সাহিত্যে অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। এছাড়া তিনি একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সৈয়দ হকের ৮২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিশিষ্ট কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘পদাবলী’করতে গিয়ে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। বরাবরই আমার তাকে একটু বেশি স্মার্ট মনে হয়েছে। কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে এমন স্মার্ট ব্যক্তি আমার চোখে আর পড়েনি। সৈয়দ হক আমার থেকে আট বছরের বড়। তবে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তাকে ঘিরে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে।’কথাগুলো বলতে বলতে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আসাদ চৌধুরী। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র সহ-সম্পাদক দীপংকর দীপক। 

ইটিভি অনলাইন : সৈয়দ হকের সঙ্গে আপনার প্রথম দেখা হওয়ার ঘটনাটা জানতেই চাই।

আসাদ চৌধুরী : প্রথম কবে দেখা হয়েছিল, তা সঠিকভাবে বলতে পারব না। অনেক দিন আগের কথা তো, তাই মনে করতে পারছি না। তবে বাংলাবাজারের বিউটি বোর্ডিং ও গুলিস্তানের লা সানিতে তাকে বেশ কয়েকবার দেখেছিলাম। প্রথমে সাহস করে কথা বলিনি। তবে ওই সময় তার বেশ ক’টি উপন্যাস আমার পড়া হয়ে গেছে। তার লেখা কয়েকটি নাটকও দেখেছি। কাব্যনাট্য রচনার ক্ষেত্রে তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের পর আর এমন করে কেউ কাব্যনাট্য লিখেছেন কি না, আমার জানা নেই।

ইটিভি অনলাইন : সাহিত্যিক হিসেবে সৈয়দ হককে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আসাদ চৌধুরী : হক সাহেব আমার কাছে এক বিস্ময়। তার ‘তাস’ আর ‘রক্তগোলাপ’ আমাকে বিমুগ্ধ করেছে। ছাত্রজীবনে তার গল্প বলার ঢং ও গদ্যশৈলী আমাকে কাবু করে ফেলেছিল। এর অনেক পরে বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে তথ্যচিত্রে তার সঙ্গে কণ্ঠদানের সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছিলাম।

ইটিভি অনলাইন : তার কোন গুণটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অভিভূত করেছে?

আসাদ চৌধুরী : তিনি বহুগুণের অধিকারী ছিলেন। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান- সব ক্ষেত্রেই পারদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন। চ্যানেল আইয়ের একটি অনুষ্ঠানে তিনি তার কবিতার খাতা থেকে একটি কবিতা শুনিয়েছিলেন। দেশের যে ক’জন কবির কবিতা আমার ভালো লাগত, তিনি তাদেরই একজন। রেডিও-টেলিভিশনে বা কবিতাপাঠের আসরে তার সঙ্গে কবিতা পড়া আমার একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা। ছন্দ নিয়ে, শব্দ নিয়ে, আঞ্চলিক শব্দকে মুক্তি দিতে তার ঈর্ষণীয় সাফল্য আমাকে বারবার বিস্মিত করেছে। অপর দিকে দেশ-সমাজ ও সময় সম্পর্কে তার গভীর ধারণা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আঞ্চলিক ক্রিয়াপদের চমৎকার ব্যবহার শুধু কাব্যনাট্যেই নয়; কোনো কোনো কবিতায় অত্যন্ত সচেতনভাবেই ব্যবহার করেছেন তিনি।

ইটিভি অনলাইন : ব্যক্তিত্বের দিক থেকে তাকে আপনার কেমন মানুষ মনে হয়েছে?

আসাদ চৌধুরী : সৈয়দ হক চমৎকার ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। আমার দৃষ্টিতে তিনি একটু বেশিই স্মার্ট ছিলেন। কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে এমন স্মার্ট ব্যক্তি আমার চোখে পড়েনি। স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন। দু’জনে প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই একসঙ্গে যেতেন। তাছাড়া তিনি লেখালেখিকে ধ্যান-জ্ঞান মনে করতেন। এটা আমার খুব ভালো লাগতো। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি কবিতা লিখে গেছেন। হাসপাতালে বসেই ২০০ কবিতা, ৪টি গল্প, ৪টি গান লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যে তার অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না।

ইটিভি অনলাইন : সৈয়দ হকের নাটক সব সময় আপনাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এর পেছনের কারণ কী?

আসাদ চৌধুরী : হক সাহেব যে একজন সুদক্ষ লেখক ছিলেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার লেখা ছিল জীবনমুখী। ব্রেখট-মলিয়রের পরেই আমি সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ ও ‘নূরলদীনের সারা জীবন’ নাটক দুটির কথা সবাইকে বলতাম। এই দুটি নাটক বাংলা সাহিত্যে ইতিহাস হয়ে থাকবে। সবমিলিয়ে বাংলা সাহিত্যে তিনি অমর হয়ে থাকবেন।

ইটিভি অনলাইন : সৈয়দ শামসুল হক অনুবাদেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাই।

আসাদ চৌধুরী : মৌলিক সাহিত্যের পাশাপাশি অনুবাদেও তিনি দক্ষ ছিলেন। বাংলাদেশে যে কজনের অনুবাদ আমি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে পাঠ করি, তিনি তাদেরই একজন। ভাবতে ভালো লাগে, ভাষার ব্যাপারে তার তেমন অ্যালার্জি ছিল না। হিন্দি, উর্দু ভাষায়ও তার ভালো দখল ছিল। শেক্সপিয়রের বেশ কয়েকটি নাটক তিনি অনুবাদ করেছেন। তার লেখা ম্যাকবেথ দেখে আমি অভিভূত হয়েছিলাম।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি