ঢাকা, বুধবার   ০২ জুলাই ২০২৫

নুসরাত হত্যা

দেশের ইতিহাসে মামলা নিষ্পত্তিতে অনন্য নজির!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৬, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

প্রকাশিত হলো বহুল আলোচিত নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায়। মাত্র ৬১ কার্যদিবসে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সবার ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। যা দেশের বিচার ব্যবস্থায় দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো। কেননা, এর আগে এতো কম সময়ে কোনো মামলার রায় প্রদান করা হয়নি। এমনকি, দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালেও তা সম্ভব হয়নি। 

চলতি বছরের ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তার সহপাঠীরা।

পৃথিবীর ইতিহাসে সহপাঠীদের দ্বারা নৃশংস এমন হত্যাকাণ্ড এটাই হয়তো প্রথম। এর চারদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর কাছে হেরে যান নুসরাত। এ ঘটনা পুরো দেশকে কাঁপিয়ে তোলে। নিন্দার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এমন কি এ হত্যাকাণ্ড শিরোনাম হয় বিশ্ব গণমাধ্যমেও। বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে গোটা দেশ।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ১১টার দিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন। এদিন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের মধ্যদিয়ে সকাল ৯টার দিকে ১৬ আসামিকে আদালতে নেয়া হয়। সব আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মাত্র ছয় মাসে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২৪ অক্টোবর (আজ) রায়ের দিন ধার্য করেন একই বিচারক।

চলতি বছরের ১০ জুন মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আসামিদরে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। সেদিন থেকে মাত্র ৬১ কার্যদিবস চলে মামলার কার্যক্রম। সংক্ষিপ্ত এ সময়ে ৮৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ, আসামী পক্ষ এবং রাষ্ট্র ও বাদী পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়।

এতো কম সময়ে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য হওয়ার পর থেকেই নতুন করে শুরু হয় আলোচনা। কাঙ্খিত রায় ঘোষণা হওয়ায় নুসরাতের পরিবার, আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মাঝে বইছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। সবার দাবি এ রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবালিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকে হাফেজ আহাম্মদ বলেন, ‘নুসরাতের রায়ের দিকে গোটা দেশের মানুষ তাকিয়ে ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছে। তাই, প্রত্যেক আসামির সর্বোচ্চ সাজা হবে বলে আমাদের আশা ছিল। আদালতের রায়ে তাই হয়েছে।’

আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আইনজীবীরা বলছেন, মাত্র ৬১ দিনে ৮৭ আসামীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক গ্রহণ শেষ হয়। দেশের ইতিহাসে এমনটা আগে কখনো হয়নি। এত অল্প সময়ের মধ্যে এমন চাঞ্চল্যকর মামলার নিষ্পত্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।’

তারা বলেন, নুসরাত হত্যা মামমলার রায়টি বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এর আগে কোনো দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালেও এত দ্রুত সময়ে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার নজির নেই। প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশনার কারণেই দ্রুত এ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে বলেও জানান তারা।

চাঞ্চল্যকর এ মামলা গত ১০ এপ্রিল পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এ হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৯ জুন পিবিআই ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। আদালত ২৭ জুন হতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২৪ অক্টোবর রায়ের দিন ধার্য করেন।

এদিকে, আলোচিত এই রায়কে ঘিরে জেলা শহর, আদালত এলাকা ও সোনাগাজী উপজেলায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। রায়কে ঘিরে যেকোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে বুধবার রাত থেকে নুসরাতদের বাড়িতে পাহারা জোরদার করা হয়েছে। প্রহরায় নিয়োজিত আগের তিনজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে আরও ৯ সদস্যকে যুক্ত করা হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত লোকজনও রেজিস্ট্রার খাতায় সই না করে ওই বাড়িতে ঢোকার অনুমতি পাচ্ছেন না। গত ৭ এপ্রিল থেকে বাড়িটিতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে জেলা সদর ও সোনাগাজীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে। এছাড়া র‌্যাব সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও টহল দিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন।

২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজেল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে তার মা।

২৮ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট এএসএম এমরানের আদালতে নুসরাত তার উপর যৌন নিপীড়নের জবানবন্দি প্রদান করে। একই দিন সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শাহজাহান সাজু জানান, মামলা তুলে না নেয়ায় তাকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে গেছে।
আই/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি