ঢাকা, সোমবার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

জাতীয় কর্মশালায় বিশেষজ্ঞদের অভিমত

অন্তর্ভূক্তিমূলক সুরক্ষার অভাবে বাড়ছে শিশুদের অনলাইন যৌন শোষণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৩৫, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ডিজিটাল প্লাটফর্মে অন্তর্ভূক্তিমূলক সুরক্ষার অভাবে অনলাইনে শিশুদের যৌন শোষণ বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, অনলাইন প্লাটফর্ম অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। যে কারণে শহর থেকে গ্রামে ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

একইসঙ্গে অনলাইনে যৌন হয়রানিসহ নানাধরণের ঝুঁকিও বাড়ছে। যা শিশুদের উপর সব থেকে বেশি প্রভাব ফেলছে। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় শিশুদের নিরাপদ অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহারে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও সহজলভ্য বিচার ব্যবস্থায় বিনিয়োগ জরুরি।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ে কর্মশালায় ‘বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশু এবং শিশুদের অনলাইন যৌন শোষণ প্রতিরোধ’ বিষয়ক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘টেরে দেস হোমস্ নেদারল্যান্ডস (টিডিএইচ-এনএল)’ আয়োজিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন টিডিএইচ-এনএল’র প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর নূরুল কবির। 

কর্মশালায় বক্তৃতা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান, ডিএমপির উপকমিশনার (নারী সহায়তা এবং তদন্ত) ফারহানা ইয়াসমিন, ব্লাইন্ড এডুকশেন এন্ড রিহ্যাবিলেটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুল হক, এক্সেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন মহুয়া পাল প্রমূখ।

কর্মশালায় গবেষণা তথ্য উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবিব। তিনি বলেন, অনলাইনে কোন শিশু নিরাপদ নয় বলে জরিপে উঠে এসেছে। এরমধ্যে ২৩ শতাংশ শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে, ৮ শতাংশ শিশু আংশিক ঝুঁকিতে এবং ৬৯ শতাংশ শিশু আংশিক নিরাপদ অবস্থায় আছে। এক্ষেত্রে ফেসবুক ব্যবহারে সর্বোচ্চ ৭৭ শতাংশ শিশু ঝুঁকিতে আছে। এছাড়া ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারে ১৫ শতাংশ ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে শিশুরা নিরাপদ নয়। 

তিনি আরও বলেন, কোনো একক উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। শিশুদেরকে সমস্যা সমাধানের অংশ হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কার্যকর কৌশল নির্ধারণে তাদের চিন্তাভাবনা, অভিজ্ঞতা ও সমবয়সীদের নেটওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সুরক্ষা বিষয়ক প্রচারণা, সচেতনতা বৃদ্ধির উপকরণ তৈরি এবং ডিজিটাল টুলসের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের রাখতে হবে।

গবেষণা ফলাফল তুলে ধরে টিডিএইচ-এনএল’র প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর নূরুল কবির। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুরা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চিত গোষ্ঠীগুলোর একটি। বিশ্বে যেখানে প্রায় ১৬ শতাংশ মানুষের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের সরকারি হিসাব মাত্র ২.৮ শতাংশ। এটি দীর্ঘদিনের অবমূল্যায়ন, সামাজিক কলঙ্ক ও অদৃশ্য থাকার সমস্যাকে তুলে ধরে। সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে জন্ম নেওয়া এসব মনোভাব প্রায়ই শিক্ষা, চলাচল এবং সমাজজীবনে সমান অংশগ্রহণের সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করে।

 শিশুদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো কঠিন। দেশে মাত্র প্রায় ৪০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত। এই বঞ্চনা তাদের অনলাইন জগতেও ছায়া ফেলে। কম ডিজিটাল দক্ষতা, ডিভাইসের সীমিত প্রাপ্যতা এবং প্রতিবন্ধী-বান্ধব নিরাপত্তা নীতিমালার অভাবে তারা অনলাইনে আরো ঝুঁকির মুখে পড়ে। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ডিজিটাল বিশ্ব বিনোদন, শিখন এবং সামাজিক যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে জানান তিনি।

গবেষণার সুপারিশ তুলে ধরে গবেষক ও প্রতিবন্ধী বিশেষজ্ঞ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে সুরক্ষার সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে। তাই দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারের ঘাটতিগুলো মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে। শিশু সুরক্ষা এবং অনলাইন সুরক্ষা সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালায় প্রতিবন্ধি শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

তিনি  আরও বলেন, প্রতিবন্ধীতা কর্মসূচি, ডিজিটাল সাক্ষরতা উদ্যোগ এবং শিশু সুরক্ষা কর্মীদের একসাথে কাজ করতে হবে। শিশুদের কণ্ঠস্বরকে প্রশস্ত করতে, কলঙ্ককে চ্যালেঞ্জ করতে এবং নীতি ও সম্প্রদায় স্তরে পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে।

মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, শিশুরা এখনো বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইন্টারনেটের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান ফাঁদে পড়ছে তারা। শিশুর সুস্থ্য বিকাশের স্বার্থে এগুলো বন্ধ করতে হবে। শিশুদের নিরাপদ ও সুস্থ্য ভবিষ্যতের জন্য কমিউনিটির অন্তর্ভূক্তি জরুরি। এ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। 

শিশুদের নিয়ে কর্মরত সরকারি বেসরকারি সংগঠনগুলোকে নিয়ে ‘ন্যাশনাল প্লাটফর্ম ফর চাইল্ড প্রটেকশন’ গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, টেরে ডেস হোমস্ নেদারল্যান্ডস ‘ভয়েস আইডেন্টিটি’ নামক একটি গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ অনলাইন যোগাযোগ থেকে অন্তর্ভূক্তিমূলক সুরক্ষায় এবং বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশু ও শিশুদের অনলাইন যৌন শোষণ বিষয়ক গবেষণা চলছে। ওই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ ও সুপারিশমালা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ওই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন সরকারী প্রতিনিধি, দেশি-বিদেশী বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, প্রতিবন্ধী শিশু, তাদের পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, কমিউনিটি ভিত্তিক গঠিত বিভিন্ন ফোরামের প্রতিনিধিবৃন্দ।

এমআর//
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি