ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫

অসহায়দের বাঁচাতে হাত বাড়িয়ে দিতে হবে: দালাই লামা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:০১, ২৭ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৪:৪৩, ২৭ এপ্রিল ২০২০

Ekushey Television Ltd.

তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা বলেন, আমার বন্ধুরা মাঝে মাঝে অনুরোধ করেন দুনিয়ার নানা সমস্যা যেন আমি ‘জাদুকরী শক্তি’ দিয়ে সমাধান করে দিই। কিন্তু আমি সবসময় তাদের বলি, আমার কোনো অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা নেই। যদি সে রকম কোনো ক্ষমতা থাকতো, তবে আমার পায়ে ব্যথা হতো না কিংবা ঠোঁটে ঘা হতো না। মনে রাখতে হবে, আমরা আর সবার মতো একই মানুষ। সেইসঙ্গে আমরা সবাই একই রকম ভয়, আশা, অনিশ্চয়তা অনুভব করি।

তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রেক্ষিত থেকে প্রত্যেক সংবেদী প্রাণী বেদনা, অসুস্থতা, প্রৌঢ়ত্ব এবং মৃত্যুকে বরণ করবে। কিন্তু আমরা মানুষ, আমাদের মনের ক্ষমতা ব্যবহার করে আমরা ক্রোধ, আতঙ্ক ও লোভকে পরাজিত করতে পারি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমি ‘আবেগের নিরস্ত্রীকরণ’কে উৎসাহিত করেছি; যেকোনো বিষয়কে ভয় কিংবা ক্রোধের অনুভূতি ছাড়া বাস্তব ও স্বচ্ছ দৃষ্টিতে বিবেচনা করতে চেয়েছি। সমস্যার কোনো সমাধান থাকলে আমাদের সেটা খুঁজে বের করতে হবে। আর সামাধান না থাকলে সেটা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করা যাবে না।

দালাই লামা বলেন, আমরা বৌদ্ধ ধর্মানুসারীরা বিশ্বাস করি, এ পুরো দুনিয়ায় সবাই একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে আমি প্রায়ই বৈশ্বিক বা সর্বজনীন দায়িত্বের কথা বলি। ভয়ানক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখিয়ে দিয়েছে একজনকে আক্রমণ করা কোনো কিছু কীভাবে দ্রুতই অন্য সবাইকে আক্রমণ করতে পারে। একই সঙ্গে এ সংকট আমাদের এটাও দেখিয়ে দিয়েছে করুণাময় কিংবা গঠনমূলক ছোট কাজও কীভাবে অন্যদের সাহায্যে আসতে পারে—সেটা হতে পারে হাসপাতালে কাজ করা কিংবা কেবল সামাজিক দূরত্বের নীতিটা মেনে চলা।

তিনি বলেন, উহানে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সংবাদটি শোনার পর থেকে আমি চীনে এবং অন্য সবখানে বসবাসরত আমার ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করছি। এখন আমরা দেখছি দুনিয়ায় কেউই এ ভাইরাসের হাত থেকে নিরাপদ নয়। আমরা সবাই আমাদের প্রিয়জনদের জন্য উদ্বিগ্ন। ভবিষ্যৎ, বিশ্ব অর্থনীতি এবং নিজের ঘরের অর্থনীতি নিয়েও আমরা চিন্তিত। কিন্তু প্রার্থনা এজন্য যথেষ্ট নয়।

তিনি মনে করেন, এ সংকট দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের ওপর যেখানে যে দায়িত্ব হাজির হোক না কেন তা পালন করতে হবে। দুনিয়াজুড়ে চিকিৎসক ও নার্সরা যে সাহসের সঙ্গে প্রায়োগিক বিজ্ঞান নিয়ে পরিস্থিতি বদলাতে কাজ করছেন, সেই সাহসকে আমাদের সবার ধারণ করতে হবে। এবং আমাদের ভবিষ্যেক এ রকম হুমকি থেকে রক্ষা করতে হবে।

এই চরম ত্রাসের সময় দূরবর্তী সময়ের ভাবনা মাথায় রেখে চিন্তা করাটা গুরুত্বপূর্ণ। দুনিয়ার ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাগুলো যাচাই করতে হবে। মহাশূন্য থেকে তোলা ছবিতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, আমাদের এই নীল গ্রহে কোনো সত্যিকার সীমান্ত নেই। তাই আমাদের সবাইকে এ গ্রহের যত্ন নিতে হবে; জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য ধ্বংসাত্মক শক্তিকে ঠেকাতে কাজ করতে হবে। এ মহামারী আমাদের সতর্ক করে দিয়েছে, এ রকম অভূতপূর্ব সংকট মোকাবেলা করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করা ছাড়া উপায় নেই।

আমাদের আরো মনে রাখতে হবে যে কেউই যন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকতে পারে না। যাদের ঘর নেই, অর্থ নেই, পরিবার নেই তাদের রক্ষা করতে আমাদের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এ সংকট দেখিয়ে দিয়েছে আমরা একে অন্যের কাছ থেকে আলাদা নই। তাই আমাদের সবাইকে করুণা আর সহায়তার হাত বাড়ানোর চর্চা করতে হবে।

একজন বৌদ্ধ হিসেবে আমি সবকিছুর অস্থায়িত্বে বিশ্বাস করি। একসময় এ ভাইরাসের সংকট কেটে যাবে। আমি আমার জীবনে যুদ্ধ এবং আরো অনেক ভয়ানক ঘটনা ঘটে যেতে দেখেছি। আমরা আমাদের বৈশ্বিক মানব সমাজকে পুনরায় গঠন করার সুযোগ পাব, যেমনটা আমার অতীতেও করেছি। আমি আশা করি সবাই নিরাপদে থাকবেন, শান্ত থাকবেন। এ অনিশ্চয়তার কালে আশা ও বিশ্বাস না হারানোটা জরুরি।

সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি