ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনে চলছে যাত্রী পারাপার

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সন্দ্বীপের যাত্রীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:০৭, ২৪ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১৯:২১, ২৪ জুন ২০১৮

সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াতের প্রধানতম নৌ-রুট কুমিরা-গুপ্তছড়া দিয়ে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার মানুষ নদী পারাপার করে। যাত্রীসেবার লক্ষে গত ৬ জুন বিআইডব্লিউটিসি’র পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ৪০ বছরের বেশি সময়ের পুরনো এলসিটি কাজল। ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন নিয়ে প্রায় সাগরে বিকল হয়ে পরছে এই জাহাজ। 

শীতকালে স্পিডবোট, লালবোট ও মালবোট দিয়ে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষাকালে উত্তাল সাগর দিয়ে এসব নৌযানে যাতায়াত করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে।

গুপ্তছড়া-কুমিরা নৌ-রুটে জুনের আগে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতার বিলাসবহুল নতুন জাহাজ আসার কথা স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতাসহ বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে এতদিন জানানো হলেও খুব শীঘ্রই আসছে না নতুন জাহাজ। তাই ২০১৭ সালের শুরুতে কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌ-রুটে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃক যাত্রী পারাপারে চালু হওয়া এল সি টি কাজল জাহাজটিকেই ফের দেওয়া হয় এই রুটে।

২০১৭ সালে অল্প কয়েকদিন চলার পর ইঞ্জিন ত্রুটির কারণে মেরামত করতে নিয়ে যাওয়া হয় জাহাজটি। মেরামত শেষে বেশ কিছুদিন পর আবার যাত্রী পারাপারে আসে এল সি টি কাজল। কিছুদিন চলার পর আবার ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর সকালে ৩০৫ জন যাত্রী নিয়ে বিকল হয়ে যায় সাগরে।

সম্প্রতি জাহাজটি সমুদ্রে বিকল হয়ে পড়ায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। জাহাজে অবস্থান করা এক যাত্রী জানান, আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় প্রচণ্ড ঢেউয়ে টালমাটাল অবস্থা চলছিল জাহাজের। চারদিকে কান্নার রোল নেমে গেল। ছুটোছুটি করছিল যাত্রীরা। এ দিকে নোঙর না তোলায় সাগরে জেলেদের জালের সাথে আটকে যায় নোঙর। আর কোনভাবেই ছুটছে না জাহাজ। পরে জোয়ারের সাথে ভেসে ভেসে জাহাজটি প্রায় মিরসরাইয়ের কাছাকাছি চলে যায়। এর মধ্যে প্রায় ৮ ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ সেইদিন যাত্রীদের উদ্ধারে কোন তৎপরতা চালায়নি। আবার সাগরে ভাটা শুরু হলে বিকালে স্রোতের সাথে জাহাজটি ভেসে ভেসে বাড়বকুণ্ড কেওড়া বাগানে এসে আটকে গেলে সেখান থেকে লাল বোটের মাধ্যমে যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়। এরপর আবার মেরামতে নেওয়া হয় জাহাজটিকে। কয়দিন পর দেওয়া হয় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে। যাত্রার কিছুদিন পর ২৬০ জন পর্যটক নিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে সাগরে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায় জাহাজটির। আবার নেওয়া হয় মেরামতের জন্য। মেরামত শেষে দীর্ঘ ৯ মাস পর পুনরায় কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌ-রুটে দেওয়া হলো বারবার ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ এই জাহাজ।

ত্রুটিপূর্ণ এই জাহাজ বর্ষার বৈরী আবহাওয়ায় কেন দেওয়া হলো জানতে চাইলে বিআইবব্লিউটিসির ডিজিএম গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘জাহাজটি মেরামত করা হয়েছে। এরপর যাত্রীসেবায় দেওয়া হয়েছে। আর সরকারি জাহাজের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সরকারি জাহাজ পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই’। এলসিটি কাজল সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত জানতে বিআইডব্লিউটিসির বর্তমান কমিশন এজেন্ট নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী ‘দি বেঙ্গল ট্যুরিজমে’র স্বত্বাধিকারী সঞ্জয় কুমার রায়ের সঙ্গে বারবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বারবার যাত্রী নিয়ে সাগরে বিকল হয়ে যাওয়া এলসিটি কাজল বর্ষাকালে উত্তাল সাগরে কুমিরা-গুপ্তছড়ায় যাত্রী পারাপারের জন্য কতটুকু উপযোগী তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই নিরাপদ যাতায়াত নিয়ে বেশ সংশয়ে আছে সন্দ্বীপবাসী। ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন নিয়ে যদি এভাবে নিয়মিত চলতে থাকে তাহলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে পারে সন্দ্বীপবাসি। ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনা। যার খেসারত দিতে হবে সন্দ্বীপবাসীকে।

এমজে/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি