ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪

হাদীসের আলোকে আত্মশুদ্ধি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:২৩, ১৪ মার্চ ২০২৪

আত্মশুদ্ধি বলতে বোঝায় অন্তরকে পবিত্র করা। অর্থাৎ অন্তর থেকে সব ধরনের মন্দ স্বভাব দূর করে ভালো ও উত্তম গুণসমূহ দ্বারা অন্তরকে সজ্জিত করা। অন্তরের মন্দ স্বভাব হচ্ছে কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, অহঙ্কার, রিয়া-লোক দেখানো প্রবণতা, কৃপণতা, কুধারণা প্রভৃতি। অন্তরের উত্তম গুণ হচ্ছে ইখলাছ, সবুর, শোকর, আত্মসংযম, আল্লাহভীতি, আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল, আল্লাহর ভালোবাসা, বদান্যতা, নম্রতা, ভদ্রতা, সততা ইত্যাদি। 

হাদিস শরীফে আত্মশুদ্ধি ও সংযমের উপর অনেক হাদীস রয়েছে। একুশে টেলিভিশন আনলাইনের পাঠকদের জন্য কিছু হাদীস তুলে ধরা হলো...

একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে আত্মশুদ্ধি করা যায়? নবীজী (স) বললেন, তুমি সবসময় মনে রাখবে, তুমি যেখানেই থাকো না কেন আল্লাহ তোমার সাথে আছেন (তোমার সবকিছু দেখছেন)। 
- আবদুল্লাহ ইবনে মোয়াবিয়া (রা); তাবারানী

তোমার প্রবৃত্তিকে (খেয়ালখুশিকে) ধর্মের নিয়ন্ত্রণে না আনা পর্যন্ত তুমি বিশ্বাসী নও।
- আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা); মেশকাত

ঘন ঘন মৃত্যুর কথা মনে করো। তাহলে পার্থিব লোভ-লালসা ও আসক্তি কমতে থাকবে। জৈবিক কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।            আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী, নাসাঈ

আত্মনিয়ন্ত্রণ মানুষকে জান্নাতের পথে অগ্রবর্তী করে। প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার চেষ্টা মানুষকে সরাসরি জাহান্নামে ঠেলে দেয়।
—আবু হুরায়রা (রা); মেশকাত

আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন, তা থেকে যে দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে, সে চোখ কখনো জাহান্নামের আগুনে পুড়বে না।
—আবু রায়হানা (রা), মোয়াবিয়া ইবনে হায়দা (রা); সুনান আল কুবরা, নাসাঈ, তাবারানী

সতর্ক থেকো, তোমার সবচেয়ে বিপজ্জনক অঙ্গ হচ্ছে জিহ্বা।
—সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ (রা); তিরমিজী

অন্তর শুদ্ধ না হলে কেউ পরিপূর্ণ বিশ্বাসী হতে পারবে না। অন্তর শুদ্ধ হওয়ার জন্যে প্রয়োজন আগে তার জবান শুদ্ধ হওয়া ( অর্থাৎ সত্যভাষী হতে হবে)।
—আনাস ইবনে মালেক (রা); আহমদ, তারগিব

জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো। জিহ্বার কারণেই বহু মানুষকে জাহান্নামে উপুড় করে নিক্ষেপ করা হবে।
—মুয়াজ ইবনে জাবল (রা); তিরমিজী

যে নিজের জিহ্বাকে সংযত রাখে, নিজের বাড়িকেই পর্যাপ্ত মনে করে, আর নিজের পাপের জন্যে কাঁদে, সে-ই আশীর্বাদপ্রাপ্ত।
—সাওবান (রা); তাবারানী, তারগিব

যখন একজন মানুষ সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে, তখন তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ জিহ্বাকে সর্বান্তকরণে অনুরোধ করে, ‘আল্লাহ-সচেতন হও; আমরা তোমাকেই অনুসরণ করি। তুমি ঠিক থাকলে আমরা ঠিক থাকব আর তুমি ভুল করলে আমরাও ভুল করব।’
—আবু সাঈদ খুদরী (রা); তিরমিজী

জিহ্বা ও যৌনাঙ্গের অপব্যবহার জাহান্নামে প্রবেশের রাজপথ।
—আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী, আহমদ

তুমি যদি তোমার জিহ্বা ও যৌনাঙ্গের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দাও (অর্থাৎ মুখ ও যৌনাঙ্গের সকল অন্যায় থেকে বিরত থাকো), তবে আমি তোমাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
—সহল ইবনে সাদ (রা); বোখারী, মুসলিম

মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও জিহ্বা থেকে অন্যেরা নিরাপদ। আর মুহাজের (হিজরতকারী) সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে যে দূরে থাকে।
—আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা); বোখারী, মুসলিম

হঠাৎ করে বা ঘটনাচক্রে নিষিদ্ধ কিছুর প্রতি দৃষ্টি পড়ে গেলে তোমার কর্তব্য হচ্ছে—মুহূর্তে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়া।
—জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা); মুসলিম

কোনো পুরুষ কোনো নারীর গোপন অঙ্গের দিকে তাকাবে না। কোনো নারীও তাকাবে না অন্য নারীর গোপন অঙ্গের দিকে। দুজন পুরুষ একত্রে একই চাদরের নিচে জড়াজড়ি করে ঘুমাবে না। একইভাবে দুজন নারীও এক চাদরের নিচে জড়াজড়ি করে ঘুমাবে না। (কারণ এতে কুপ্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিতে পারে।)
—আবু সাঈদ খুদরী (রা); মুসলিম

বিপরীত লিঙ্গের দিকে বা তার কোনো অঙ্গের দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকানো বা যৌন উত্তেজক দৃশ্য দেখা চোখের ব্যভিচার। যৌন উত্তেজক বা অশ্লীল গালগল্প শোনা কানের ব্যভিচার। যৌন উত্তেজক কথাবার্তা বলা জিহ্বার ব্যভিচার। হাত দিয়ে উত্তেজক কিছু স্পর্শ করা হাতের ব্যভিচার। উত্তেজক কিছুর দিকে এগিয়ে যাওয়া পায়ের ব্যভিচার। মন কুভাবনার মাধ্যমে যৌন আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে আর যৌনাঙ্গ এই ক্রিয়া সম্পন্ন করে কিংবা মন সংযমী হয়ে তা প্রতিহত করে।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

এমএম//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি