ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

চার বছরে কথা বলেন আইনস্টান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:০৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৫:৫৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

পৃথিবীর বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব’র জনক আইনস্টাইন নিয়ে রয়েছে নানামুখি ও রোমাঞ্চকর ঘটনা। জার্মানিতে জন্মগ্রহণকারী নোবেল জয়ী এ পদার্থ বিজ্ঞানী চার বছর পর্যন্ত নাকি কথা বলতে পারতেন না। তিনি প্রথম কথা বলেন খাবার টেবিলে। আর পড়তে শেখেন সাত বছর বয়সে। চার বছর পর্যন্ত যখন তিনি কথা বলছিলেন না, তখন তাঁর মা-বাবা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। একদিন হঠাৎ খাবার টেবিলে নির্বাক আইনস্টাইন বলে উঠলেন, ‘স্যুপটা খুবই গরম!’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এত দিন কেন কথা বলোনি?’ ‘এত দিন তো সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল’, আইনস্টাইন তাঁর জীবনের দ্বিতীয় বাক্যটি বললেন।

 ৯-১০ বছর বয়সেও তিনি কিছুটা থেমে থেমে কথা বলতেন। এতে পরিবারের লোকেরা যথেষ্ট চিন্তাগ্রস্ত হয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন হয়তো আলবার্ট বড় হয়ে জড়বুদ্ধিসম্পন্ন হবে। তা ছাড়া আলবার্ট ছিলেন খুব শান্তশিষ্ট লাজুক। অন্য সমবয়সীদের থেকে আলাদা। খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ তিনি বিশেষ পছন্দ করতেন না। 

আইনস্টাইনকে প্রথম স্কুলে পাঠানো হয় পাঁচ বছর বয়সে। কিন্তু স্কুলের ধরা-বাধা পড়াশোনা তার কখনোই ভালো লাগেনি। স্কুলের পড়াশোনায় খুব একটা ভালো ছিলেন না। একদিন আইনস্টাইনের বাবা তার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চান, ভবিষ্যতে তার ছেলেটির কোন পেশা বেছে নেওয়া উচিত? শিক্ষক জবাব দিয়েছিলেন, যে পেশাই হোক, তাতে কিছু আসে যায় না, কারণ কোনোটিতেই ও কিছু করতে পারবে না। সেই ছেলেই বড় হয়ে অসাধ্য সাধন করেন। বিজ্ঞান জগতে মহাবিপ্লব রচনা করেন। বিশ্ব ও জগৎ সম্পর্কে নিউটনের ধারণা যা প্রচারিত হয়ে আসছিল তা ভেঙে দেন। আবিষ্কার করেন ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’ বা ‘আপেক্ষিক তত্ত্ব’। তিনি বলেন, এই যে চোখের সামনে আমরা বস্তুর গতি ও শক্তি, ‘টাইম’ ও ‘স্পেস’ অর্থাৎ সময় এবং স্থানকে দেখছি, কোনোটাই ‘অ্যাবসলিউট’ বা অপরিবর্তনীয় নয়, অর্থাৎ কোনোটাই ধ্রুব নয়, সবই আপেক্ষিক। বিষয়টা তখনকার বিজ্ঞানীদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর। কারণ দৃশ্যমান জগতের দিকে সরাসরি আঙ্গুল তুলে আইনস্টাইন বলছেন, যা দেখছ তা সত্যি নয়। যা দেখছ না তাও সত্যি নয়। আবার কোনো কিছুই অসত্য নয়। খুব বিদঘুটে মনে হচ্ছে কি! তাই না?

শৈশবে স্কুলের ধরা-বাধা পড়াশুনা তার কখনোই ভালো লাগেনি। স্কুলের পড়াশুনায় খুব একটা ভালো ছিলেন না। ক্যাথলিক স্কুলের অতিরিক্ত কড়াকড়িও তার ভীষণ অপছন্দ ছিল। তাই শেষ বয়সে সেই অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে গিয়ে আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন, ‘প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের মনে হতো এক-একজন সার্জেন্ট, আর জিমনেশিয়ামের টিচাররা ছিলেন একেবারে মিলিটারী ল্যাফটেন্যান্ট।’ আসলে কোনো ব্যাপারে কর্তৃত্বের বাড়াবাড়ি তিনি একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না। অ্যালবার্ট বরাবরই স্বাধীনচেতা ছিলেন। এই গুণটি তিনি পান পারিবারিক সূত্রে। মাত্র চার বছর বয়সে মিউনিখের পথে ঘাটে অবাধ ঘুরে বেড়ানোর ছাড়পত্র পেয়েছিলেন মায়ের কাছ থেকেই। আবার ১৫ বছর বয়সে ব্যবসার খাতিরেই মিউনিখের পাট চুকিয়ে বাবা যখন ইতালিতে চলে গেলেন, তখন হাই স্কুলের পড়া শেষ করার জন্য তাকে রেখে যাওয়া হলো মিউনিখের এক হোস্টেলে। বাবা-মা’র ইচ্ছে ছিল ছেলে তাড়াতাড়ি স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক। এ বিষয়ে মা পলিনের ছিল কড়া নজর।

বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র বিজ্ঞানী তার আপেক্ষিকতার এ তত্ত্বটি বুঝতে পারেন। কেউ যদি এ আপেক্ষিকতার তত্ত্বটি পড়ে বলে, ‘বুঝেছি’ তাহলে নাকি বুঝতে হবে, সে কিছুই বুঝেনি। এক দিন এক তরুণ সাংবাদিক, বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে তার আপেক্ষিক তত্ত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে বললে, আইনস্টাইন কৌতুক করে বললেন- যখন একজন লোক কোন সুন্দরীর সঙ্গে এক ঘণ্টা গল্প করে, তখন তার কাছে মনে হয় যেন এক মিনিট পার হয়েছে। কিন্তু যখন তাকে কোনো গরম উনুনের পাশে এক মিনিট দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় তবে তার মনে হবে সে এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এটাই আপেক্ষিক তত্ত্ব...। 

কৈশোর থেকেই গণিতের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল আইনস্টাইনের। বীজগণিতে তার আগ্রহ জাগিয়ে তোলেন কাকা জ্যাকব। মজা করে তিনি বলতেন, ‘আমরা এমন একটি ছোট্ট জন্তু শিকারে বেরিয়েছি, যার নাম জানা নেই। তাই তার নাম দেওয়া হল ‘×’; এবার তাকে ধরো, তারপর ঠিক নামটি দিয়ে দাও।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা পারমাণবিক বোমায় মানবতার ব্যাপক বিপর্যয়। আলবার্ট আইনস্টাইনও দারুণ শোকাহত । তাঁর নিজের আবিষ্কারের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল এই বোমা । 

১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ জার্মানির এক মফস্বল শহরে ইহুদি পরিবারে আইনস্টাইন জন্ম নেন। বাবা হেরম্যান আইনস্টাইন ছিলেন ব্যবসায়ী এবং মা পলিন আইনস্টাইন গৃহিণী। আলবার্টের ছেলেবেলা  কেটেছিল মিউনিখেই। খুব ছোট থেকেই ভাবুক প্রকৃতির ছিলেন আইনস্টাইন। মারা যান ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল। তিনি ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার পুরস্কার লাভের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান এবং বিশেষত আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কিত গবেষণার জন্য। গ্যালিলিওর মৃত্যুর বছরেই জন্ম হয়েছিল আরেক মহারথি নিউটনের। গ্যালিলিওর মৃত্যুর ঠিক ৩০০ বছর পরে জন্ম নেন স্টিফেন হকিং। আর আইনস্টাইনের মৃত্যুর বছরে বিল গেটস আর স্টিভ জবসের। 

আইনস্টাইন ১৯৪০ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব পান। মাত্র ৪০ বছর বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়া মানুষটি এক সময় বিজ্ঞান মনীষী হিসেবে স্বীকৃত হন সারা বিশ্বে। বাকি জীবন তিনি এখানেই কাটান। ১৯৫৫ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার ৫০টিরও অধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে টাইম সাময়িকী আইনস্টাইনকে ‘শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি বিজ্ঞান ভাবনায় এতই মগ্ন থাকতেন যে, কথিত আছে, বাইরে বেরিয়ে কখনও কখনও বাড়ি ফেরার পথও হারিয়ে ফেলতেন তিনি। 

এমএস/এসি


 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি