ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

৩শ’ টাকায় ১৫ অসহায়ের ক্ষুধা নিবারণ!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:০৫, ১২ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ০০:০৬, ১২ এপ্রিল ২০২০

শেষ দিবসে আল্লাহ তার বান্দাদের জিজ্ঞাসা করবেন, আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম তুমি কী আমাকে খাইয়েছিলে? আমি অসুস্থ ছিলাম তুমি কী আমাকে সেবা করেছিলে? অর্থাৎ তুমি তোমার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষকে খাইয়েছিলে? সেবা করেছিলে? সেদিন যদি তুমি তাদের খাওয়াইতে-সেটা আমি আল্লাহ, আমাকেই খাওয়ানো হতো। আর তার জন্য তুমি আজ উত্তম প্রতিদান বা পুরস্কার পেতে। 

আবার বিখ্যাত শিল্পী ভুপেন হাজারিকা গেয়েছেন, মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। একটু সহানুভূতি কী মানুষ পেতে পারে না? ও  বন্ধু....মানবতার এ বানীগুলি আজ কঠিন বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। 

চারিদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের খাওয়ার কষ্ট দেখে অনেকেই সাধ্যমত সহায়তায় এগিয়ে আসছেন। দান ও  সহায়তার এ মহানুভবতা থেকে বাদ পড়ছেন না একজন সাধারণ শিক্ষকও। যেমন নিজের অর্থ টানাপড়েন থাকা স্বত্বেও মাহফুজ ইসলাম শামীম নামক সাধারণ একজন কলেজ শিক্ষক দেখিয়েছেন মানবতার এমন নজির। যা তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন অন্যকে উৎসাহিত করার জন্য। পাঠকের উদ্দেশ্যে তার লেখা হুবহু তলে ধরা হলো--

এত ছোট কাজ করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার জন্য বক্তব্যের শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। বাসার সামনে দিয়ে প্রতিদিন  প্রচুর মানুষ খাবার চেয়ে বেড়ায়। যারা খাবার চায় এরমধ্যে ১০ থেকে ১২ বছরের বাচ্চারাও আছে৷ নিজে খুব হীনমন্যতায় ভুগি। নিজেরা খাচ্ছি অথচ অন্যদের জন্য তেমন কিছুই করতে পারছি না। আমি কলেজ শিক্ষক তাই অর্থ সম্পদের প্রাচুর্য নেই। আবার দায়িত্ববোধের দহন আছে। 

হঠাৎ মাথায় আসল একটা ডিমের দাম ৭ টাকা।  তখনই ভাবলাম তাহলে একটা ডিম সাথে একটু চাল ও ডাল দিয়ে ভুনা খিচুড়ি করলে নিশ্চয়ই আরও ৮ থেকে ১০ টাকার বেশি খরচ পড়বে না। 

এই ভাবনা থেকে আমার সহধর্মিণীর সাথে আলাপে বসলাম। সে এই ব্যাপারগুলো অনেক ভালো বুঝে। এরপর নেমে গেলাম মিশনে। এক কেজি চাল ও আধা কেজি ডাল সঙ্গে কিছু গাজর, বরবটি, আলু , ও শসা দিয়ে মিশন শুরু হয়ে গেল। বাজার থেকে ওয়ানটাইম প্যাকেট আনলাম।  দেখলাম মোট ১৫ প্যাকেট হল। ১৫ টা ডিম সিদ্ধ করে ভেঁজে প্রতি প্যাকেটে একটা করে বসিয়ে দিলাম। ওয়ানটাইম প্যাকেট পড়ল দুই টাকা করে। সকল হিসাব করে দেখলাম এই ১৫ প্যাকেট তৈরি করতে আমার খরচ হয়েছে ৩০০ টাকা। অন্যকেউ করলে হয়ত খরচ একটু কমতে বা অল্প একটু বাড়তে পারে। 

এই ১৫ প্যাকেট খাবার প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না। কিন্তু এই মহামারীকালে ১৫ জন মানুষ এক বেলা খেতে পারবে। ১৫ টা শিশু বা ১৫ জন বৃদ্ধ একবেলা খেতে পারবে। খাবারটা হাতে পাওয়ার পর এঁদের চোখে যে একটা তৃপ্তির হাঁসি দেখা দেয় তা শুধু উপলব্ধি করা যায়। তাই যাদের অল্প কিছুটা হলেও  সামর্থ্য আছে তারা সপ্তাহে একবার হলেও এটা করে দেখতে পারেন।
 
জানি অনেকেই ভাবতে পারেন, ছোট কাজ করে প্রচার করছি, আমি খুবই ছোট লোক। আসলেই আমি খুবই সাধারণ মানুষ। ছোট লোক তো বটেই। আমি আপনার ভাবনায় বাধা দেব না। আপনি আপনার নিজ দায়িত্বে আমাকে নিয়ে ভেবে যান ভাল মন্দ যা খুশি। আমি  পোস্টটি দিয়েছি যারা আমার মত অর্থ সম্পদের প্রাচুর্য না থাকা সত্ত্বেও কিছু করার ইচ্ছা রাখেন, যাকে প্রবাদে বলে "গরীবের ঘোড়া রোগ " তাদের উদ্দেশ্যে। সাহস করে একদিন করেন, তাহলেই দেখবেন আয়াত্বে চলে এসেছে।  আরও কয়েকদিন করতে পারবেন।  গরীবের ঘোড়া রোগকে স্বাগত জানাই।
 
আমার এই পোস্টের মূলবক্তব্য হল "৩০০ টাকায় ১৫ প্যাকেট মডেল " ছড়িয়ে পড়ুক প্রত্যেক পাড়া মহল্লায়। যুব সমাজ সহজেই বাস্তবায়ন করতে পারবে এই প্রজেক্ট।  
আমার বর্তমান প্রজেক্ট আরও কিছু দিন চালিয়ে যাব। সমালোচনা বা গঠনমূলক পরামর্শ আশা করি তবে একটু সাধারণ ভদ্রতার সাথে। ধন্যবাদ।

আরকে/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি